ওবামার প্রতি ট্রাম্পের ‘বিদ্বেষ’ পারমাণবিক চুক্তি প্রত্যাহারের কারণ!
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ১০:০৬:২৩,অপরাহ্ন ১৪ জুলাই ২০১৯ | সংবাদটি ৪৮৬ বার পঠিত
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার প্রতি ব্যক্তিগত ‘বিদ্বেষ’ থেকে বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানের সঙ্গে করা আন্তর্জাতিক পারমাণবিক চুক্তি থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করেছেন। ওয়াশিংটনে নিযুক্ত যুক্তরাজ্যের সাবেক রাষ্ট্রদূত স্যার কিম ডারোচের ফাঁস হওয়া তারবার্তায় এ বিদ্বেষের কথা জানা গেছে।
রাষ্ট্রদূত এর আগে ব্রিটিশ সরকারকে পাঠানো ইমেইল বার্তায় ট্রাম্প ও তার প্রশাসনকে ‘অদক্ষ’ ও ‘পুরোপুরি অকার্যকর’ হিসেবে বর্ণনা করেন। যেটি গত রবিবার ট্যাবলয়েড পত্রিকায় ডেইলি মেইলে ফাঁস হয়। আর এর জেরে তাকে পদত্যাগ করতে হয়। এরপরই যুক্তরাজ্যের মেট্রোপলিটন পুলিশ যে কোনো তথ্য প্রকাশের বিরুদ্ধে সতকর্তা জারি করে। তার মাঝেই আবার এ তথ্য প্রকাশিত হলো।
২০১৮ সালে যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বোরিস জনসন যুক্তরাষ্ট্রকে ইরানের সাথে পারমাণবিক চুক্তি থেকে নিজেদের প্রত্যাহার না করতে অনুরোধ করেছিলেন। পরে রাষ্ট্রদূত এক তারবার্তায় পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে জানান, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ‘ব্যক্তিগত কারণে’ পারমাণবিক চুক্তি থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করেছেন।
ফাঁস হওয়া মেমোতে রাষ্ট্রদূত লিখেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের পরামর্শদাতাদের মাঝে মতভেদ রয়েছে। পারমাণবিক চুক্তি থেকে নিজেদের কীভাবে প্রত্যাহার করবে, এ বিষয়ে হোয়াইট হাউজের কৌশলগত কোন পরিকল্পনা নেই।
রাষ্ট্রদূত আরো লিখেন, ‘হোয়াইট হাউজের স্ববিরোধিতার সচিত্র ফুটে ওঠেছে। আপনি (পররাষ্ট্রমন্ত্রী বোরিস জনসন) অসাধারণ প্রবেশাধিকারের সুযোগ পাচ্ছেন, কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, ট্রাম্প প্রশাসন কূটনৈতিক ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডের ওপর রয়েছে। আপাতদৃষ্টিতে তা আদর্শগত এবং ব্যক্তিগত। কারণ তা ওবামার চুক্তি ছিল।’
‘সর্বোপরি, প্রশাসন প্রতিদিনের কৌশল সুস্পষ্ট করতে পারছে না। আজ সকালে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তাদের অংশীদার, মিত্র ও অন্যান্যদের সাথে যোগাযোগের কোন পরিকল্পনা নেই।’
ইরানের বিরুদ্ধে আমেরিকা, ইসরায়েল ও তাদের কিছু আরব মিত্রের অভিযোগ রয়েছে, ইরান গোপনে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির উদ্দেশ্যে ইউরেনিয়াম উৎপাদন করছে। কারণ পারমাণবিক চুল্লীর জ্বালানি হিসেবে ইউরেনিয়ামের ব্যবহারের পাশাপাশি এটি দিয়ে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরিও সম্ভব। গত কয়েক বছর দেশটি তার পরমাণু কর্মসূচি বৃদ্ধি করায় পারমাণবিক শক্তিধর রাষ্ট্রগুলোর মাঝে উত্তেজনা বাড়তে থাকে।
২০১৫ সালে ইরান বিশ্বের ছয়টি পরাশক্তির সাথে পরমাণু সংক্রান্ত একটি দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি করে। পি ফাইভ প্লাস ওয়ান ভুক্ত দেশ যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, জার্মানি, চীন ও রাশিয়া চুক্তির অংশীদার ছিল।
চুক্তির পর ইরান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ প্রক্রিয়া থেকে সরে আসে। চুক্তির শর্ত অনুযায়ী ইরান সংবেদনশীল পরমাণু কর্মকাণ্ড সীমিত করতে রাজি হয়। দেশটির ওপর থেকে অর্থনৈতিক অবরোধ তুলে নেওয়ার শর্তে আন্তর্জাতিক পরিদর্শকদের পরমাণু কর্মকাণ্ড পরিদর্শনের অনুমতি দেয়। ইরান ইউরেনিয়ামের পরিমাণ ৯৮ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩শ কেজিতে নামিয়ে আনার অঙ্গীকার করে।
তখন যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতায় বারাক ওবামা প্রশাসন ছিল। তারা প্রচণ্ড আত্মবিশ্বাসী ছিল যে, ইরান কোন ধরনের গোপন পারমাণবিক কর্মকাণ্ড পরিচালিত করবে না।
কিন্তু গত বছর ট্রাম্প প্রশাসন ইরানের সাথে পারমাণবিক চুক্তি থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে। ইরানের ওপর পুনরায় পারমাণবিক ও অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। তখন ট্রাম্প বলেন, ‘ইরানের সাথে পারমাণবিক চুক্তি করা সঠিক হয়নি।’ ইরানের সাথে পারমাণবিক চুক্তিকে আমেরিকার অধিবাসী হিসেবে তাঁর জন্য ‘বিব্রতকর’ বলেও মন্তব্য করেন।
তিনি পারমাণবিক চুক্তিকে ‘ত্রুটিপূর্ণ’ ও ‘একপেশে’ হিসেবে বর্ণনা করেছিলেন। এ চুক্তির মাধ্যমে ইরানের পারমাণবিক সক্ষমতা অর্জন থামানো যাবে না বলেও অভিযোগ করেছিলেন।