দেশে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত বন্দির সংখ্যা ২১৬২ জন
টাইম সিলেট ডট কম
প্রকাশিত হয়েছে : ১২:৩৫:১১,অপরাহ্ন ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ | সংবাদটি ১৩৩ বার পঠিতদেশের কারাগারগুলোর কনডেম সেলে থাকা মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত বন্দির সংখ্যা ২১৬২ জন। যার মধ্যে পুরুষ বন্দি ২০৯৯ জন ও নারী বন্দি ৬৩ জন। কনডেম সেলে থাকা মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত বন্দির সংখ্যা জানতে চেয়ে হাইকোর্টে কারা মহাপরিদর্শকের পক্ষে অতিরিক্ত কারা মহাপরিদর্শক শেখ সুজাউর রহমানের দেয়া প্রতিবেদনে এই তথ্য পাওয়া গেছে। গতকাল বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের হাইকোর্ট বেঞ্চ একটি মৃত্যু সেলের ভিতরে কি কি ব্যবস্থাপনা আছে, সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য চেয়ে রিপোর্ট দিতে বলেছেন। একইসঙ্গে পরবর্তী আদেশের জন্য ৪ঠা এপ্রিল দিন রেখেছেন বলে জানিয়েছেন রিটকারীদের আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। গত বছরের ১লা নভেম্বর পর্যন্ত তৈরি করা এ প্রতিবেদন বন্দিদের সুযোগ-সুবিধা বিষয়ে বলা হয়েছে, কনডেম সেলের বন্দিদের কারা বিধি মোতাবেক নির্ধারিত ডায়েটে স্কেল অনুযায়ী খাদ্য প্রদান ও নির্ধারিত পোশাক প্রদানের পাশাপাশি নিয়মিত চিকিৎসা প্রদান করা হয়। এ ছাড়া কারা বিধি মোতাবেক আত্মীয়স্বজন ও আইনজীবীদের সঙ্গে সাক্ষাতের ব্যবস্থা করা হয়। সেইসঙ্গে ধর্মীয় শিক্ষা এবং বই পড়ার সুযোগ দেয়া হয়। আর ধূমপায়ীদের বিড়ি সিগারেট প্রদান করা হয়। এ ছাড়া বন্দিদের সেল সংলগ্ন আঙিনায় গোসল ও শরীর চর্চার সুযোগ দেয়া হয় এবং আপিল দায়ের সংক্রান্ত কার্যক্রম সম্পাদনে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের জন্য সেলের সংখ্যা মোট ২ হাজার ৬৫৭টি। এর মধ্যে পুরুষের জন্য ২ হাজার ৫১২টি। আর মহিলাদের জন্য ১৪৫টি। মোট ২ হাজার ৬৫৭টি সেলের মধ্যে বন্দি রয়েছে ২ হাজার ১৬২ জন। মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত পুরুষ বন্দির সংখ্যা ২ হাজার ৯৯ এবং মহিলা রয়েছে ৬৩ জন। এর মধ্যে ঢাকা বিভাগে সর্বোচ্চ সেল রয়েছে। এক হাজার ৭৮৪টি সেলের মধ্যে এ বিভাগে মোট বন্দি রয়েছে এক হাজার ২৯৫ জন। আর সর্বনিম্ন সেল রয়েছে ময়মনসিংহ বিভাগে। ওই বিভাগে ৫৪টি সেলের মধ্যে মোট বন্দি রয়েছে মাত্র পাঁচ জন। সেখানে কোনো মহিলা বন্দি নেই। কারাগারের মধ্যে সর্বোচ্চ সেল রয়েছে হাইসিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারে। সেখানে এক হাজার সেলের মধ্যে রয়েছে ৯৫১ জন বন্দি। তবে টাঙ্গাইল, গাজীপুর, রাজবাড়ী, মাদারীপুর, শরীয়তপুর, জামালপুর, নেত্রকোনা, শেরপুর, সিরাজগঞ্জ, জয়পুরহাট, নীলফামারী, লালমনিরহাট, পঞ্চগড়, খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি, বান্দরবান, মৌলভীবাজার, সুনামগঞ্জ, মাগুরা, মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা, পটুয়াখালী, ভোলা ও ঝালকাঠিতে সেল থাকলেও কোনো বন্দি নেই। আর সেল নেই ঠাকুরগাঁও এবং কুড়িগ্রাম জেলায়। ২০২১ সালের ২রা সেপ্টেম্বর মৃত্যুদণ্ডাদেশ চূড়ান্ত হওয়ার আগে কনডেম সেলে রাখার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করেন ৩ কয়েদি। আদালতে রিট আবেদনটি করেন চট্টগ্রাম কারাগারের কনডেম সেলে থাকা সাতকানিয়ার জিল্লুর রহমান, সিলেট কারাগারে থাকা সুনামগঞ্জের আব্দুল বশির ও কুমিল্লা কারাগারে থাকা খাগড়াছড়ির শাহ আলম। পরে দেশের সব কারাগারে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত বন্দি ও কনডেম সেলের সংখ্যাসহ কনডেম সেলের সুযোগ-সুবিধা সংক্রান্ত প্রতিবেদন দিতে বলেন হাইকোর্ট। রিটের পর আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির জানিয়েছিলেন, বিচারিক আদালতে মৃত্যুদণ্ডাদেশ ঘোষণার পর তাৎক্ষণিক সাজা কার্যকর করার আইনগত কোনো বিধান নেই। মৃত্যুদণ্ডাদেশ কার্যকর করতে কয়েকটি আবশ্যকীয় আইনগত ধাপ অতিক্রম করতে হয়। প্রথমত, ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৭৪ ধারামতে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে হাইকোর্ট বিভাগের অনুমোদন নিতে হবে। একইসঙ্গে ফৌজদারি কার্যবিধির ৪১০ ধারা অনুযায়ী হাইকোর্ট বিভাগে আপিল দায়েরের বিধান রয়েছে। দ্বিতীয়ত, হাইকোর্ট বিভাগ মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখলে সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তি সাংবিধানিক অধিকার বলে আপিল বিভাগে সরাসরি আপিল করতে পারেন। তৃতীয়ত, সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১০৫ অনুযায়ী আপিলের রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ আবেদনের আইনগত সুযোগ রয়েছে। সর্বোপরি মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৪৯ এর অধীন রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাইতে পারেন। রাষ্ট্রপতি উক্ত ক্ষমার আবেদন নামঞ্জুর করলে তখন মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার আইনগত বৈধতা লাভ করে। কিন্তু বাংলাদেশে বিচারিক আদালতে মৃত্যুদণ্ড ঘোষণার পরই সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে নির্জন কনডেম সেলে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি হিসেবে বন্দি রাখা হয়। বিচারিক ও প্রশাসনিক ফোরামের মাধ্যমে মৃত্যুদণ্ডাদেশ চূড়ান্ত হওয়ার আগে দণ্ডিত ব্যক্তিকে কনডেম সেলে রাখার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট করেন মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত হয়ে কনডেম সেলে থাকা ৩ আসামি।