পাসপোর্ট জমা রাখার শর্তে বিএনএইচ গ্রুপের চেয়ারম্যান বুলুর জামিন

আইন-আদালত ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ৬:৪০:৩১,অপরাহ্ন ১৫ জুলাই ২০১৯ | সংবাদটি ৬২৯ বার পঠিত
এম এন এইচ বুলুর পাসপোর্ট আদালতে জমা রাখার শর্তে তিন মাসের জামিন মঞ্জুর করে আদেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে, ছয় মাসের মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট জমা দেয়ার জন্য দুদককে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
আদেশের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিন উদ্দিন মানিক।
এ সংক্রান্ত আবেদনের শুনানি নিয়ে সোমবার হাইকোর্টের বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কে এম হাফিজুল আলমের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এই আদেশ দেন।
আদালতে আসামি পক্ষে শুনানি করেন সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ, অ্যাডভোকেট এএম আমিন উদ্দিন ও ব্যারিস্টার মাহবুব শফিক। অন্যদিকে, দুদকের পক্ষে ছিলেন মো. খুরশিদ আলম খান ও রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিন উদ্দিন মানিক।
এর আগে ২০১৮ সালের ১৪ অক্টোবর ছয় মাসের জামিন মঞ্জুর করেন হাইকোর্ট। জামিনের মেয়াদ শেষে তিনি মহানগর দায়রা আদালতে আত্মসমর্পণ করতে গেলে গত ৯ জুলাই তার জামিন আবেদন না মঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। সেই আদেশের বিরুদ্ধে তিনি হাইকোর্টে জামিন আবেদন করেন। জামিন আবেদন শুনানি নিয়ে এই আদেশ দেন আদালত।
প্রসঙ্গ: একশ নয় কোটি ১৭ লাখ ৫৬ হাজার নয়শ ৮১ টাকা মূল্যমানের সম্পদের তথ্য গোপন এবং ২৪ কোটি ৭৮ লাখ ৬৬ হাজার ৬২২ টাকা মূল্যের জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করে তা ভোগ দখলের অভিযোগে বিএনএস গ্রুপের চেয়ারম্যান এম এন এইচ বুলুর বিরুদ্ধে মামলা করেন দুদক। ২০১৮ সালের ৭ অক্টোবর রাজধানীর রমনা থানায় দুদকের উপ-পরিচালক ওয়াকিল আহমদ বাদী হয়ে মামলাটি করেন।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, দুদকের তলবের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৬ সালের ২০ এপ্রিল সম্পদবিবরণী দাখিল করেন এম এন এইচ বুলু। দাখিল করা সম্পদবিবরণীতে তিনি ২৫৭ কোটি ৮০ লাখ ৬১ হাজার ৮৪৬ টাকার স্থাবর সম্পদ, ৬০ কোটি ৩৩ লাখ ৭৭ হাজার ৫ টাকার অস্থাবর সম্পদসহ মোট ৩১৮ কোটি ১৪ লাখ ৩৮ হাজার ৮৫১ টাকার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ উল্লেখ করেছেন। এছাড়া তিনি ৩৬৯ কোটি ৭০ লাখ ১৫ হাজার ১৫৭ টাকা দায়-দেনা রয়েছে বলে তথ্য জমা দেন।
দুদকে জমা দেয়া তথ্য যাচাইয়ে বুলুর নামে ২৫৭ কোটি ৮০ লাখ ৬১ হাজার ৮৪৬ টাকা মূল্যের স্থাবর সম্পদ পাওয়া যায়।
এ অস্থাবর সম্পদ যাচাইয়ে বিভিন্ন কোম্পানির কেনা শেয়ারের মূল্য ৩৩ কোটি ৩০ লাখ ৭৫ হাজার ৮২৭ টাকা, ক্রয়কৃত বিভিন্ন অস্থাবর সম্পদের মূল্য দুই কোটি ৬৩ লাখ ৩৫ হাজার ৬৭৮ টাকা, ক্রয়কৃত বিভিন্ন স্থাবর সম্পদের মূল্য ২৫৭ কোটি ৮০ লাখ ৬১ হাজার ৮৪৬ টাকা, তার নিজ নামে এবং মালিকানাধীন আলিফ এন্টারপ্রাইজ, বি এন এস ইন্টারন্যাশনাল, বুলু ইন্টারন্যাশনাল, নওশিন ভিনাইল ইন্ড্রাস্ট্রিজ, ওইশী ইন্টারন্যাশনাল, বস পিভিসি ভিনাইল, শাফকাত পিভিসি সোল ইন্ড্রাস্ট্রিজ প্রতিষ্ঠানগুলোর হিসাবে ব্যাংক সমাপনী উদ্ধৃত্ত ২৪ কোটি ৩৯ লাখ ৬৫ হাজার ৫শ টাকা এবং বর্ণিত ব্যাংক সমাপনী উদ্ধৃত্ত ২৪ কোটি ৩৯ লাখ ৬৫ হাজার ৫শ টাকা এবং সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর দায়-দেনা ৩৬৯ কোটি ৭০ লাখ ১৫ হাজার ১৫৮ টাকা সম্পদবিবরণীতে প্রদর্শন করেন।
এছাড়া যাচাইয়ে রেকর্ডপত্র পর্যালোচনা, অভিযুক্ত ব্যক্তির বক্তব্য এবং আয়কর নথির প্রদর্শন অনুযায়ী, অভিযুক্ত ব্যক্তির নিজ ও নিজ নামীয় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে ৩৬৯ কোটি ৭০ লাখ ১৫ হাজার ১৫৭ টাকার গ্রহণযোগ্য দায়-দেনা পাওয়া যায়। ফলে অভিযুক্ত ব্যক্তি এম এন এইচ বুলুর আয় ও দায়-দেনা একত্রে ৪২০ কোটি ১১ লাখ ৯৬ হাজার ৭৪৮ টাকা ৯৯ পয়সা।
অন্যদিকে মোট সম্পদ ও খরচ একত্রে ৪৪৪ কোটি ৯০ লাখ ৬৩ হাজার ৩৭১ টাকা পাওয়া যায়। ফলে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদের মূল্য চব্বিশ কোটি ৭৮ লাখ ৬৬ হাজার ৬২২ টাকা ৮ পয়সা পাওয়া যায়।
দুদকে দাখিল করা সম্পদবিবরণীতে সম্পদের তথ্য গোপন এবং জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করে তা ভোগ দখলে রাখার অভিযোগে মামলা করা হয়।