দেড় কোটি টাকার ফুটওভার ব্রিজ’ ২২ লাখ টাকায় বিক্রি হচ্ছে

টাইম ডেক্স
প্রকাশিত হয়েছে : ১০:৪৯:৪৮,অপরাহ্ন ১৭ জুলাই ২০১৯ | সংবাদটি ৪৬৪ বার পঠিত
নগরবাসীর চলাচলের অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক কোর্টপয়েন্ট। পথচারীদের সুবিধার কথা বিবেচনা করে ও নগরবাসীর দাবিতে সেখানে ফুটওভারব্রীজ নির্মাণ করা হয়। তবে সেখানে পথচারীদের চলাচল ছিল খুবই নগন্য। ছোট পয়েন্ট হওয়ায় পায়ে হেঁটেই সড়ক পারাপার হন পথচারীরা। আর অলস পড়ে থাকায় এই ফুটওভারব্রীজটি সিলেটের দক্ষিণ সুরমার হুমায়ুন রশিদ চত্বরে স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তারই পরিপ্রেক্ষিতে কোর্ট পয়েন্টে নির্মাণ করা সিলেটের প্রথম ফুটওভার ব্রীজটি ভেঙে সরঞ্জাম বিক্রির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আর সিটি করপোরেশনের প্রকৌশল বিভাগ ২২ লাখ টাকায় সকল সরঞ্জামাদি বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানা গেছে। যদিও বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই দরে বিক্রির সিদ্ধান্ত এখনো চুড়ান্ত হয়নি।
জানা যায়, চার বছর আগে ২০১৫ সালের ৩ সেপ্টেম্বর উদ্বোধন করা হয় সিলেটের কোর্টপয়েন্টে নির্মিত প্রথম এই ফুটওভার ব্রীজটি। এই পয়েন্টে চারটি সড়কের মিলনমেলা হওয়ায় প্রায়ই যানজট লেগেই থাকতো। আর এরই পাশে অবস্থিত রেজিস্ট্রারী মাঠ। সেখানে বেশিরভাগ রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করা হয়। ওই স্থানে সভা সমাবেশের আয়োজন করা হলে পুরো কোর্টপয়েন্টে যানজট লেগে যেতো। তারই পরিপ্রেক্ষিতে সেখানে ফুটওভার ব্রীজ নির্মাণের দাবি তুলা হয়। ২০০৮ সালে সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত সেখানে ফুটওভার ব্রীজ নির্মাণের ঘোষণা দেন। আর সেটি অর্থমন্ত্রীর অগ্রাধিকার প্রকল্প হওয়ায় সেটি বাস্তবায়ন হয় দ্রুত।
১ কোটি ৬৭ লাখ ব্যায়ে ফুটওভার ব্রীজ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করে বাংলাদেশ ইস্পাত অ্যান্ড প্রকৌশল বিভাগের নিজস্ব কোম্পানী ‘চিটাগাং ড্রাই ডক লিমিটেড’। ২০১৫ সালের ২১ মে সেতুটির ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করা হয়। আর ওই বছরের ৩ সেপ্টেম্বর নির্মাণ কাজ শেষে সেতুটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন অর্থমন্ত্রী।
যানজটমুক্ত নগর গড়ে তোলার লক্ষ্যে ব্রীজটি নির্মাণ করা হলেও চিত্র থেকে যায় একই। পথচারীদের উদাসীনতা অলস পড়ে থাকে ফুটওভার ব্রীজটি। একসময় মাদক সেবনের অভয়াশ্রম হয়ে উঠে এই ব্রীজটি। পরবর্তীতে সবকিছু বিবেচনা করে ও সার্বিক বিষয় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিতকে অবহিত করলে ব্রীজটি কোর্টপয়েন্ট থেকে সরিয়ে নিয়ে সিলেটের দক্ষিণ সুরমা হুমায়ুন রশিদ চত্বরে স্থানান্তরের কথা জানান তিনি।
তবে সিলেট সিটি করপোরেশন এর প্রকৌশল বিভাগ জানিয়েছে, ব্রীজটি পুরোপুরি স্থানান্তর করতে হলে নির্মাণ প্রতিষ্ঠানকে আরো ৭৫ লাখ খরচ দিতে হবে। পাশাপামি ব্রীজটির সরঞ্জামাদির জন্য নির্মাণ প্রতিষ্ঠান দাবি করেছে তারা ২৫ লাখ টাকা দিবে। সবমিলিয়ে সরকারের আর্থিক ক্ষতি হবে আরো ৪০ লাখ টাকার মত। আর এই আথির্ক ক্ষতি যাতে না হয় সেই কারণে ব্রীজটির সরঞ্জামাদি অন্যত্র বিক্রির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
সিলেটের দক্ষিণ সুরমা হুমায়ুন রশিদ চত্বরে ব্রীজটি স্থানান্তরের সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে সিটি করপোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশল দপ্তর গত ২০ জন দরপত্র নিলাম বিজ্ঞপ্তি দেয়। ৭ জুলাই ছিল দরপত্র দাখিলের শেষ দিন। ওইদিন পর্যন্ত প্রত্যাশিত দরদাতা না পাওয়ায় সিলেটের কাজীর বাজারের ৭৫ জন ভাঙারি ব্যবাসয়ীর সমন্বয়ে একটি গ্রæপকে ২২ লাখ টাকায় ব্রীজটির সরঞ্জাম ক্রয়ের সুযোগ দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। যদিও সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান জানিয়েছেন এখনো ২২ লাখ টাকায় ব্রীজটির সরঞ্জামাদি বিক্রির সিদ্ধান্ত হয়নি।
তিনি বলেন, ‘ব্রীজটির সরঞ্জামাদি ২২ লাখ টাকায় বিক্রির সিদ্ধান্ত এখনো চুড়ান্ত হয়নি। আমরা সর্বশেষ পর্যায়ে একটি সভা করে সিদ্ধান্ত নেবো। পুরাতন সরঞ্জামাদি দিয়ে হুমায়ুন রশিদ চত্বরে ব্রীজটি স্থানান্তর করা হলেও প্রায় ৪০ লাখ টাকা ক্ষতি হবে সরকারে। এই আর্থিক ক্ষতি বাঁচানোর জন্যই ব্রীজটির সরঞ্জামাদি বিক্রির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে এই দরে বিক্রির সিদ্ধান্ত এখনো নেওয়া হয়।’
কোর্টপয়েন্টে ফুটওভার ব্রীজটির সরঞ্জামাদি বিক্রি করে হুমায়ুন রশিদ চত্বরে নির্মাণ করে হবে নতুন ব্রীজ। সেই ক্ষেত্রে নির্মাণ প্রতিষ্ঠানের হিসেব দেওয়ার পরই বোঝা যাবে কত খরচ পড়বে সেই ব্রীজ নির্মাণে এমনটাও জানিয়েছেন সিলেট সিটি করপোরেশনের এই প্রধান প্রকৌশলী।
নিউজঃজমুনা নিউজ