সিলেট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে পদোন্নতিতে অনিয়ম, তোলপাড়

টাইম সিলেট ডট কম
প্রকাশিত হয়েছে : ১২:৩৭:৫৫,অপরাহ্ন ০৭ মার্চ ২০২৩ | সংবাদটি ৭৬ বার পঠিতপদোন্নতিতে অনিয়ম নিয়ে তোলপাড় চলছে সিলেট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে। এ ঘটনায় বিব্রত কর্মকর্তারাও। নিয়মের তোয়াক্কা না করেই এসব পদোন্নতি দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এতে অনেক যোগ্যরা পদোন্নতি পাননি। এতে দুর্নীতিরও অভিযোগ করেছেন কেউ কেউ। কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা জানিয়েছেন, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের নিয়োগ ও পদোন্নতি বিধিমালা এবং অফিস আদেশ উপেক্ষা করে গত ১৬ই জানুয়ারি অতিরিক্ত পরিচালকের কার্যালয়, সিলেট অঞ্চল থেকে দুটি পদে পদোন্নতি দেয়া হয়। পদোন্নতির আদেশ জারি করার চিঠি কয়েক ধাপে বিতরণ করা হয়। এর মধ্যে ব্লক পোস্ট অর্থাৎ যারা ঝাড়–দার সুইপার পদে প্রথম যোগদান করেছিল তাদের তথ্য গোপন রাখা হয়। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সিলেট অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক মোহাম্মদ মোশাররফ হোসেন খান স্বাক্ষরিত এ পদোন্নতির অফিস আদেশে ১১ জনকে অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক পদ হতে উচ্চমান সহকারী কাম হিসাব রক্ষক হিসেবে পদোন্নতি দেয়া হয়েছে। পদোন্নতিপ্রাপ্তরা হলেন- আব্দুল করিম, বিজিত কুমার সেন, রেবা রানী দে, রঞ্জুলাল শর্মা, রাম গোপাল দাস, কাজী নাজমুল হুদা, মো. জাহাঙ্গীর আলম, সাবিত্রী রানী দে, দীপেশ চন্দ্র দাস, মাহবুব রশিদ ও জয়ন্ত দেবনাথ।
এ ছাড়া একইদিনে এ স্পেয়ার মেকানিক পদ হতে সহকারী মেকানিক পদে মো. নূর নবী ও মোহাম্মদ আবুল হাসানকে পদোন্নতি প্রদান করা হয়। এই দুটো পদোন্নতির অফিস আদেশ আঞ্চলিক কার্যালয়ের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে। দুটি অফিস আদেশ ছাড়াও গোপনে একই তারিখে ৩ জন অফিস সহকারী মো. জাহাঙ্গীর আলম, মো. আব্দুর রাজ্জাক এবং মো. হেলালুজ্জামানকে উচ্চমান সহকারী কাম হিসাব রক্ষক পদে পদোন্নতি দেয়া হয়। এ ছাড়া স্পেয়ার মেকানিক আব্দুল গফুর ফরাজী ও মো. ছাইফুদ্দিনকে সহকারী মেকানিক, জেনারেটর অপারেটর পদে পদোন্নতি দেয়া হয়। এর আগে গত বছরের ১৬ই অক্টোবর অফিস সহকারী কাম মুদ্রাক্ষরিক পদ হতে উচ্চমান সহকারী কাম কম্পিউটার মদ্রাক্ষরিক পদে পদোন্নতির জ্যেষ্ঠতা তালিকা প্রকাশ করা হয়।
