সিলেটে অননুমোদিতভাবে নাটক-টিকটক-গানের শ্যুটিং, তদারকি নেই প্রশাসনের
টাইম সিলেট ডট কম
প্রকাশিত হয়েছে : ১০:৪১:১১,অপরাহ্ন ১২ জুন ২০২১ | সংবাদটি ৩৩৪ বার পঠিত
বিশেষ প্রতিবেদক
সিলেটে প্রশাসনের তদারকি না থাকায় করোনার মধ্যেও ওসমানীনগর, দক্ষিণ সুরমা ও শাহপরান খাদিমপাড়া এলাকায় চলছে অননুমোদিতভাবে নাটক, টিকটক, লাইকি এবং গানের শ্যুটিং। সিলেটে করোনা কালে সরকার সবকিছুতেই বিধি নিষেধ জারী করলেও প্রশাসন এই অননুমোদিত ইউটিউব, টিকটক, লাইকি ও ফেসবুকভিত্তিক চ্যানেলের শ্যুটিং বন্ধ করেনি!
এসব শ্যুটিংয়ে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার কথিত অভিনেতা অভিনেত্রীরা জড়ো হলে যেমন স্বাস্থ্য বিধি উপেক্ষিত হচ্ছে ঠিক তেমনি বহিরাগত এ সকল শিল্পীরা শ্যুটিং শেষে সিলেট নগরীরসহ আশপাশের উপজেলায় ঘুরে বেড়ানোর কারণে করোনা ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা বাড়ছে। এছাড়া সামাজিক অবক্ষয়তো বাড়ছেই। অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় প্রশাসনের বিরুদ্ধেও। ঢাকঢোল পিটিয়ে শ্যুটিং হলেও পুলিশসহ স্থানীয় প্রশাসন এ ব্যাপারে কোনো প্রদক্ষেপ নিচ্ছে না। নাকি তারা জানেন না, সিলেটের ওসমানীনগরের করুয়া, দক্ষিণ সুরমা মোগলাবাজারের সিলাম ও শাহপরান থানা এলাকার খাদিমপাড়ায় নিয়মিত এসব অননুমোদিত ইউটিউব ও ফেসবুকভিত্তিক চ্যানেলের শ্যুটিং চলার কথা।
সরকারের নীতিমালা কিংবা স্থানীয় প্রশাসনের কোনো অনুমোদন না নিয়েই চলছে এ সকল কথিত ভাঁড়ামির নাটক। বিকৃত শরীরি আচরণ, কটাক্ষ, ইভটিজিংকে প্রাধান্য দিয়ে তৈরি এই নাটক নৈতিক অবক্ষয়ের দিকে ঠেলে দিচ্ছে যুব সমাজকে।
মরা জিতায় কারবার, আগা মোটা, ঘুমও বিয়া অইছে, ফুয়ায় বাফ ঢাকেনা, বিয়াতি ইডিওট, আগা তুমার-গুড়ি আমার, ভাতিজা আবুল হাসেম, বেন্দা ইডিওট, ঢিলা হাসিম, বুড়ির লগে পুরি গেলো, জুতা, ধান্দার বেরেইন, ফেরতনি, কিতা লাটা লাগলো, জাগাত মার্ডার, রাইতকুর কামলা, একি অঙ্গে কতো রুপ, ইংলিশে প্রেম করা লাগে, তিলিছ মাতর টুকরা, কটাই মিয়া কেনে রিকশা ড্রাইভার, মাউগা, ভাইর দরজা খোলা, রাইতুর মেহমান, মহিলা প্রবেশ নিষেধ, খেট-খেটা মদরিছ, বউ আটকি গেছে, ফিছলা মুসল্লী, নটি বাড়ি, মাঝর বেন্দা, রোজায় ধরিলিছে, বাঁশ ফাতাইর, ফাটা বাঁশ, ও ফুরি তর নাম কিতা, তোমার বউ সুন্দর, ইজ্জত লুটি লা। ভাঁড়ামির এসকল নাটকের নাম শুনলে অনেকেই লজ্জা পেয়ে যান। আবার একশ্রেণীর লোকেরা এসব পছন্দও করেন!
