শবে বরাত,মহিমান্বিত এক রাত
টাইম সিলেট ডট কম
প্রকাশিত হয়েছে : ১২:৩০:০৯,অপরাহ্ন ১৮ মার্চ ২০২২ | সংবাদটি ৪০৪ বার পঠিত
সৈয়দ রাসেল,সাংবাদিক শবে বরাত। মহিমান্বিত এক রাত। কোরান-কেতাবে সরাসরি ‘বরাত’ বলে কোন শব্দ না থাকলেও মহিমান্বিত রাত হিসেবে তার আলোচনা বিস্তর।
গ্রাম জীবনে পাড়ায় পাড়ায় শিরনী-সালাতের প্রস্তুতি সপ্তাহদিন আগে থেকেই জানান দিত- আসছে সবে বরাত। আর শহুরে জীবনে মাস-পনের দিন আগে থেকেই মসজিদের দরাজ মাইকে কিংবা সোশ্যাল মিডিয়ায় এই নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে ফতোয়া আর পালনকারীদের কাফের গালি দেয়া শুরু হলেই বুঝি সন্নিকটে এই ‘মহিমান্বিত’ রাত।
ছোটবেলায় দিবসটাকে একটা ধর্মীয় ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতির অংশই মনে করতাম। দিবসটা আসলে কি যে ভালো লাগতো! দিবসটি আসার সপ্তাহদিন আগে থেকেই মসজিদে শিরনীর জন্য গ্রামের ঘরে ঘরে টাকা-চাল তোলা হতো। কি একটা উৎসবমুখোর ভাব। আরও ছিল আতর আগরবাতি আর মোমবাতির প্রস্তুতি।
শবে বরাতের বিকেলে আসরের নামাজ শেষ করেই শুরু হতো শিরনী বানানোর কাজ। অপরদিকে ঘরে ঘরে শবে বরাতের প্রস্তুতি। সে এক অন্যরকম ভাবগাম্ভীর্যের আবহ। সন্ধ্যার সাথে সাথে সবার বাড়িতে জ্বলে ওঠতো মোমের আলো। আলোকিত হয়ে থাকতো ঘরের প্রতিটা দরজা। চারপাশে ছড়িয়ে পড়তো আগরবাতির ঘ্রাণ। সবমিলিয়ে অন্যরকম।
মাগরিবের নামাজ পড়ে চা পর্ব শেষ করেই বাড়ির সব ছেলেরা হাতে মোমবাতি আর আগরবাতি নিয়ে বেরিয়ে পড়তাম। (তবে আমাদের গ্রামে তখন ফুলঝুরির প্রচলন ছিল না।) কে কয়টা মোমবাতি আগরবাতি ঘর থেকে ভাগাতে পারলাম তা নিয়েও চলতো এক ধরনের প্রতিযোগিতা। যাইহোক দলবেঁধে শুরু হতো জিকির। মোমবাতি জ্বালিয়ে গ্রামের একপাশ দিয়ে উচ্চস্বরে জিকির শুরু করে প্রতিটা বাড়ি হয়ে গ্রামের আরেকপাশে গিয়ে শেষ করতাম। এ যেন ‘বরাত উৎসব’। আনন্দ আর ভাবগাম্ভীর্যের বিশাল উপলক্ষ।
সন্ধ্যার জিকির শেষ করে এশার নামাজ পড়ে বাসায় গিয়ে খাওয়া-দাওয়া করে কিছুসময় নফল নামাজ, কোরআন তেলাওয়াত। তারপর মা-বোনদের সালাত-তেলাওয়াতে রেখে আবার মসজিদে গিয়ে গ্রামের সবাই একহয়ে ইমাম সাহেবের তত্ত্বাবধানে শুরু হতো জিকির-আযকার। সারারাত এগ্রামের ও’গ্রামের মাইকে থেকে ভেসে আসতো জিকিরের সুর। যে সুর থামতো ফজরের আজানের সাথে।
আজকাল সামাজিক বিভিন্ন বিষয়ে মানুষ যেমন পাষাণ হয়েছে তেমনি ধর্মীয় উদারতাও হারিয়ে গেছে কালের আবর্তে। মসজিদ থেকে নিজ ধর্মের অনুসারীদের বিরুদ্ধেও আসছে কাফের ফতোয়ার বিষোদগার। যার বিষাক্ত প্রভাব পড়ছে সমাজে।
‘বরাত’ শব্দটা কোরান-কেতাবে নাই থাকুক মহিমান্বিত রাতের কথা তো আছে নিশ্চয়ই। ‘বরাত’ নামে হোক আর মহিমান্বিত রাতের নামেই হোক যারা দিবসটি ইবাদতের মাধ্যমে পালন করে তারা তো কেবলই চায় মাওলার সান্নিধ্য।
আমি এতো সব বুঝি না, বুঝার চেষ্টাও করি না। তবে এতোটা বুঝতে পারি- আপনাদের ফতোয়ার কারণে একটা মহিমান্বিত রাত কিভাবে নিস্প্রভ হয়ে গেছে সময়ে সময়ে। একালে গ্রামে গেলে তো বুঝতেই পারি না, কবে মহিমান্বিত রাত, কবে শবে বরাত।
একালে এসে আমার খারাপ লাগে- আমার বা আমাদের সন্তানেরা আর সেই উৎসবের সাক্ষী হতে পারবে না কখনও। সেইসাথে আফসোসও লাগে। কারণ, কথিত মৌলভীরা বুঝলো না যে- দিবসটি শুধু ধর্মীয় নয়, আমাদের ঐতিহ্য আর সংস্কৃতির অংশ হয়ে গিয়েছিল। যে সংস্কৃতি মানুষকে শুধু উদার হতে শেখায়।কপি ফেসবুক থেকে