এতে দেখা যায় ব্লকপোস্টের ৫ জন এবং বিভাগীয় দ-প্রাপ্ত একজনকে তালিকায় রাখা হয়েছে। জ্যেষ্ঠতা তালিকা অনুযায়ী পদোন্নতি পাওয়া মো. জাহাঙ্গীর আলম ১৯৯৪ সালের ৮ই নভেম্বর ঝাড়ুদার পদে, মো. হেলালুজ্জামান ২০০৬ সালের ১০ই অক্টোবর ঝাড়ুদার পদে, মো. আবদুর রাজ্জাক ১৯৯৪ সালের ১৫ই অক্টোবর ঝাড়ুদার পদে, আবদুল গফুর ফরাজি ১৯৯৪ সালের ১৫ই অক্টোবর ঝাড়ুদার পদে, মো. সাইফুদ্দিন ১৯৯৪ সালের ১লা নভেম্বর ঝাড়ুদার পদে নিয়োগ পান। এ ছাড়া বিভাগীয় দ-প্রাপ্ত আবু ইউসুফও রয়েছেন তালিকায়। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এ পদোন্নতির জন্য একটি কমিটি কাজ করলেও কমিটির এক সদস্যের সহযোগিতায় অতিরিক্ত পরিচালকের কার্যালয়ের প্রধান সহকারী কুদরত আলী কাজ করে গেছেন। ব্লক পোস্টের কর্মচারীদের কাছ থেকে নানা ছুতোয় টাকা আদায় করেছেন। যা কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবরে এক আবেদনে অফিসের কর্মচারীরা উল্লেখ করেছেন।
আবেদনে তারা উল্লেখ করেন পদোন্নতি কমিটিতে থাকা জামায়াত অনুসারী এক উপ-পরিচালকের সঙ্গে মিলে ব্লক পোস্টে পদোন্নতি করিয়ে দিতে লাখ লাখ টাকা আদায় করেছেন। ২০১৮ সালের ১৯শে এপ্রিল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের অনুমোদনে অধিদপ্তরের সরকারি চাকুরিতে ১ম যোগদান ‘সুইপার-ঝাড়ুদার’ পদধারীদের পরবর্তী পদোন্নতি না দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এবং বাংলাদেশ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মচারী নিয়োগ ও পদোন্নতির নিয়োগ বিধিমালা ১৮৮৫, ২০১৫ ও ২০১৯ এ ‘সুইপার-ঝাড়ুদার’ পদধারীদের পদোন্নতির কোনো সুযোগ রাখা হয়নি। পদটি ‘ব্লক পোস্ট’ হিসেবে গণ্য আছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, খামারবাড়ি, ঢাকার জারি করা ২০১৮ সালের ২৪শে মে ৫৩৭৯ (১৪)নং স্মারকে ‘জ্যেষ্ঠতা তালিকা প্রস্তুত, পদোন্নতি প্রদানে আবশ্যিক অনুসরণী নির্দেশনা’ এর ৩নং ক্রমিকে ব্লক পোস্টে পদোন্নতি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এ ব্যাপারে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, সিলেটের অতিরিক্ত পরিচালকের কার্যালয়ের প্রধান অফিস সহকারী কুদরত আলী সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, এ বিষয় আমি জানি না। কাগজপত্র তৈরি করলেও পদোন্নতি কমিটি তাদের সুপারিশ করেছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, সিলেটের অতিরিক্ত পরিচালক মোশাররফ হোসেন খান জানিয়েছেন, একই কমিটির সুপারিশে পদোন্নতি একাধিক ধাপে করা যেতে পারে। তবে সব পদোন্নতি ওয়েবসাইটে থাকবে- এমন কথা নয়। তিনি ব্লক পোস্টে পদোন্নতির বিষয়টি জানেন না দাবি করে বলেন, সব কাগজ দেখা তো যায় না। কমিটি যাদের নাম সুপারিশ করেছে, তাদের পদোন্নতি দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ব্লক পোস্টে পদোন্নতি হলে তা বাতিল করা হবে। পদোন্নতিতে নিজে কোনো আর্থিক অনিয়মে জড়িত নয় বলেও তার দাবি। তিনি বলেন, পদোন্নতিতে যে সকল অনিয়ম হয়েছে, তার দায় নিজেসহ পদোন্নতি কমিটি এড়াতে পারবে না।