দুই মেয়েকে বিয়ে দিয়ে কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ
বিশ্বনাথের শাহজাহান আহমদের সংবাদ সম্মেলন

টাইম সিলেট ডট কম
প্রকাশিত হয়েছে : ১০:২৭:৪৩,অপরাহ্ন ২৪ আগস্ট ২০১৯ | সংবাদটি ৩৬২ বার পঠিতযুক্তরাজ্য প্রবাসী আব্দুল মন্নানের বিরুদ্ধে দুই মেয়েকে বিয়ের পর তাদের স্বামীদের বিদেশ নেয়ার নাম করে প্রতারণা করে কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ এনেছেন তারই ভাতিজা ও জামাতা মো. শাহজাহান আহমদ। শনিবার সিলেট প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে এ অভিযোগ করেন তিনি। শাহজাহান সিলেট জেলার বিশ্বনাথ উপজেলার বিশ্বনাথ ইউনিয়নের পশ্চিম শ্বাসরাম গ্রামের আব্দুল মনাফের ছেলে।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘আব্দুল মন্নান আমার আপন চাচা হন। তার ২ ছেলে ও ৫ মেয়ে রয়েছে। তিনি তার পরিবার নিয়ে যুক্তরাজ্য বসবাস করেন। আব্দুল মন্নান তার স্ত্রী নেওয়ারুন নেছাকে নিয়ে ২০১০ সালে নিজ বাড়িতে আসেন। তখন আমি আমার মা-বাবা ও ভাইকে নিয়ে সৌদি আরবে বসবাসরত ছিলাম। আব্দুল মন্নানের সন্তানদের ইংল্যান্ড যাওয়ার ভিসা হওয়ায় আমার ছোট চাচা কুদ্দুছ আলী ও বড় ফুফু আখলুছ বিবি’র মধ্যস্থতায় আব্দুল মন্নানের মেয়ে মোচ্ছা রুমী বেগমকে আমার সাথে এবং তার আরেক মেয়ে মোচ্ছা. সীমা বেগমকে আব্দুল মন্নানের আপন ভাগনা বিশ্বনাথ থানার কারীকোনা গ্রামের রইছ আলীর ছোট ছেলে মাছুম আহমদের সাথে বিয়ে দেয়ার প্রস্তাব করলে তারা সম্মতি দেন। কিন্তু তাদের আর্থিক অবস্থা ভাল নয় জানিয়ে দেশে যাওয়া আসাসহ বিয়ের সার্বিক খরচ বহন করার প্রস্তাব করেন। আমার চাচা আব্দুল মন্নান ও তার স্ত্রী নেওয়ারুন নেছার এমন প্রস্তাবে আমরা সম্মত হয়ে লন্ডন প্রবাসী আমাদের ছোট চাচা আব্দুল কদ্দুছ ও আমার বড় ফুফু আখলুছ বিবির মাধ্যমে আব্দুল মন্নান ও তার স্ত্রী নেওয়ারুন নেছা দেশে আসার জন্য তাদেরকে ৭ লাখ টাকা প্রদান করি। বিয়ের সিদ্ধান্তে আশ্বস্থ হয়ে আমি আমার মা-বাবা এবং ভাইসহ ভিসা কর্তন করে সৌদি আরব হতে একেবারে দেশে চলে আসি। দেশে আসার পর আলাপ আলোচনার মাধ্যমে ২০১০ সালের ১৪ এপ্রিল ইসলামী শরীয়তের বিধান মোতাবেক ৬ লক্ষ টাকা করে ২ জনে ১২ লক্ষ টাকা মোহরানা সাব্যস্থক্রমে রেজিষ্টারী কাবিননামামূলে আমার সাথে রুমি বেগম ও মো. মাছুম আহমদের সাথে সীমা বেগমের একই দিনে একই কমিউনিটি সেন্টারে বিয়ে সম্পন্ন হয়। স্বর্ণালংকার, কাপড়-চোপড়, কসমেটিকস ইত্যাদিসহ বাজার করার জন্য আব্দুল মন্নান ও নেওয়ারুন নেছা আমাদের উভয় পরিবারের নিকট হতে আরও ২০ লাখ টাকা নেন এবং কাবিনের ১২ লাখ টাকা নেন।’
