ভারতের সাবেক অর্থমন্ত্রী গ্রেপ্তার
টাইম সিলেট ডট কম
প্রকাশিত হয়েছে : ২:৪৬:৪১,অপরাহ্ন ২২ আগস্ট ২০১৯ | সংবাদটি ৩৭১ বার পঠিতভারতের সাবেক অর্থমন্ত্রী পি চিদাম্বরমকে গ্রেপ্তার করেছে দেশটির কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা সেন্ট্রাল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (সিবিআই)। বুধবার (২১ আগস্ট) রাতে জোড়াবাগের বাসভবন থেকে তাকে আটক করা হয়।
ভারতের আনন্দবাজার পত্রিকা জানিয়েছে, তার গ্রেপ্তারির আশঙ্কা ছিল আগে থেকেই। বুধবার ২৭ ঘন্টা পর প্রথম চিদাম্বরম প্রথম প্রকাশ্যে আসেন। রাতে দিল্লিতে কংগ্রেসের সদর দপ্তরে সাংবাদিক বৈঠক করে তিনি নিজের বিরুদ্ধে ওঠা সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেন তিনি। পরে তিনি ফিরে যান বাড়িতে।
চিদাম্বরম বাড়িতে পৌঁছার সময়ে তার জোড়াবাগের বাসভবনে পৌঁছে সিবিআইয়ের একটি দল। দরজা না খোলায় দেওয়াল টপকে বাড়িতে ঢোকে তারা। এর পর নাটকীয় পরিস্থিতি তৈরি হয়। শেষ পর্যন্ত রাত পৌনে দশটা নাগাদ তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
আইএনএক্স মিডিয়া কেলেঙ্কারি মামলায় চিদাম্বরমের জামিনের আবেদন ভারতের সুপ্রিম কোর্ট বাতিল করার পরই তাকে গ্রেপ্তার করা হলো। গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে সিবিআইয়ের কার্যালয়ে নেওয়া হয়েছে।
সন্ধ্যার দিকে কংগ্রেসের এই জ্যেষ্ঠ নেতা কংগ্রেস সদর দপ্তরে ছিলেন। তখন থেকেই তাকে গ্রেপ্তারে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল। অনেক নাটকীয়তার পর রাতে বাড়ি থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারে সময় দিল্লি পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে সিবিআইয়ের ৩০ সদস্যের একটি দল ঘটনাস্থলে ছিল। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সিবিআইয়ের কর্মকর্তারা পি চিদাম্বরমের বাসায় অভিযান চালাতে গিয়ে মূল ফটক খুলে দিতে বলেন। কিন্তু বাড়ির নিরাপত্তারক্ষীরা ফটক খুলে দেননি। একপর্যায়ে দেয়াল টপকে ভেতরে ঢোকেন সিবিআই কর্মকর্তারা। কিছু সময় পর চিদাম্বরমকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যান তারা।
বর্তমানে ভারতের পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভার সদস্য চিদাম্বরম অতীতে বিভিন্ন সময় অর্থমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও পেনশনবিষয়ক মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। নির্বাচিত হয়েছিলেন নিম্নকক্ষ লোকসভার সদস্য হিসেবেও।
এরআগে সাবেক এই অর্থমন্ত্রী চিদাম্বরমের গ্রেপ্তার নিয়ে একের পর এক নাটকীয় পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। দীর্ঘ ২৭ ঘণ্টা পর, বুধবার রাতে প্রকাশ্যে আসেন প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী। গতকাল দিল্লি হাইকোর্টে চিদাম্বরমের জামিনের আর্জি খারিজ হয়ে যায়। বিচারপতি সুনীল গৌড় আগাম জামিনের আবেদন খারিজ করে বলেন, আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে, সাবেক অর্থমন্ত্রীই এই আর্থিক কেলেঙ্কারি মামলার নাটের গুরু (কিংপিন)। তিনি বলেন, আইনপ্রণেতাকে কিছুতেই আইন ভাঙতে দেওয়া উচিত হবে না। সেই থেকে আর দেখা যায়নি পি চিদাম্বরমকে। বাধ্য হয়েই তার বিরুদ্ধে লুকআউট নোটিস জারি করে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। তার পরেই এ দিন রাত সওয়া ৮টা নাগাদ দিল্লিতে কংগ্রেসের সদর দপ্তরে পৌঁছান চিদাম্বরম। সেখানে অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি, গুলাম নবি আজাদ এবং কপিল সিবলের সঙ্গে সাংবাদিক বৈঠক করেন তিনি। চিদাম্বরম বলেন, ‘‘আমি পালিয়ে যাইনি। জামিনের আর্জির শুনানি চেয়েছিলাম মাত্র।’’
চিদাম্বরমকে নিয়ে এদিন দিনভর রাজনৈতিক আলোচনা চলেছে কংগ্রেস ও বিজেপির মধ্যে। আইনের হাত থেকে বাঁচতে তিনি গা ঢাকা দিয়েছেন বলেও অভিযোগ তোলেন বিজেপি নেতারা। তা নিয়ে নাম না করেই শাসকদলকে একহাত নেন চিদাম্বরম। তিনি বলেন, ‘‘স্বাধীনতাই গণতন্ত্রের ভিত। সংবিধানের ২১তম ধারাতেও তার উল্লেখ রয়েছে। দেশের প্রতিটি নাগরিকের জীবন ও স্বাধীনতা নিশ্চিত হয়েছে তাতে। দু’টোর মধ্যে একটিকে বেছে নিতে বললে, স্বাধীনতাকেই বেছে নেব আমি। গত ২৪ ঘণ্টায় যা যা ঘটেছে, তাতে অনেকেই উদ্বিগ্ন এবং বিভ্রান্ত। আমি আইএনএক্স মামলায় অভিযুক্ত নই। অভিযুক্ত নন আমার পরিবারের কোনও সদস্য। এ নিয়ে আদালতে আমাদের কারও বিরুদ্ধে কোনও চার্জশিট জমা দেয়নি সিবিআই এবং ইডি।’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘আইনের থেকে বাঁচতে আমি গা ঢাকা দিয়েছি বলে অভিযোগ তুলছেন অনেকে। এতে হতবাক আমি। জামিনের পিটিশন নিয়ে শুক্রবার শুনানি হওয়ার কথা। তাই আইনজীবীদের পরামর্শ নিতে ব্যস্ত ছিলাম। পক্ষপাতমূলক ভাবে তদন্তকারী সংস্থা যদি আইনের অপব্যবহার করে, তাও আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকব আমি। সুপ্রিম কোর্টের রায় মাথা পেতে নেব।’’
আইএনএক্স মামলার সময়ে প্রথম ইউপিএ সরকারের অর্থমন্ত্রী ছিলেন চিদাম্বরম। অভিযোগ, ২০০৭ সালে চিদাম্বরমের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় ও তার পুত্র কার্তির উদ্যোগে আইএনএক্স মিডিয়া ৩০৫ কোটি রুপি বিদেশি বিনিয়োগ আদায় করে। সেই অর্থ আদায়ের ‘উপহার’ হিসেবে কার্তি ৫ কোটি রুপির মতো ‘দালালি’ পেয়েছিলেন বলে অভিযোগ। সিবিআই এবং ইডির অভিযোগ, অর্থমন্ত্রী থাকাকালীন বহু অর্থ চিদাম্বরমেরা এইভাবে আদায় করেছেন এবং দুজনে নাকি বিদেশে ১২টির বেশি ব্যাংক হিসাব খুলেছিলেন।