বালাগঞ্জের ইসলামিয়া আলিম মাদরাসা সুপার, সহ-সুপার নিয়োগে জালিয়াতির অভিযোগ!
টাইম সিলেট ডট কম
প্রকাশিত হয়েছে : ৯:৩৭:০৬,অপরাহ্ন ১০ আগস্ট ২০২০ | সংবাদটি ৪৩৯ বার পঠিতআবুল কাশেম অফিক:
দেশের বাইরে থাকা ম্যানেজিং কমিটির সভাপতিকে সভায় উপস্থিত দেখিয়ে জাল সীল-স্বাক্ষর ব্যবহার
বালাগঞ্জ উপজেলার পূর্ব গৌরীপুর মুসলিমাবাদ ইসলামিয়া আলিম মাদরাসায় সুপার ও সহ-সুপার নিয়োগে একাধিক অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সুপার নিয়োগের সময় মাদরাসার এক শিক্ষক কর্তৃক উৎকোচ গ্রহণ, মাদরাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি আমেরিকায় থাকা সত্ত্বেও তার স্বাক্ষর ও সীল জাল করে সুপার নিয়োগের প্রক্রিয়া সম্পাদন করা, অবয়ব সভাপতি আমেরিকা থাকা সত্ত্বেও তার স্বাক্ষর ও সীল ব্যবহার করে পরিচালনা কমিটির সভায় উপস্থিত দেখানো সহ অনুসন্ধানে আরও বেশ কয়েকটি অভিযোগের প্রমান পাওয়া গেছে।
এসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে স্থানীয় একাধিক জনসাধারণ স্বাক্ষরিত একটি অভিযোগপত্র বালাগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর দাখিল করা হয়েছে।
জানা যায়, গত বছরের ২৮ সেপ্টেম্বর সহ-সুপার পদে মুসলিমাবাদ ইসলামিয়া আলিম মাদরাসায় মাও. আব্দুস সোবহানকে নিয়োগ প্রদান করা হয় এবং ২৯ সেপ্টেম্বর তড়িগড়ি করে খাতাপত্রে যোগদান দেখানো হয়। গত ১৩ মার্চ সুপার হিসেবে মাও. আব্দুল মুমিতকে নিয়োগ দেয়া হয় এবং ১৬ মে তারিখে কাগজপত্রে তাকে যোগদান দেখানো হয়েছে।
এ দুই নিয়োগ কার্যক্রম চলাকালীন সময়েই মাদরাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি মির্জা হেলাল উদ্দিন আমেরিকায় ছিলেন। বর্তমানেও তিনি আমেরিকায় আছেন। অথচ সভাপতি আমেরিকায় থাকা সত্ত্বেও নিয়োগ কার্যক্রমের সম্পূর্ণ প্রক্রিয়ায় সভাপতির সীল ও জাল স্বাক্ষর ব্যবহার করে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছে।
তবে, মাদরাসার সহ-সুপার মাও. আব্দুস সোবহানের ভাষ্য “সুপার নিয়োগের সময় সভাপতি সাহেবের সীল-স্বাক্ষর আমরা জাল করিনি। কাগজগুলো আমেরিকায় পাঠিয়ে উনার সীল-স্বাক্ষর নেয়া হয়েছে”।
বিগত ১৬ মে তারিখে মাদারাসা পরিচালনা কমিটির এক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভার রেজুলেশন খাতায় বলা হয়েছে, “মির্জা হেলাল উদ্দিন সাহেবের সভাপতিত্বে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়”। ব্যবহার করা হয়েছে সভাপতির সীল-স্বাক্ষরও।
অথচ চমকপ্রদ ব্যাপার- সভাপতি সভায় উপস্থিত থাকা তো দূরের কথা, তখন তিনি দেশেই ছিলেন না।
৬ জুন অনুষ্ঠিত অনুরুপ আরেকটি সভার রেজুলেশনের কপিও এ প্রতিবেদকের হাতে এসে পৌঁছেছে। এই সভায়ও সভাপতি আমেরিকায় থাকা সত্ত্বেও রেজুলেশনের কপিতে বলা হয়েছে “নির্বাহী কমিটির এই সভায় সভাপতিত্ব করেন মাদরাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি জনাব মির্জা হেলাল উদ্দিন”। কিন্তু তখনও সভাপতি মির্জা হেলাল উদ্দিন আমেরিকায় ছিলেন। এই সভায়ও আগের সভার মতো রেজুলেশন খাতায় সভাপতির সীল-স্বাক্ষর জাল করা হয়েছে।
