অতীত ইতিহাস বিচার করেই নেতা নির্বাচন করতে হবে….প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী
সিলেট জেলা যুবলীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন সম্পন্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত হয়েছে : ৯:২৬:২৫,অপরাহ্ন ২৯ জুলাই ২০১৯ | সংবাদটি ৬৪৫ বার পঠিতদীর্ঘ ১৬ বছর পর সিলেট জেলা যুবলীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন সম্পন্ন হয়েছে। সোমবার (২৯ জুলাই) দূপুর ১২ টায় সম্মেলনের ১ম অধিবেশন শুরু হয়। সিলেট নগরীর ঐতিহাসিক রেজিস্টারি মাঠে পতাকা উত্তোলন করে এ সম্মেলনের উদ্বোধন করেন যুবলীগের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ওমর ফারুক চৌধুরী।
সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ এমপি। প্রধান অথিতির বক্তব্যে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা ও শেখ হাসিনার ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে যুব নেতৃত্বকে আরও জোরদার করতে হবে। তবেই, ২০২১ সালে মধ্য আয়ের দেশ, ২০৪১ সালে উন্নয়নশীল দেশে রুপান্তরিত হবে।
তিনি বলেন, আজকের এই যুবকদের জন্য চিন্তা করেই বর্তমান সরকার যুবকদের সংগঠিত করে যুব উন্নয়নে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। যা ইতিমধ্যে বাস্তবায়নে কাজ করেছে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়। ইমরান আহমদ যুবলীগ নেতৃবৃন্দের উদ্দেশ্য করে বলেন, যুবলীগের আগামী নেতা নির্ধারনের জন্য প্রার্থীদের অতীত ইতিহাস, দলীয় কর্মকান্ড, দলের প্রতি নেতাদের কার কি ভূমিকা ছিল এসব বিচার করেই নেতা নির্বাচন করতে হবে। তিনি আরও বলেন, গ্রুপিং রাজনীতি নেতৃত্বের রাজনীতিকে ধ্বংস করে। তাই যুব রাজনীতিতে গ্রুপিং বন্ধ করতে হবে। তিনি আজকের পর থেকে সিলেটের যুবলীগ তার পুরোনো ঐতিহ্যে নিয়ে ফিরে আসবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। মন্ত্রী বলেন, আজ সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করবে কাউন্সিলররা। পরে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন যেন দ্রুত গঠন করা হয় এই বিষয়টির প্রতি নজর রাখার জন্য তিনি যুবলীগ চেয়ারম্যানের প্রতি অনুরোধ জানান। না হলে বড় বড় নেতারা পদপদবী বন্টনের আশ্বাসে এই যুবকদের নিয়ে অপরাজনীতির খেলা শুরু করেন বলে তিনি উল্লেখ করেন।
এরআগে সোমবার দুপুর সাড়ে ৩টার দিকে উদ্বোধনী বক্তব্যে যুবলীগের কেন্দ্রীয় চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ওমর ফারুক চৌধুরী বলেন, যুবলীগ করতে হলে আগে ‘সরি’ বলা শিখতে হবে। ক্ষমা চাওয়া আর ছাড় দেওয়ার মন মানসিকতা না থাকলে কেউ যুবলীগের কর্মি হতে পারবেন না। তিনি বলেন, যুবলীগ স্লোগানের রাজনীতি করে না। যুবলীগ করে মাঠের রাজনীতি। যারা নিজের নামে কর্মীদের দিয়ে স্লোগান দিয়ে, তালি দিয়ে নেতা হতে চান তারা কখনই যুবলীগের নেতৃত্বে আসতে পারবেন না। ওমর ফারুক বলেন, আমি স্লোগান পার্টি, তালি পার্টি না। নেতা হতে চাইলে আমার নয় কাউন্সিলরদের মন জয় করুন। তাদের ভোটে বিজয়ী হতে পারলেই একমাত্র নেতা হতে পারবেন। এছাড়া কোনভাবে যুবলীগের নেতা হওয়া যাবে না। চেয়ারম্যান বলেন, যুবলীগ শৃঙ্খলা শেখার একটি সংগঠন। এটি শৃঙ্খলা শেখার কারখানা। যুবলীগে চাঁদাবাজদের কোন স্থান নেই। এখানে মেধাবীদের জায়গা আছে। যুবলীগ কখনো হাইব্রিডদের স্থান দেয় না। মেধাবীরাই যুবলীগে মূল্যায়িত হয়, আগামীতেও হবে। সম্মেলনে প্রধান বক্তার বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশীদ।
