ছাতকের রাব্বী হত্যাকান্ডের ১৮ দিনেও আসামী গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ
ছাতক (সুনামগঞ্জ) থেকে নিজস্ব সংবাদদাতা
প্রকাশিত হয়েছে : ১:০৩:২২,অপরাহ্ন ০৮ আগস্ট ২০১৯ | সংবাদটি ৪২৭ বার পঠিতসুনামগঞ্জের ছাতকের মেহদী হাসান রাব্বী হত্যাকান্ডের ১৮ দিন পেরিয়ে গেলেও কোন আসামী গ্রেফতার করতে পারেনি ছাতক থানা পুলিশ। এদিকে ছেলে মেহদী হাসান রাব্বী হত্যার বিচার চেয়ে দপ্তরে দপ্তরে ঘুরছেন তার মা। ছেলে হারা মায়ের কান্নায় আকাশ বাতাস ভারী হয়ে উঠছে। তবুও টনক নড়ছে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংশ্লিষ্টদের। হত্যাকান্ডের ১৮ দিন পেরিয়ে গেলেও একজন আসামীও গ্রেফতার হয়নি। উল্টো আপস মীমাংসার জন্য অব্যাহত চাপ দিয়ে যাচ্ছে প্রভাবশালী আসামী পক্ষ। মুক্তিযোদ্ধার কন্যা রুপিয়া বেগমের দাবি টাকা পয়সা চান না তিনি। মৃত্যুর আগে হলেও একমাত্র পুত্র হত্যার বিচার দেখে যেতে চান। ছেলে হত্যার ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে এই প্রতিবেদকের সম্মুখে রুপিয়া বেগমের দু’চোখ দিয়ে অঝোরে গড়িয়ে পড়ছিল অশ্রু।
গত ২৩ জুলাই সন্ধ্যায় ছাতক উপজেলার সিমেন্ট ফ্যাক্টরি বাজারে এলাকার সংঘবদ্ধ সন্ত্রাসীদের হাতে প্রকাশ্য দিবালোকে খুন হন মেহদী হাসান রাব্বী (২২)। তিনি ছাতক পৌর এলাকার পূর্ব নোয়ারাই আলমগীর হোসেনের পুত্র। সর্বদা শান্ত রাব্বী প্রভাশালী পৌর কাউন্সিলর লিয়াকত বাহিনীর বেআইনি কর্মকা-, চাঁদাবাজি ও ত্রাসের রাজত্ব কায়েমের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করায় খুন হন । এমনটাই দাবি মা রুপিয়া বেগমের। এই অসহায় রুপিয়া বেগম গণমাধ্যমের মাধ্যমে তার পুত্র হত্যাকারীদের গ্রেফতারের আকুল আবেদন জানিয়েছেন। তিনি বলেন ‘আমি টাকা চাই না, আমি পুত্র হত্যাকারীদের গ্রেফতার চাই’।
অন্যদিকে, হত্যাকান্ডটি ২৩ জুলাই হলেও আসামীরা প্রভাবশালী হওয়ায় প্রথমে মামলা নিতে চায়নি ছাতক থানা পুলিশ। পরে নিহত রাব্বির মা সিলেট রেঞ্জের ডিআইজির সাথে যোগাযোগ করে মামলা নেয়ার আবেদন জানালে পুলিশ মামলা গ্রহণ করে। তবে মামলা নিলেও ১৮ দিনেও এখন পর্যন্ত একজন আসামীকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। রুপিয়া বেগমের দাবি আসামীরা এখনো সিমেন্ট ফ্যাক্টরি বাজারে ঘোরাফেরা করে। পুলিশ তাদের ধরছে না। ছাতক থানায় মামলা নং ২০ (২৬/০৭/১৯)। মামলায় আসামী করা হয়-স্থানীয় সন্ত্রাসী চক্রের সদস্য তারেক হোসেন, আতিকুর রহমান সোহাগ, মুক্তার আলী, রনি মিয়া, জাহাঙ্গীর হোসেন, হাসান, তাজিম হোসাইন, অপু মিয়া, লিয়াকত আলী, বাবু মিয়া, জামিল হোসেন, বাবু আহমেদ, আমির আলী, মামুন আহমদ, খুরশেদ আলম অর্নব, রাজু মিয়া ও সানি আহমদকে।
অভিযোগ রয়েছে, প্রভাবশালী আসামিদের স্বজনরা উল্টো টাকা-পয়সার বিনিময়ে মামলা আপস করার জন্য বাদিকে চাপ দিয়ে যাচ্ছেন। একমাত্র পুত্র সন্তানের খুনের ঘটনা কোন কিছুর বিনিময়ে আপস করতে নারাজ রাব্বীর মা । বিচার চেয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন পুলিশ প্রশাসন ও প্রভাবশালীদের দ্বারে দ্বারে।
রাব্বীর মা রুপিয়া বেগম ছাতক পৌরসভার নোয়ারাই গ্রামের প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মালিকের মেয়ে। তাঁর শ্বশুর অর্থাৎ নিহত রাব্বীর দাদা তোফায়েল হোসেন খানও একজন মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। রুপিয়া বেগম জানান, সংসারের একমাত্র কর্মক্ষম ছেলে ছিলেন রাব্বী। তাকে হারিয়ে অর্থনৈতিকভাবেও বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন তারা । স্বামী বিদেশ যাওয়ার পর ১৮ বছর ধরে নিখোঁজ। ছেলে সংসারের হাল ধরার পরে সুখের দেখা পেলেও সেটা আর স্থায়ী হয়নি।
রাব্বী হত্যা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই সৈয়দ আব্দুল মান্নান বলেন, আসামীরা ঘন ঘন অবস্থান পরিবর্তন করছে। এক জায়গায় অবস্থান না করায় তাদের গ্রেফতার করা সম্ভব হচ্ছে না। আমরা তাদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রেখেছি। দু একদিনের মধ্যে ভালো ফলাফল পাওয়া যাবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।