সৌদি আরবের মামলা: মার্কিন গোপন সন্ত্রাস বিরোধী অপারেশন প্রকাশ হওয়ার আশঙ্কা
টাইম সিলেট ডট কম
প্রকাশিত হয়েছে : ৩:১৭:১৩,অপরাহ্ন ১১ জুলাই ২০২১ | সংবাদটি ৫১৪ বার পঠিতসাবেক গোয়েন্দা কর্মকর্তা সাদ আল সাবরির বিরুদ্ধে সৌদি আরবের দুটি মামলা থেকে যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের গোপন সন্ত্রাস বিরোধী অপারেশনের তথ্য প্রকাশ হয়ে পড়তে পারে। ফলে ওয়াশিংটন বিচার বিভাগে হস্তক্ষেপ করতে পারে। যদি তা হয় তাহলে ওয়াশিংটনের জন্য তা হবে বিরল ঘটনা। উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের সঙ্গে দীর্ঘদিন ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করেছেন সৌদি আরবের সাবেক স্পাইমাস্টার হিসেবে পরিচিত গোয়েন্দা কর্মকর্তা সাদ আল জাবরি। এ সময় যুক্তরাষ্ট্র গোপনে সন্ত্রাসবাদ বিরোধী অপারেশন চালায়। সাদ আল জাবরির বিরুদ্ধে সৌদি আরবের রাষ্ট্র মালিকানাধীন কোম্পানি যুক্তরাষ্ট্রে এবং কানাডার আদালতে দুর্নীতির অভিযোগে মামলা করেছে। ক্ষমতাসীন ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান ও আল জাবরির মধ্যে বিরোধ চলছে দীর্ঘদিন। এটা হলো সেই বিরোধিতার সর্বশেষ পরিস্থিতি।
আল জাবরির পেছনে আছেন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন নায়েফ। ২০১৭ সালে প্রাসাদ ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে তাকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করার পর থেকেই মোহাম্মদ বিন নায়েফ আটক রয়েছেন। এখন নাটকীয় আইনি লড়াই সৌদি আরবের রাজ পরিবারের শীর্ষ স্তরে শেক্সপিয়ারিয়ান বিরোধিতায় পরিণত হয়েছে। কিন্তু ওয়াশিংটন আশঙ্কা করছে, আদালতে তিক্ততা খুব বেশি হলে তাতে তাদের গোপন যেসব সন্ত্রাস বিরোধী অভিযান চালিয়েছে তা প্রকাশিত হয়ে পড়ার ঝুঁকি আছে।
এপ্রিলে যুক্তরাষ্ট্রের আইন মন্ত্রণালয় ম্যাচাসুটেসের এক আদালতে একটি বিরল আবেদন করে। তাতে বলা হয়, জাতীয় নিরাপত্তামূলক কর্মকা-ের বিষয়ে উদ্বেগজনক এমন সব তথ্য দেয়ার অভিপ্রায় ছিল আল জাবরির। কিভাবে এই কর্মকা-ে অংশগ্রহণ হয়েছিল মার্কিন সরকার তা বিবেচনায় নিচ্ছে। যদি প্রয়োজন ও প্রযোজ্য হয় তাহলে সরকারি যথাযথ সুযোগ সুবিধার মধ্যে তা বিবেচনা করা হবে বলে ওই আবেদনে বলা হয়। তবে এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু বলা হয়নি।
এর এক মাস পরে দ্বিতীয় আরেকটি আবেদন করে আইন মন্ত্রণালয়। তাতে আদালতকে আরো সময় দেয়ার জন্য অনুরোধ করে মন্ত্রণালয়। আবেদনে আরো বলা হয়, আদালতকে গোপনে আরো তথ্য সরবরাহ করতে প্রস্তুত সরকার। আইনি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ওয়াশিংটন এক্ষেত্রে ‘স্টেট সিক্রেট প্রিভিলেজ’ সক্রিয় করতে পারে। এটা করা হলে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য ক্ষতিকর এমন তথ্য গোপন রাখতে বলা হবে আদালতকে। এ বিষয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে সিআইএ। মন্তব্য করেনি আইন মন্ত্রণালয়ও।