মুসলিমাবাদ ইসলামিয়া আলিম মাদরাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি আমেরিকা যাওয়ার পর ভারপ্রাপ্ত হিসেবে শেখ মাহমদ হোসেনকে মৌখিকভাবে মনোনীত করা হয়। নিয়মানুযায়ী, যেহেতু সভাপতি দেশের বাইরে সেহেতু ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সভাপতির অনুপস্থিতিতে সব কাজ সম্পন্ন করবেন। কিন্তু শেখ মাহমদ হোসেন নামমাত্র ভারপ্রাপ্ত সভাপতি থাকলেও সব কাগজ-পত্রে সীল-স্বাক্ষর দেখানো হয়েছে আমেরিকায় থাকা মির্জা হেলাল উদ্দিনের।
এভাবেই কোনো রকমের নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করেই মাদরাসার সহ-সুপার মাও. আব্দুস সোবহান নিজের মতো করেই সভাপতি আমেরিকা থাকা সত্ত্বেও ব্যবহার করছেন তার সীল, জাল করছেন সভাপতি মির্জা হেলাল উদ্দিনের স্বাক্ষরও।
এছাড়াও মাদরাসার সুপার নিয়োগ পরীক্ষার সময় চাকুরী পাইয়ে দেয়ার কথা বলে বদরুল আলম নামের একজন প্রার্থীর কাছ থেকে ৫ হাজার টাকা বিকাশের মাধ্যমে উৎকোচ হিসেবে গ্রহণ করেন এই মাদরাসার জুনিয়র শিক্ষক সাইফুল ইসলাম। এর সকল তথ্য প্রমাণ এ প্রতিবেদকের হাতে এসে পৌঁছেছে।
জানতে চাইলে মৌখিক ভাবে মনোনীত ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শেখ মাহমদ হোসেন বলেন, সহ-সুপার নিয়োগের সময় সভাপতি সাহেব দেশে ছিলেন। উনি আমেরিকায় যাওয়ার পর তার অনুপস্থিতিতেই আমি সব কাজ করছি। তবে, কাগজপত্রে আমেরিকায় থাকা সভাপতির সীল-স্বাক্ষরের বিষয়টি তিনি স্বীকার করেছেন।
মাদরাসার প্রাক্তন সুপার ও তৎকালীন সহ-সুপার নিয়োগ কমিটির সদস্য সচিব মাও. আইয়ুব আলী বলেন, সহ-সুপার নিয়োগের সময় সভাপতি সাহেব আমেরিকায় ছিলেন।
মাদরাসা পরিচালনা কমিটির সদস্য বশর তালুকদারও সহ-সুপার নিয়োগের সময় সভাপতি আমেরিকায় ছিলেন বলে জানান।
এ বিষয়ে মাদরাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি মির্জা হেলাল উদ্দিনের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তা সম্ভব হয়নি।
এ ব্যাপারে বালাগঞ্জ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. নজরুল ইসলাম বলেন, সভাপতি আমেরিকায় থাকায় তার স্থলে একজনকে ভারপ্রাপ্ত দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
ভারপ্রাপ্ত সভাপতি থাকা সত্ত্বেও কেন সভাপতির সীল-স্বাক্ষর ব্যবহার করা হচ্ছে?”, উত্তরে তিনি বলেন, এ বিষয়টি আমার জানা নেই।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর স্থানীয় লোকজন স্বাক্ষরিত অভিযোগপত্র দাখিলের বিষয়েও তিনি বলেন, এ বিষয়টি আমার জানা নেই।
বালাগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দেবাংশু কুমার সিংহ বলেন, এরকম একটি অভিযোগপত্র আমি পেয়েছি। শীগগিরই এ ব্যাপারে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।