জানা গেছে, ইউটিউব ও ফেসবুক ভিত্তিক এসকল নাটকে ধর্ম অবমাননা, দাঁড়ি, টুপি নিয়ে ভাঁড়ামির অভিযোগ দীর্ঘদিনের। এক শ্রেণির বখাটে নানা ধরনের অসামাজিক কার্যকলাপকে ঢেকে রাখতে নাটকের শ্যুটিংয়ের আয়োজন করে থাকে। এ সকল কথিত শ্যুটিংয়ে অবাধে মাদক আদান-প্রদান ও গ্রহণের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। এমনকি ধর্ষনেরও অভিযোগ রয়েছে। ধর্ষণের ঘটনার ভিডিও ধারণ করে এবং ওই ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেয়া হচ্ছে।
সামাজিক অবক্ষয়ের উদাহরণ সিলেটের বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে রায়হান হত্যাকান্ড। নির্যাতনকারী এসআই আকবর হোসেন ভূইয়া এ ধরনের নাটকের নিয়মিত অভিনেতা ছিলেন। এছাড়াও গেলো ক’দিন হল সিলেট নগরীর লামাপাড়ায় ‘টিকটক ও লাইকী’র শ্যুটিংয়ের কথা বলে বিশ্বনাথের এক তরুণীকে রাতভর ধর্ষণ করা হয়। এ ঘটনায় মামলাও হয়েছে ফিন্নি নামের শিবগঞ্জ লামাপাড়া মোহিনী ৮৩-এ বাসার বাসিন্দা। সর্বশেষ গত ২২ এপ্রিল সিলেটে গানের কথা বলে এক বাউল শিল্পী ঢাকা থেকে এনে ধর্ষণ করা হয়। ওই ঘটনায় সিলেটের দক্ষিণ সুরমার ধরাধরপুর এলাকার বাসিন্দা বাবুল মিয়া নামে এক যুবকের ঢাকার বাউল শিল্পী থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। এছাড়া শ্যুটিংয়ের নামে অসামাজিক কার্যকলাপের অভিযোগে সিলেটের নগরীর আলুরতল এলাকার থেকে অনুমোদন না থাকায় ২০০৪ সালে ৮ নারী পুরুষকে আটক করে তৎকালীন কোতোয়ালি থানা পুলিশ।
সূত্র জানায়, সিলেটের আঞ্চলিক নাটকের বিতর্কিত অভিনেতা রাসেল হামিদ ওরফে কাট্টুস আলী, আল্লাহকে নিয়ে বিতর্কিত বক্তব্য উপস্থাপনকারী সাহেদ মোশাররফ ওরফে কটাই মিয়া, খাদিমপাড়ার আকরাম দেশের বিভিন্ন এলাকার কথিত অভিনেতা অভিনেত্রী ও মডেল সিলেটে নিয়ে এসে করোনাকালে ওসমানীনগরের কুরুয়া মহানগর পাম্পের পেছনের বাড়িতে, দক্ষিণ সুরমার সিলামে এবং শাহপরান থানা এলাকার খাদিমপাড়ায় নিয়মিত শ্যুটিং করে যাচ্ছেন।
করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে সরকার স্বাস্থ্য বিধির উপর জোর দিলেও সিলেটের কথিত এ সকল মিডিয়া হাউজ মানছে না কোনো নির্দেশনা। আর পুলিশসহ স্থানীয় প্রশাসনও অননুমোদিত এই শ্যুটিং সম্পর্কে কোনো খবরও রাখছেন না।
সিলেটের ওসমানীনগরের কুরুয়া মহানগর পাম্পের পেছনের বাড়িতে শুটিংয়ে বিষয়ে সিলেটের ওসমানীনগর থানার ওসি শ্যামল বনিক বলেন, এ ধরনের খবর জানেন না। তবে অননুমোদিত শ্যুটিং চললে তা বন্ধ করে দেওয়া হবে।
কপি সিলেট লাইভ নিউজ