সিলেট জেলা যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শামীম আহমদের সভাপতিত্বে ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক খন্দকার মোহসিন কামরানের পরিচালনায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রিয় সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সদস্য ও সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বদর উদ্দিন আহমদ কামরান, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরী ও সিলেট-৩ আসনের সংসদ সদস্য মাহমুদ উস-সামাদ চৌধুরী।
যুবলীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, প্রেসিডিয়াম সদস্য শহীদ সেরনিয়াবাত, মুজিবুর রহমান চৌধুরী, মাহবুবুর রহমান হিরন, আব্দুস সাত্তার মাসুদ, মোহাম্মদ আতাউর রহমান, অ্যাডভোকেট বেলাল হোসেন, ড. আহমদ আল কবীর, মোতাহার হোসেন সাজু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মহি উদ্দিন মহি, সুব্রত পাল, সাংগঠনিক সম্পাদক বদিউল আলম বদি, ফজলুল হক আতিক, ফারুক হাসান তুহিন, দপ্তর সম্পাদক কাজী আনিসুর রহমান, ত্রাণ সম্পাদক মিজানুর রহমান মিরু, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক মাসুদ হায়দার লিটন, সহ সম্পাদক তারেক আল হাসান, মোয়াজ্জেম হোসেন, হাবিবুর রহমান পবন, রবিউল আলম।
সম্মেলনের শুরুতে পবিত্র থেকে পাঠ করেন কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা যুবলীগের আহবায়ক হাজী মোহাম্মদ আলাউদ্দিন এবং পবিত্র গীতা থেকে পাঠ করেন দিলীপ কুমার। এরআগে বেলা ১১টার পর থেকে নগরীর বিভিন্ন এলাকার যুবলীগ নেতাকর্মীরা খন্ড খন্ড মিছিল নিয়ে সম্মেলনস্থল সিলেট রেজিস্টারি মাঠে প্রবেশ করেন। এসময় তাদের ¯োগানে মুখরিত হয়ে ওঠে সম্মেলন স্থলের চারপাশ। তাদের হাতে ছিল ব্যানার, ফেস্টুন। অনেকের গায়ে প্রার্থীদের ছবি সম্বলিত টি-শার্ট ও মাথায় ছিল রঙিন ক্যাপ। বিকেল সাড়ে ৫ টায় সম্মেলনের ২য় অধিবেশন শুরু হয় নগরীর কাজী নজরুল ইসলাম অডিটোরিয়ামে।
প্রসঙ্গত, ১৯৯২ সালের পর সিলেট জেলা যুবলীগের নেতৃত্ব নির্বাচনের ক্ষেত্রে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ব্যবহার করা হয়নি। ২০০৩ সালে যুবলীগের সম্মেলন হলেও ভোট হয়নি। সমঝোতার মাধ্যমেই ওই সম্মেলনে জগদীশ চন্দ্র দাসকে সভাপতি ও আজাদুর রহমানকে সাধারণ সম্পাদক করে কমিটি গঠন করা হয়। এরপর পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনে সময় লাগে প্রায় ৩ বছর। ২০০৭ সালে ওয়ান ইলেভেন সরকারের সময়ে ভিন্ন ভিন্ন মামলায় জগদীশ ও আজাদ গ্রেফতার হলে ২০০৮ সালে আবু তাহের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি, খন্দকার মহসিন কামরান ভারপ্রাপ্ত সাধারন সম্পাদকের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। দায়িত্ব গ্রহণের কিছু দিনের মধ্যে আবু তাহের অস্ত্র মামলার আসামী হিসেবে কারাগারে চলে যান। পরে জেলা ৬নং সহ-সভাপতি শামীম আহমদ ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এরপর ১১ বছর ধরে এই কমিটিই হাল ধরে আছে জেলা যুবলীগের।