আগস্টেই করোনাভাইরাসের টিকা বাজারে ছাড়তে চায় ভারত!
টাইম সিলেট ডট কম
প্রকাশিত হয়েছে : ৬:২৯:০০,অপরাহ্ন ০৫ জুলাই ২০২০ | সংবাদটি ৪৮৩ বার পঠিতএ্দিকে, এত অল্প সময়ের মধ্যে একটি ভাইরাসের টিকা তৈরি করার প্রচেষ্টা ঝুঁকিপূর্ণও হতে পারে বলে মনে করছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা
ভারতের শীর্ষ চিকিৎসা গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিকেল রিসার্চ (আইসিএমআর) আগস্টের মধ্যে করোনাভাইরাসের টিকা বাজারে ছাড়ার বিষয়ে বিবেচনা করছ এ ধরনের খবর প্রকাশিত হওয়ায় আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে বিবিসি।
সংবাদ সংস্থা রয়টার্সের বরাত দিয়ে ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, করোনাভাইরাসের টিকার ট্রায়ালের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর উদ্দেশে আইসিএমআর’এর মহাসচিব বলরাম ভার্গবের লেখা একটি চিঠি প্রকাশের পর থেকে এ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা তৈরি হয়।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিকেল রিসার্চের সঙ্গে যুক্ত হয়ে করোনাভাইরাসের টিকা তৈরির চেষ্টা করছে হায়দ্রাবাদভিত্তিক বায়ো-থেরাপিউটিকস নির্মাতা প্রতিষ্ঠান “ভারত বায়োটেক”, যারা এ সপ্তাহে টিকার প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের অনুমোদন পেয়েছে।
২ জুলাই টিকার ট্রায়ালের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ভারতীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে উদ্দেশ্য করে লেখা চিঠিতে বলরাম ভার্গব উল্লেখ করেন, “সবধরনের ক্লিনিকাল ট্রায়াল সম্পন্ন হওয়ার পর জনস্বাস্থ্যে ব্যবহারের জন্য আগামী ১৫ আগস্টের মধ্যে এই টিকা প্রস্তুত করার বিষয়ে বিবেচনা করা হচ্ছে।”
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কোনো একটি টিকার ট্রায়ালের প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপ সাধারণত টিকার নিরাপত্তার মাত্রা পরীক্ষা করে। আর তৃতীয় ধাপে পরীক্ষা করা হয় টিকার কার্যকারিতা। এই প্রক্রিয়ার প্রতিটি ধাপ সম্পন্ন হতে কয়েক মাস, এমনকি অনেক সময় কয়েক বছরও লেগে যায়।
এত অল্প সময়ের মধ্যে একটি ভাইরাসের টিকা তৈরি করার প্রচেষ্টা শুধু অভূতপূর্বই নয়, ঝুঁকিপূর্ণও হতে পারে বলে মনে করছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
মহারাষ্ট্র রাজ্যের করোনা টাস্ক ফোর্সের সদস্য ড. শশাঙ্ক জোশি বিবিসি হিন্দিকে বলেন, “এত অল্প সময়ে একটি টিকা তৈরি করা প্রায় অসম্ভব। টিকা তৈরি করতে সাধারণত দুই বছর সময় লাগে। আপনি যদি ফাস্ট ট্র্যাক পদ্ধতিতেও তৈরি করতে চান, তবুও ১২ থেকে ১৮ মাস সময় লাগবে। এর আগে টিকা তৈরি করা অসম্ভব।”
তিনি আরও বলেন, “টিকা তৈরির সময় মানুষের নিরাপত্তা ও টিকার সম্ভাবনা নিয়ে বিস্তারিত গবেষণা করতে হয়। যদি আইসিএমআর প্রয়োজনীয় সব নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করে ও নিয়ম মেনে এই প্রক্রিয়া চালায়, তাহলে তাদের সাধুবাদ জানানো উচিত।”
ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অব বায়োএথিক্সের সাবেক প্রেসিডেন্ট ড. অনন্ত ভানও আইসিএমআর’এর সিদ্ধান্তে বিস্ময় প্রকাশ করেন। রয়টার্সের খবর অনুযায়ী, টুইটার পোস্টে ড. ভান লেখেন, “আমার জানা মতে, কখনো কোনো ধরনের ভ্যাক্সিন তৈরির প্রক্রিয়া এত দ্রুতগতিতে সম্পন্ন করার চেষ্টা হয়নি।”
আইসিএমআর মহাসচিবের চিঠিটি ফাঁস হলে সোশ্যাল মিডিয়ায় তা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা সৃষ্টি হয়। সংবাদ সংস্থা রয়টার্স ঐ চিঠি সম্পর্কে জানতে আইসিএমআরের মুখপাত্রের সাথে যোগাযোগ করলেও কোনো উত্তর পাননি।
তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে আইসিএমআর’এর একজন কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেন যে ঐ চিঠিটি ব্যক্তিগতভাবে যোগাযোগ করার উদ্দেশ্যে লেখা হয়েছিল এবং সেটির ভুল ব্যাখ্যা করা হয়েছে। ঐ কর্মকর্তা বলেন, চিঠিতে আগস্টের ১৫ তারিখের মধ্যে টিকার সব ধরনের ট্রায়াল সম্পন্ন করার কথা বলা হয়েছিল, ঐ সময়ের মধ্যে জনসাধারণের ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত করার কথা বলা হয়নি।
টিকা নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ভারত বায়োটেকের মুখপাত্রও চিঠিটি সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করেননি। তবে ভারত বায়োটেকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কৃষ্ণ এলা রয়টার্সকে জানিয়েছেন ক্লিনিকাল ট্রায়াল সফল হলে বছরে ৩০ কোটি টিকা উৎপাদনের লক্ষ্য আছে তাদের।
শুক্রবার ভারতীয় ওষুধ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান যাইডাস ক্যাডিলা জানিয়েছে তারা তাদের তৈরি কোভিড-১৯ এর ভ্যাক্সিনের হিউম্যান ট্রায়াল বা মানুষের ওপর পরীক্ষার অনুমোদন পেয়েছে।