শাহজাহান আহমদ বলেন, ‘বিয়ের কিছুদিন অতিবাহিত করার পর আমার শ্বশুড় আব্দুল মন্নান ও শ্বাশুড়ী নেওয়ারুন নেছা আমার স্ত্রী রুমি বেগমকে এবং মো. মাছুম আহমদের স্ত্রী সীমা বেগমকে লন্ডনে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি গ্রহণ করে জানান যে, বর্তমানে বৃটিশ আইন অনুয়ায়ী স্বামীকে ইংল্যান্ডে নিতে হলে মেয়েরা চাকরি করতে হবে এবং তার ব্যাংক একাউন্টে ১৮ হাজার পাউন্ড অর্থাৎ বাংলাদেশী ২০ লাখ টাকা জমা দেখাতে হবে। আমরা সরল বিশ্বাসে ঋণ আত্মীয়দের উপস্থিতিতে ২০১০ সালের ১৫ আগস্ট আব্দুল মন্নানের বসত ঘরে তার তার নিকট ২০ লাখ টাকা প্রদান করি।
তিনি বলেন, এরপর আব্দুল মন্নান ও নেওয়ারুন নেছা ইংল্যান্ডে চলে যান এবং প্রায় এক বছর পর তাদের মেয়ে রুমি বেগম ও সীমা বেগম লন্ডনে চলে যান। লন্ডনে যাওয়ার পর কিছুদিন আমাদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করলেও এক পর্যায়ে তারা আমাদের সাথে যোগাযোগ বিছিন্ন করে ফেলে। একপর্যায়ে আমার লন্ডন প্রবাসী আরেক চাচা কুদ্দুছ আলী ও ফুফু আখলুছ বিবির মাধ্যমে জানতে পারি যে, আব্দুল মন্নান ও নেওয়ারুন নেছা অন্যায়ভাবে প্রতারণা ও অর্থ লাভের উদ্দেশ্যে তালাক না দিয়েই আমার স্ত্রী রুমি বেগম ও মো. মাছুম আহমদের স্ত্রী সীমা বেগমকে লন্ডন প্রবাসী অন্য ২ ছেলের সঙ্গে বিয়ে দিয়ে দেন। পরবর্তীতে ২০১৭ সালের জানুয়ারী মাসে আব্দুল মন্নান ও নেওয়ারুন নেছা দেশে আসলে এক গ্রাম্য সালিশ বৈঠক হয় এবং ওই সালিশ বৈঠকে তারা আমাদের বিয়েসহ টাকা লেনদেন সবকিছুই অস্বীকার করেন।”
তিনি বলেন, ‘এ ঘটনার পর আব্দুল মন্নান, নেওয়ারুন নেছা ও আমার স্ত্রী রুমি বেগমকে আসামি করে প্রতারণার অভিযোগ এনে আদালতে মামলা করা হয়। যান নম্বর সিআর ২৩ (২২/০১/২০১৭)। আদালত আব্দুল মন্নানকে ৩ বছরের সশ্রম কারাদন্ড ৫ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরো ১ মাসের কারাদন্ড প্রদান করেন। পরে আব্দুল মন্নান সিলেটের জেলা জজ আদালত থেকে জামিনে নিয়ে আমি এবং আমার পরিবারের লোকজনকে বিভিন্ন মিথ্যা মামলায় জড়ানোসহ প্রাণনাশের হুমকি দিলে আমি এ ঘটনায় বিশ্বনাথ থানায় গত ১৪ জুলাই নিজের ও পরিবারের নিরাপত্তা চেয়ে একটি সাধারণ ডায়েরি করি।’ তিনি প্রতারক আব্দুল মন্নানের কাছে ক্ষতিপূরণ দাবি করে প্রতারক ও পরধনলোভীদের বিরুদ্ধে যথাযত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পুলিশ, র্যাবসহ সংশ্লিষ্টদের হস্তক্ষেপ কামনা করেন। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন মাছুম আহমদ, হান্নান মিয়া, আহাদ মিয়া, শামীম আহমদ, সুমন আহমদ, সাইফুল ইসলাম, মখবুল আলী, শাহীন মিয়া, নূর ইসলাম, জাবের, ফরহাদ মিয়া, সাজেদ মিয়া, রুমেল খান ও জয়নাল মিয়া।