পশ্চিমবঙ্গের নাম পরিবর্তনে বাংলাদেশের সঙ্গে ‘কূটনৈতিক বিভ্রান্তি’ দেখছে দিল্লি

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ৮:৫৩:৩২,অপরাহ্ন ২৬ জুলাই ২০১৯ | সংবাদটি ৪৫৪ বার পঠিত
ভারতের পশ্চিমবঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূল সরকার রাজ্যের নাম বদলে ‘বাংলা’ করার প্রস্তাব দিলেও সে দেশের কেন্দ্রীয় সরকার এই পরিবর্তনে সায় দিচ্ছে না।
দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকার মনে করছে, পশ্চিমবঙ্গের নাম পাল্টে বাংলা রাখা হলে প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশের নামের সঙ্গে তা অনেক জায়গায় বিভ্রাট সৃষ্টি করতে পারে। আর অযথা এই ‘ডিপ্লোম্যাটিক কনফিউশন’ বা কূটনৈতিক বিভ্রান্তি এড়ানোর জন্যই তারা রাজ্যের নাম পরিবর্তনের পক্ষপাতী নন।
গতকাল বুধবার তৃণমূল কংগ্রেসের এমপিদের একটি প্রতিনিধিদল এই নাম পরিবর্তনের দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী মোদির সঙ্গে দিল্লির পার্লামেন্ট ভবনে দেখা করেছিলেন। কিন্তু বাংলা ট্রিবিউন জানতে পেরেছে, প্রধানমন্ত্রী সেখানে তাদের মোটামুটি স্পষ্ট করেই বুঝিয়ে দিয়েছেন তিনি চাইছেন না পশ্চিমবঙ্গের নাম বদল করা হোক।
পশ্চিমবঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার অবশ্য প্রায় বছর তিনেক আগেই রাজ্যের নাম পাল্টে ‘বাংলা’ করার জন্য একটি প্রস্তাব বিধানসভায় পাস করিয়ে রেখেছে।
কিন্তু, ভারতের যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় কোনও রাজ্যের নিজে থেকে তাদের নাম পাল্টানোর ক্ষমতা নেই, দেশের পার্লামেন্টে অন্তত দুই-তৃতীয়াংশ গরিষ্ঠতা নিয়ে সেই প্রস্তাব গৃহীত হলেই কেবল সেই পরিবর্তন কার্যকর হবে। কিন্তু, পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার নিয়মমাফিক সেই প্রস্তাব বহুদিন আগে দিল্লিতে পাঠানোর পরও কেন্দ্রীয় সরকার তা নিয়ে এখনও এক পা-ও এগোয়নি।
সে ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীকে তাগাদা দিতেই বুধবার লোকসভায় তৃণমূলের দলনেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে তৃণমূলের এমপিরা নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন। প্রতিনিধিদলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাইপো তথা ডায়মন্ড হারবার আসনের এমপি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নিজেও ছিলেন। কিন্তু তারপরেও প্রধানমন্ত্রীর কথায় তৃণমূলের এমপিদের কার্যত নিরাশ হয়েই ফিরতে হয়েছে।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি উচ্চপদস্থ সূত্র বলছে, ‘ভারতের একটি অঙ্গরাজ্যের নাম যদি হয় বাংলা, আর তার লাগোয়া প্রতিবেশী দেশের নাম বাংলাদেশ–তাহলে আন্তর্জাতিক পরিসরে বহু ক্ষেত্রেই তা অযথা বিভ্রান্তি সৃষ্টি করবে বলেই আমাদের ধারণা। আর এটা অনায়াসেই এড়ানো সম্ভব যদি রাজ্যটার নাম পশ্চিমবঙ্গই থাকে।’
ভারতের শাসক দল বিজেপির সহ-সভাপতি ও সিনিয়র এমপি বিনয় সহস্রবুদ্ধও মনে করেন, ‘পশ্চিমবঙ্গ নামটার মধ্যে দেশভাগের করুণ ইতিহাসের একটা প্রতিফলন আছে।’
তিনি এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘পশ্চিম শব্দটাই বলে দেয় এটা কোনও অখণ্ড বাংলা নয় – আজ এত বছর বাদে সেটা মুছে ফেলে আমরা অযথা কেন ইতিহাসকে অস্বীকার করতে যাবো? তাই আমার মতে পশ্চিমবঙ্গ নামটাই থাকা উচিত।’
সুতরাং ক্ষমতাসীন বিজেপি বা কেন্দ্রে তাদের সরকারের মনোভাব খুব পরিষ্কার, পশ্চিমবঙ্গের নাম পাল্টে বাংলা করার কোনও প্রয়োজনই নেই। তাছাড়া এই ধরনের পদক্ষেপ নিলে বাংলাদেশের নামের সঙ্গেও অযথা বিভ্রান্তির অবকাশ থেকে যাবে।
তৃণমূল কংগ্রেস অবশ্য প্রকাশ্যে এখনও স্বীকার করছে না যে প্রধানমন্ত্রী মোদি রাজ্যের নাম পরিবর্তনের দাবি নাকচ করে দিয়েছেন।
বুধবার দলের যে এমপিরা প্রধানমন্ত্রী মোদির সঙ্গে দেখা করেছেন তাদের মধ্যে ছিলেন দলের অন্যতম মুখপাত্র ও তিন টার্মের এমপি কাকলি ঘোষ দস্তিদার। ‘প্রধানমন্ত্রী মোদি রাজ্যের নাম বাংলা করার প্রস্তাব পুরোপুরি খারিজ করে দিয়েছেন বিষয়টা কিন্তু সে রকম নয়।’
‘আমরা ওনাকে মনে করিয়ে দিয়েছি রাজ্যের পাঠানো এই প্রস্তাবটা বহুদিন ধরে পড়ে আছে, এটা নিয়ে দিল্লির দ্রুত পদক্ষেপ করা প্রয়োজন। তিনি বিষয়টা দেখবেন বলে কথা দিয়েছেন,’ আরও জানান তিনি।
বাংলা ট্রিবিউন