সিলেটে বেশি পশুর হাট চায় নগর কর্তৃপক্ষ
টাইম সিলেট ডট কম
প্রকাশিত হয়েছে : ৩:৪৮:০১,অপরাহ্ন ১৪ জুলাই ২০২১ | সংবাদটি ৩৪৯ বার পঠিত
ওয়েছ খছরু, সিলেট থেকে, দৈনিক মানবজমিন ,মুখে বললেও শেষ মুহূর্তে এসে সিলেটের পশুর হাটে কোনো স্বাস্থ্যবিধিই মানা সম্ভব হয় না। গতবার করোনাকালীন সময়েও পশুর হাটে এমন চিত্র চোখে পড়েছে। বাজারের সীমানা ছাড়িয়ে হাটের বিস্তৃতি ঘটে অনেক দূর পর্যন্ত। ক্রেতা-বিক্রেতা মিলেমিশে একাকার হয়ে যান। আর বিশেষ করে সিলেটের হাটে করোনার ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা উত্তরাঞ্চল থেকে আসেন ব্যাপারীরা। বিষয়টি মাথায় রেখে এবার স্বাস্থ্যবিধির উপর জোর দিচ্ছেন সিলেটের প্রধান পশুর হাট কাজিরবাজারের কর্তৃপক্ষ। তারা জানিয়েছেন, এখন থেকে প্রতিদিনই কাজিরবাজারে জীবাণুনাশক স্প্রে ও ব্লিসিং পাউডার ছিটানো হচ্ছে।
শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত তারা স্বাস্থ্যবিধির বিষয়টি মাথায় রেখে পরিকল্পনা সাজাবেন। সিলেটের প্রধান এ পশুর হাটের ম্যানেজার শাহাদাত হোসেন লোলন মানবজমিনকে জানিয়েছেন, ‘সিলেটের ক্রেতাদের শেষ ভরসাস্থল হচ্ছে কাজিরবাজার পশুর হাট।
এ কারণে নগর ও আশপাশ এলাকার বাসিন্দারা পশু কিনতে ছুটে আসেন এ হাটে। হাট কর্তৃপক্ষ মাস্ক পরে বাজারে ঢোকা এবং ক্রেতা-বিক্রেতাদের স্যানিটাইজের ব্যবস্থা করছে। পাশাপাশি বাজারে প্রবেশের পথ একদিকে ও বাইর হওয়ার পথ থাকবে আরেক দিকে। স্বাস্থ্যবিধি পালনের জন্য এবার বাজার কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে এ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।’ তিনি জানান, ‘ইতিমধ্যে পশুর হাটের সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার বিষয়ে চিন্তাভাবনা শুরু হয়েছে। প্রয়োজন হলে জায়গার পরিধি বাড়ানো হবে। তবে যা করা হবে প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে, অনুমতি নিয়েই করা হবে।’ ব্যাপারীরা জানিয়েছেন, কাজিরবাজার পশুর হাটের পরিধি শেষ পর্যন্ত আর বাজারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে না। সেটি শেখঘাট-তালতলা সড়ক পর্যন্ত বিস্তৃতি ঘটে।
এ কারণে ওই সড়কে যানবাহন চলাচলও বন্ধ হয়ে যায়। এ ছাড়া, হাটের পাশেই রয়েছে একটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। ওই হাসপাতালে করোনা রোগীদের সেবা দেয়া হচ্ছে। এবার হাটে জায়গার পরিমাণ বাড়ানো গেলে ক্রেতা ও বিক্রেতাদের স্বাস্থ্যবিধি পালন করা সহজ হবে বলে জানান তারা। এদিকে সিলেটে স্বাস্থ্যবিধি মেনে পশুর হাট বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে সিলেট সিটি করপোরেশন। এ নিয়েও দেখা দিয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। খেলার মাঠ, রাস্তার উপর হাট করার প্রস্তাবের বিষয়টি নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। কারণ এবার স্বাস্থ্যবিধি নিয়ে নগরবাসীও সচেতন। কয়েকদিন আগে নগরীর চৌকিদেখি এলাকায় একটি অস্থায়ী পশুর হাট বসানো নিয়ে উত্তেজনা দেখা দেয়। করোনা সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কায় এলাকার মানুষ এতে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছেন। তাদের আপত্তির মুখে জমির মালিক হাট বসানোর সিদ্ধান্ত থেকে সরেও এসেছেন।
সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তাদের মতে- বেশি হাট বসালে এক জায়গায় ক্রেতাদের ভিড় বাড়বে না। ক্রেতারাও নিজ নিজ এলাকা থেকে পশু ক্রয় করতে পারবেন। এ কারণে গত ১৩ই জুন সিসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বিধায়ক রায় চৌধুরী জেলা প্রশাসকের বরাবরে নগরীর গুরুত্বপূর্ণ ৬টি সড়কের মোড় ও আরও দুটি জায়গায় অস্থায়ী পশুর হাট বসানোর জন্য আবেদন করেন। সিসিকের আবেদনে আম্বরখানা আবাসন সংলগ্ন মাঠ, চৌকিদেখি পয়েন্ট সংলগ্ন রাস্তার উপর, রিকাবীবাজার পয়েন্ট সংলগ্ন রাস্তার জায়গা, মদিনা মার্কেট নবাবী মসজিদ সংলগ্ন জায়গা, মাছিমপুর কয়েদির মাঠ, টিলাগড় পয়েন্ট সংলগ্ন রাস্তার উপর জায়গা, দক্ষিণ সুরমা কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালের অব্যবহৃত জায়গা, ঝালোপাড়া মসজিদ সংলগ্ন জায়গায় হাট বসানোর প্রস্তাব করা হয়।
কিন্তুজেলা প্রশাসন থেকে এ ব্যাপারে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত দেয়া হয়নি। আজ-কালের মধ্যে সিদ্ধান্ত আসতে পারে বলে জানিয়েছেন সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা। এদিকে- করোনা সংক্রমণের এই সময়ে বেশি এলাকায় হাট না বসাতে এরই মধ্যে জেলা প্রশাসক, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার ও সিটি মেয়র বরাবরে আবেদন করেছেন ৪ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ, ব্যবসায়ী ও স্থানীয়রা। অপরদিকে ৬৭ জন প্রবাসীর ক্রয়কৃত আম্বরখানা মোড় সংলগ্ন আবাসন এসোসিয়েট প্রাইভেট লিমিটেডের জায়গায় পশুর হাট না বসাতে আবেদন করেছেন প্রকল্প পরিচালক মো. খিজির আহমদ। আবাসন প্রকল্প তাদের আবেদনে উল্লেখ করেন- তারা বিভিন্ন মাধ্যমে জানতে পারেন ঈদুল আজহা উপলক্ষে নগরীর বিভিন্ন সড়কের মোড়সহ ৮টি স্থানে অস্থায়ী পশুর হাট বসাতে চায় সিসিক।
এর মধ্যে তাদের পরিচালকসহ ৬৭ জনের ১৫ বছর পূর্বে ক্রয়কৃত আবাসন প্রকল্প রয়েছে। তাদেরকে না জানিয়ে এ স্থানে পশুর হাট বসাতে চায় সিসিক। তারা সকল পরিচালকরা এ বিষয়ে সম্মত নন। তাছাড়া তাদের প্রকল্পের চারপাশে আবাসিক এলাকা রয়েছে। আর বর্তমানে করোনাক্রান্তের সংখ্যা ঊর্ধ্বমুখী, তাই ওই স্থানে পশুর হাট বসালে এলাকারও ব্যাপক ক্ষতি হবে। ফলে সেখানে পশুর হাট না বসানোর জন্য অনুরোধ জানানো হয়। চৌকিদেখি রাস্তা বা আম্বরখানা রাস্তার মোড়ে পশুর হাট না বসাতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সিলেট নগরীর ৪ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ড নেতৃবৃন্দ, অর্ধশত ব্যবসায়ী ও স্থানীয়রা স্বাক্ষরিত তাদের আবেদনে উল্লেখ করেন- সিসিক’র ৪ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডে অবস্থিত আম্বরখানা আবাসন সংলগ্ন মাঠ ও চৌকিদেখী পয়েন্ট সংলগ্ন রাস্তা।
এ দু’টি স্থান সিলেটের বিমানবন্দর সড়কে অবস্থিত। ওই দুই স্থানে নেই গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা। এ ছাড়া এয়ারপোর্ট সড়ক দিয়ে প্রতিদিন শত শত ট্রাক ও নানা ধরনের যানবাহন চলাচল করে। বিশেষ করে ভিআইপিদের চলাচল ওই সড়ক দিয়ে বেশি। বর্তমানে করোনা পরিস্থিতি ঊর্ধ্বগতি। ওই দুটি স্থানে অস্থায়ী হাট বসালে পরিবেশের ক্ষতি ও জনগণ নানা ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হবেন।
copy