লন্ডভন্ড বিধ্বস্ত বিভীষিকার চিত্র বড়লেখা জুড়ে
টাইম সিলেট ডট কম
প্রকাশিত হয়েছে : ১১:৩৯:২২,অপরাহ্ন ০৩ জুলাই ২০২২ | সংবাদটি ২১৬ বার পঠিতআবদুল কাদের তাপাদার,সাংবাদিক,এবারের শতাব্দীর ভয়াবহ মহাপ্লাবনে উজানের জনপদ বলে পরিচিত বড়লেখার হাজারো মানুষের কোমর ভেঙে গেছে। সব হারিয়ে নি:স্ব হয়ে গেছে কতো শতো মানুষ। উপজেলার সবখানে এখন বিভীষিকার রাত কাটছে দুর্যোগপীড়িত মানুষজনের। দু:স্বপ্ন তাড়া করে ফিরছে দিনের সবকটা মুহূর্ত।
আমার চিরপরিচিত, চিরচেনা বড়লেখা উপজেলার সর্বত্র এখন বানের পানিতে লন্ডভন্ড জনপদের বিধ্বস্ত প্রতিকৃতি। বিভীষিকার চিত্র গ্রামগঞ্জ হাটঘাট মাঠজুড়ে। ধনি, গরীব মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত প্রায় সকল শ্রেণীর মানুষের হাহাকার চলছে বড়লেখায়।
নিজের এলাকায় অতীতেও ত্রাণ সাহায্য সহযোগিতা করতে গিয়েছি, মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছি।
কিন্তু শনিবার বড়লেখায় দুই ট্রাক ভর্তি ত্রাণ বিতরণ করেও বানভাসি অসহায় মানুষের কাছে আমরাও যেনো আরো বেশি অসহায় হয়ে পড়েছি।
চারিদিকে একটা দু:সহ যাতনার, ব্যথিত আহাজারির দৃশ্যপট ভেসে আসছে। এলাকার মানুষের প্রিয় মন্ত্রী এসেছেন। বেসরকারি ত্রাণ তৎপরতাও চোখে পড়ছে। কিন্তু সবকিছু ছাপিয়ে একটা নিরব কান্না, হাহাকার, একটা নিভৃত মাতম যেমন হাকালুকির বিশাল জলরাশি জুড়ে। তেমনি মাতম চলছে বড়লেখা সদর ইউনিয়নের বন বনানী ঘেরা পাহাড়টিলায়ও। পাহাড়ি ঢল সেখানে রেখে গেছে তান্ডবের ভয়ংকর দৃশ্য!
সদর ইউনিয়নের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান স্নেহভাজন ও তরুণ সমাজসেবক সালেহ আহমদ জুয়েল এর কন্ঠে তাই আক্ষেপ, মিডিয়া বড়লেখা উপজেলার বন্যার করালগ্রাসী ভয়াবহতা তুলে ধরতে পারেনি। তাই দেশবাসী, বিশেষ করে শাসকগোস্টীর কাছে এর প্রকৃত ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপিত হতে পারছে না। তিনি এখনকার বিধ্বস্ত বিরানভূমিতে নিঃস্ব কৃষককূলের হাহাকারের কথা জানিয়ে প্রয়োজনে উজান এলাকায় হালিচারা চাষাবাদের আহবান জানান।
জন্মভূমির মাটির টানে সিলেটে বসবাসরত এলাকাবাসীর প্রাণপ্রিয় সংগঠন বড়লেখা সমিতি সিলেট শনিবার দিনজুড়ে ১৩০০ পরিবারের কাছে কিছু ত্রাণ সাহায্য নিয়ে ছুটে চলে বড়লেখার এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে। সন্ধ্যার গহীন অন্ধকার ভেদ করে হাকালুকি হাওর পারের অমানবিক জনপদে মানবিকতার পরশ বুলাতে চেষ্টা চলে অবিরাম, অন্তহীন।
বড়লেখা সমিতি সিলেট এর অক্লান্ত আয়োজনে এই অভিযানে দূর থেকে পরম আন্তরিকতার সাথে এগিয়ে আসেন যুক্তরাজ্যে বড়লেখাবাসীর প্রাণপ্রিয় সংগঠন বড়লেখা ফাউন্ডেশন ইউকে এর নেতৃবৃন্দ। এই সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান জামাল উদ্দিন নিজে আমাদের সাথে শনিবার শরীক হয়ে এক মহানুভবতার পরিচয় দেন।
উজানের অজমির স্কুল থেকে এই অভিযান, মানবিক এক অভিযাত্রা শুরু হয় আমাদের। সেটা সদর ইউনিয়নের ছিকামহল, সোনাতলা পেরিয়ে হাকালুকি হাওর পারের জনপদে ছড়িয়ে যায়। গোধূলির মায়াময় আবেশে বিমোহিত করে আমাদের ত্রাণবাহী বড় নৌকা যখন ছুটে চলে আমাদেরও বুকের ধুকধুকানি বাড়তে থাকে।
একে তো উত্তাল হাওরে রাত নেমে আসছে। তার উপর
চারপাশে এতো বিপন্ন মানুষের হাহাকার আমাদের তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে। কাকে রেখে কাকে ত্রাণের সাড়ে ১০ কেজির প্যাকেটটা দিই। রীতিমতো লজ্জাজনক পরিস্থিতি!
