এম এ হক প্রস্থানের দুই বছর: কিছু স্মৃতি

আলহাজ¦ এম এ হক। সিলেট বিএনপির ইতিহাসের যার ছিল শক্তিশালী অবস্থান। মহান স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আদর্শে গড়া সেই জাগদল থেকে বিএনপির রাজনীতির ইতিহাসের বাকে বাকে যার ছিল সরব পদচারণা। তৃণমূল বিএনপি থেকে উঠে আসা এম এ হকের সাথে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত বিএনপির শীর্ষ নীতিনির্ধারণী ফোরাম বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টামন্ডলীতে আমরা একসাথে কাজ করার সুবাদে তাকে পেয়েছিলাম সহযোদ্ধা হিসেবে। আজ সেই প্রিয় মানুষটি চলে যাওয়ার ২ বছর হয়ে গেল। আমার সাথে কাটানো কিছু মুহুর্তের স্মৃতি আজো চোখের সামনে ভেসে উঠে। একদিন গল্প করার সময় বলেছিলেন জাগদল করার সময় শহীদ জিয়া বালাগঞ্জ হয়ে হেটে সিলেট শহরে প্রবেশ করেছিলেন। তিনি সেই রাস্তাটি কিছু কাজ করেছিলেন। আমাকে বলেছিলেন আমার তো শেষ বয়স আপনারা তরুণ সামনে সময় পেলে এই রাস্তাটি বড় ও সুন্দর করবেন। সেই কথাগুলো আজো আমার কানে বাজছে।
দেখতে দেখতে দুটি বছর চলে গেল প্রিয় হক ভাই চলে যাওয়ার। আজো জনতার হককে খুঁেজ ফিরছে সিলেটের রাজপথে। রাজনীতির উত্তপ্ত ময়দানে বয়সের ভারে ন্যুজ এম এ হকের ঝাজালো কণ্ঠে উচ্চকিত হতে যাওয়া সিলেটের কোর্ট পয়েন্ট, রেজিষ্টারী মাঠ ও আলিয়া মাদরাসার ময়দান মিস করছে তাদের প্রিয় আপনজনকে। বিদায়ের এই দিনে বর্ষীয়ান নেতার প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা। পরকালে ভালো থাকবেন সেই দোয়া জাতীয়তাবাদী আদর্শ তথা সিলেটপ্রেমী মানুষের।
আলহাজ¦ এম এ হক। যাকে সিলেটের মানুষ হক সাব বলেই ডাকতেন, চিনতেন ও জানতেন। রাজনীতির মাঠে পুরোদুস্তুর রাজনৈতিক নেতা অভিভাবক। ব্যবসার ক্ষেত্রে সৎ, নীতিবান সফল ব্যবসায়ী। রাজনীতির বাইরে স্কুল কলেজ মাদ্রাসা নিয়েই সময় কাটাতেন তিনি। সিলেটের ন্যয্য দাবী দাওয়া আদায়ের সকল আন্দোলনে তিনি ছিলেন সম্মূখসারির শিপাহশালার। শাহজালাল বিশ^বিদ্যালয়ের নামবিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলন, কোথায় ছিলেন না হক সাহেব। রাজনৈতিক সচেতন এম এ হক রাজনীতির বাইরে সামাজিক ও ধর্মীয় সকল আন্দোলনে নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন সামনের সারিতে। কখনো নেতৃত্ব দিয়েছেন, কখনো নেতৃত্ব তৈরী করেছেন।
বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা মন্ডলীতে থাকার সুবাদে প্রিয় হক ভাইয়ের সাথে আমার ছিল হৃদ্যতাপূর্ণ সম্পর্ক। জীবনের শেষ সময়ে সেই সম্পর্ক হয়ে উঠে অনেকটা আত্মার। দেশে কিংবা বিদেশে যে কোন জায়গায় থাকলে নিয়মিত ফোন দিতেন খোঁজ নিতেন। অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় ছিলেন স্বৈরাচারমুক্ত বাংলাদেশ দেখে যাওয়ার। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করতে বৃদ্ধ বয়সেও ঘুরে বেরিয়েছেন সিলেটের প্রত্যন্ত অঞ্চল। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলন আজো চলমান। আন্দোলনের সেই মিছিল ক্রমশ দীর্ঘ হচ্ছে। হয়তো আর বেশী দূরে নয়, দেশ স্বৈরাচারমুক্ত হবে। জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত হবে। কিন্তু সেই দৃশ্য দেখবেন না আমাদের প্রিয় হক সাহেব।
বিদায়ের এই বেদনাবিধুর দিনে দোয়া করি আল্লাহ পাক রাব্বুল আল আমীন যেনো জনতার হককে জান্নাতের মেহমান হিসেবে কবুল করুন। আমীন।

ড. মোহাম্মদ এনামুল হক চৌধুরী
এিনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা
ঢাকা। তারিখ: ০৩-০৭-২০২২ইং