গত বছর আল জাবরি আরেক মামলায় বলেন যে, তাকে হত্যা করার জন্য মোহাম্মদ বিন সালমান ‘টাইগার স্কোয়াড’ পাঠিয়েছিলেন কানাডায়। বর্তমানে আল জাবরি বসবাস করেন কানাডায়। সেখান থেকে তাকে দেশে ফিরতে বাধ্য করার জন্য তার দুই সন্তানকে আটক করা হয়েছে।
রাজ পরিবারের এই বিরোধ এ বছর মার্চে নতুন রূপ নেয়। ওই সময় রাষ্ট্র পরিচালিত কোম্পানি সাকাব সৌদি হোল্ডিং আল জাবরির বিরুদ্ধে ৩৪৭ কোটি ডলার আত্মসাৎ করেছেন। তিনি যখন মোহাম্মদ বিন নায়েফের অধীনে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে কাজ করতেন তখন এই অর্থ আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে। এ মামলায় ম্যাচাচুসেটসের আদালতের প্রতি আহ্বান জানানো হয়, আল জাবরির বস্টনে থাকা ২ কোটি ৯০ লাখ ডলারেরে সম্পদ জব্দ করতে। একই অভিযোগে রাষ্ট্র মালিকানাধীন কয়েকটি কোম্পানি কানাডার টরোন্টোতে আল জাবরির বিরুদ্ধে মামলা করার কয়েক সপ্তাগ পরে এই মামলা করা হয়। কানাডার আদালত এরপর পরই বিশ্বজুড়ে আল জাবরির যে সম্পদ আছে তা জব্দ করার আদেশ দেয়।
তবে আর্থিক কোনো অনিয়মের অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন আল জাবরি। তার আইনজীবীদের টিম বলেছেন, মোহাম্মদ বিন সালমান এবং মোহাম্মদ বিন নায়েফের শত্রুতার শিকার হয়েছেন আল জাবরি। ২০২০ সালের মার্চের পর আর মোহাম্মদ বিন নায়েফকে দেখা যায়নি।
রাষ্ট্রপরিচালিত সাকাব কোম্পানির আদালতে দাখিল করা অভিযোগে বলা হয়েছে, এই কোম্পানিটি ২০০৮ সালে প্রতিষ্ঠা করেন মোহাম্মদ বিন নায়েফ। এই কোম্পানি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের ছদ্মবেশ ধারণকারী গোপনীয় নিরাপত্তা বিষয়ক অপারেশনে সহায়তা দেয়া হতো। তাকে এক্ষেত্রে নিরাপরাধ প্রমাণ করতে সাকাবের আর্থিক বিষয়ে তদন্ত করা উচিত আদালতের। তদন্ত হওয়া উচিত যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে অংশীদারিত্বের সঙ্গে কিভাবে আর্থিক স্পর্শকাতর কর্মসুচি পালিত হতো। সাদ আল জাবরির ঘনিষ্ঠ এক সূত্র বলেছেন, যে গোপন সন্ত্রাস বিরোধী প্রকল্পে মার্কিনিসহ হাজার হাজার মানুষের জীবন রক্ষা করেছে তা নিয়ে কখনও তথ্য প্রকাশ করতে চান না আল জাবরি। কিন্তু দুর্ভাগ্যাজনক হলো, মোহাম্মদ বিন সালমানের অন্ধ প্রতিশোদের শিকারে পরিণত হয়েছেন আল জাবরি। এর ফলে তাকে একপেশে করে ফেলা হয়েছে। ফলে তিনিও নিজের আত্মরক্ষার চেষ্টা করছেন।
কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের আইন মন্ত্রণালয় মনে করছে, কোনো তথ্য ফাঁস হওয়ার ক্ষেত্রে তারা ম্যাচাচুসেটসের আদালতের ওপর প্রভাব বিস্তার করে তা থামাতে পারবেন। কিন্তু টরোনোতে কিভাবে তা সামাল দেয়া যাবে তা পরিষ্কার নয়। আল জাবরির এক সূত্র স্বীকার করেছেন এসব তথ্য ফাঁস হয়ে গেলে তা বিপজ্জনক হতে পারে। বিশেষ করে যারা সন্ত্রাসবিরোধী অপারেশনে আছে। এতে সূত্র, পদ্ধতিসহ সব তথ্য বেরিয়ে যাবে। ফলে ভবিষ্যতে কাজ করা কঠিন হয়ে যাবে। যুক্তরাষ্ট্রে মোহাম্মদ বিন সালমানের প্রতিনিধিত্বকারী একজন আইনজীবী এ নিয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন।