১৬৪ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উৎপাদন করতে চায় সিলেট গ্যাস ফিল্ড

টাইম সিলেট ডট কম
প্রকাশিত হয়েছে : ১:৪২:২৩,অপরাহ্ন ১৩ ডিসেম্বর ২০২২ | সংবাদটি ১১৯ বার পঠিতদেশের চলমান গ্যাস সংকট কাটাতে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে গতি বাড়িয়েছে সিলেট গ্যাস ফিল্ড লি. (এসজিএফএল)। ইতিমধ্যে মাত্র দুইমাসে বেশ সাফল্য পাওয়া গেছে। ১০ই সেপ্টেম্বর ওয়ার্কওভার শুরু করা বিয়ানীবাজার-২ গ্যাসকূপ থেকে গত ২৮শে নভেম্বর থেকে ৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন করা হচ্ছে। ওই কূপ থেকে উত্তোলিত গ্যাস জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা হয়েছে। এসজিএফএল’র কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ২০২৫ সালের মধ্যে ১৬৪ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উৎপাদনের চেষ্টা চলছে। সেজন্য নতুন ৬টি নতুন কূপ খনন ও ৮টি পুনঃখননের (ওয়ার্কওভার) উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে বিয়ানীবাজার-২ গ্যাসকূপ এরইমধ্যে উৎপাদনে গেছে। এর পাশাপাশি সিলেট ও মৌলভীবাজারের একাংশে নতুন করে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে থ্রিডি জরিপ কাজও চলছে। সিলেট অঞ্চল হচ্ছে গ্যাসের ভাণ্ডার। আইনি জটিলতায় আটকে থাকা টেংরাটিলা গ্যাস ক্ষেত্রে রয়েছে অফুরন্ত গ্যাস।
২০০৫ সালে নাইকোর অধীনে থাকা অবস্থায় দুইবারের অগ্নি দুর্ঘটনার পর এই গ্যাস ক্ষেত্র অনেকদিন ঝুলে আছে। আইনের কারণে ছাতক-১ ও ছাতক-২ নামের ওই দুই গ্যাস ক্ষেত্রে যেতে পারছে না নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিলেট গ্যাস ফিল্ড লি.। তবে, সিলেট অঞ্চলের অপর ৩ জেলায় গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলন অব্যাহত রয়েছে। বর্তমানে এসজিএফএল’র আওতায় ৫টি গ্যাসক্ষেত্র আছে। সেগুলো হলো- হরিপুর গ্যাস ফিল্ড, রশিদপুর গ্যাস ফিল্ড, ছাতক গ্যাস ফিল্ড, কৈলাশটিলা গ্যাস ফিল্ড ও বিয়ানীবাজার গ্যাস ফিল্ড। এর মধ্যে ছাতক ছাড়া ৪টি গ্যাস ক্ষেত্রের ১৩টি কূপ থেকে বর্তমানে প্রতিদিন ৯৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন করা হচ্ছে। এবং এসব গ্যাস জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা হচ্ছে। একইসঙ্গে তেলও উত্তোলন করা হচ্ছে। সিলেট গ্যাস ফিল্ডের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সিলেট অঞ্চলে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে চলতি বছরে নতুন করে উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। আর এই উদ্যোগের অন্যতম কারণ হচ্ছে- দেশের চলমান সংকট দূর করা। খনিজ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয় ও পেট্রোবাংলার বর্তমান দায়িত্বরত কর্মকর্তারা এতে বেশি আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। বিশেষ করে পরিত্যক্ত থাকা গ্যাসকূপ সচল করতে দ্রুত উদ্যোগ নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আর এই নির্দেশনা পেয়ে নড়েচড়ে বসে সিলেট গ্যাস ফিল্ড লি.। চলতি বছরেই এই উদ্যোগ নেয়া হয় এবং ইতিমধ্যে সফলতাও আসে। এসজিএফএল জানায়, জ্বালানি সংকট নিরসনে গ্যাসের উত্তোলন বাড়াতে ২০২৫ সালের মধ্যে দেশে মোট ৪৬টি গ্যাসকূপ অনুসন্ধান, খনন ও পুনঃখননের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে সরকার। পরিকল্পনা অনুযায়ী, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রোডাকশন (বাপেক্স) ২০টি, বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ড কোম্পানি ১২টি এবং সিলেট গ্যাস ফিল্ড কোম্পানি ১৪টি কূপ খনন ও পুনঃখননের জন্য চিহ্নিত করেছে। এর অংশ হিসেবে এসজিএফএল’র আওতায় সিলেটে ৮টি কূপ পুনঃখনন ও ৬টি কূপ খননের কাজ শুরু হয়েছে। চলতি বছরে সিলেট-৮, কৈলাশ টিলা-৭ ও বিয়ানীবাজার-১ নামে ৩টি পরিত্যক্ত কূপ পুনঃখনন করে দৈনিক ১৬ থেকে ১৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় সঞ্চালন লাইনে সরবরাহ করা হচ্ছে। এখন কৈলাটিলা-২, সিলেট-৭ ও রশিদপুরের দু’টি কূপের পুনঃখনন কাজ চলছে।
এর বাইরে সিলেটের হরিপুর ১০ ও কৈলাশটিলা ৮নং কূপটি নতুন করে খনন করা হচ্ছে। আগামী বছর অর্থাৎ ২০২৩ সালের মধ্যে এই কূপগুলো উৎপাদনে যেতে পারে। এতে করে সিলেট থেকে বিপুল পরিমাণ গ্যাস জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা সম্ভব হবে। আগামী ২০২৮ সালে রশিদপুর-৩, রশিদপুর-৭ ও বিয়ানীবাজার-২ কূপ পুনঃখননের উদ্যোগ নেয়া হবে। এর বাইরে রশিদপুর-১১, রশিদপুর-১২, কৈলাশটিলা-৯ ও বিয়ানীবাজারের ডুপিটিলায় নতুন করে কূপ খনন শুরু করা হবে। সিলেট গ্যাস ফিল্ডস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. মিজানুর রহমান বলেন, ১৪টি কূপে কাজ সম্পন্নের লক্ষ্যমাত্রা ২০২৫ সাল হলেও ২০২২ সালে ৩টি কূপের পুনঃখনন শেষ করে গ্যাস উত্তোলন চলছে। ২০২৩ সালে বেশির ভাগ কূপের কাজ সম্পন্ন করে গ্যাস উৎপাদনে যাবে। তিনি বলেন, নতুন ৩টি মিলিয়ে বর্তমানে এসজিএফএল’র ১৩টি কূপ গ্যাস উৎপাদনে রয়েছে। এগুলো থেকে দৈনিক ৯৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন করা হচ্ছে। চলমান কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হলে ২০২৫ সালে দৈনিক ১৬৪ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উৎপাদন করা হবে। গ্যাস ফিল্ডের এমডি জানান, ১৪টি কূপ খনন ও পুনঃখননের বাইরে নতুন গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনায় সিলেটের বিয়ানীবাজার এলাকা ও আশপাশের ১ হাজার ৫৬ বর্গকিলোমিটার এলাকায় নতুন গ্যাসের সন্ধানে ত্রিমাত্রিক জরিপ চলছে। এর মধ্যে বিয়ানীবাজারের ১৯১ বর্গকিলোমিটার এলাকার একটি অংশ এবং উপজেলার বারশিয়া, ডুপিটিলা, হারারগঞ্জ ও দক্ষিণ সিলেট এলাকায় ৮৬৫ বর্গকিলোমিটারে ত্রিমাত্রিক জরিপ চালানো হচ্ছে। ৭ থেকে ৮ মাস পর এ জরিপের ফলাফল জানা যাবে। জরিপের মাধ্যমে নতুন সুখবর আসতে পারে বলে জানান তিনি।