হাকালুকি পারের মানুষ বড়লেখা সমিতির তরুণ নেতা ও ব্যবসায়ী সোহেলের চেহারায় ভাঁজ পড়েছে।
তালিকা অনেক লম্বা। কয়েকজনকে দেয়া যাবে?
কয়েক দিন থেকে এগুলোর আয়োজন নিয়ে ব্যতিব্যস্ত ও ক্লান্ত সমিতির সবচেয়ে কমবয়েসী তরুণ ও সাংবাদিক জুলফিকার তাজুলের দরদমাখা হৃদয়ে ছুঁয়ে যায় চিন্তার বলিরেখা। মানুষের এতো বেশি প্রয়োজন। আমরা তাহলে কী করবো!
বড়লেখায় আমাদের এই আয়োজনে নানাভাবে যিনি
নানাজনের নিকট থেকে দেশ বিদেশ থেকে টাকা আদায়ে সফলতা দেখিয়েছেন, সমিতির সহ-সভাপতি আবদুুর রহমান শাহীনের মন খারাপ। আরো কতো মানুষের কতো প্রয়োজন। নৌকায় বসে, সামনের দিনে আরও কিছু করা যায় কি না তাতে আমাকেও তাগিদ দিচ্ছেন।
এমনিভাবে আজকাল আমাদের বিধ্বস্ত এলাকা নিয়ে এলোমেলো ভাবনার যেনো শেষ হচ্ছে না।
লন্ডনের আমাদের প্রাণপ্রিয় সংগঠন বড়লেখা ফাউন্ডেশন ইউকে এর সম্মানিত সভাপতি শাহীন ইকবাল (মামা), সাধারণ সম্পাদক প্রিয়ভাজন কামরুল ইসলাম, উপদেষ্টা আতাউর রহমান আতা ভাইসহ সকলের কাছে আমরা কৃতজ্ঞতাপাশে আবদ্ধ। প্রিয় এলাবাসীর জন্য তাদের আরো বড় কোনো উদ্যোগ নেয়া জরুরী বলে আমার বিশ্বাস।
বড়লেখায় আমাদের বড়লেখা সমিতির এই আয়োজনে সমিতির সভাপতি শ্রদ্ধাভাজন ডা: হেলাল উদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক ওয়াহিদুর রহমান ওয়াহিদ, কোষাধ্যক্ষ সিনিয়র সাংবাদিক আবদুল কাদের তাপাদার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পরামর্শ ও নির্দেশনা দিয়ে সবসময় আমাদের পাশে রয়েছেন।
সমিতির সিনিয়র সহ-সভাপতি ডা: ফয়েজ উদ্দিন অসুস্থতা থেকে সুস্থ হয়ে উঠছেন। আমি দোয়া করি তিনি তাড়াতাড়ি পুরোপুরি সুস্থ হয়ে আমাদের সাথে কাজে ও পরামর্শে এগিয়ে আসবেন।
আমাদের অন্যতম সহ-সভাপতি বিশিষ্ট সমাজসেবক ও ব্যবসায়ী বেলাল আহমদ সবসময়ই এসব আয়োজন বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
আজকের ত্রাণ বিতরণে অংশ নিয়েছেন সমিতির সাধারণ সম্পাদক ওয়াহিদুর রহমান ওয়াহিদ, কোষাধ্যক্ষ সাংবাদিক আবদুল কাদের তাপাদার, সহ-সভাপতি আবদুর রহমান শাহীন, সাংগঠনিক সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম লুলু, সহ-সাধারণ সম্পাদক আলতাফ হোসেন, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক সোহেল উসমান গণি, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক জুলফিকার তাজুল, ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক কাজী জয়নুল ইসলাম মুনিম, কার্যকরি পরিষদ সদস্য আবদুল হাসিব, সমিতির সদস্য শাহেদ হোসাইন, সমিতির সদস্য জিয়াউল হক, সমিতির সদস্য আবদুল আহাদ, সমিতির সদস্য হাসরুল হক, সমিতির সদস্য এডভোকেট রেদোয়ান আহমদ এবং সমিতির উপদেষ্টা আবদুশ শুকুর বকুল।
বড়লেখায় ত্রাণ বিতরণকালে আমাদের সাথে শরীক হয়েছিলেন বড়লেখা সদর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান, বড়লেখা সমিতির সদস্য, আমার বন্ধু জাহিদুল ইসলাম মামুন, বড়লেখা পৌরসভার জনপ্রিয় কাউন্সিলর আবদুল হাফিজ ললন, নারী শিক্ষা একাডেমির প্রভাষক হাসান আহমদ, বড়লেখার প্রাথমিক শিক্ষক নেতা মীর মুহিবুর রহমান, ইসলামি ব্যাংকের কর্মকর্তা আজিজুল ইসলাম, বড়লেখা মোহাম্মদিয়া মাদ্রাসার ইংরেজীর শিক্ষক তারেক আহমদ, অজমির সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জুবায়ের আহমদ, আওয়ামী লীগ নেতা লতিফুর রহমান লতু, বড়লেখা ফাউন্ডেশন ইউকে এর বাংলাদেশের শুভাকাঙ্ক্ষী ও সমন্বয়কারি এস এ শামীম।
আজ রোববার বড়লেখার শাহবাজপুর, নিজ বাহাদুরপুর, গাজিটেকা, দাসের বাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় ত্রাণ বিতরণ অব্যাহত থাকবে।