ভয়ঙ্কর অ্যামাজনে ভাইবোনদের যেভাবে বাঁচিয়ে রেখেছে ১৩ বছরের বালিকা

টাইম সিলেট ডট কম
প্রকাশিত হয়েছে : ১১:২৮:০৬,অপরাহ্ন ১২ জুন ২০২৩ | সংবাদটি ২০৮ বার পঠিতঘন জঙ্গল। চারদিকে সাপ, বিচ্ছু, বাঘ। আরও কতো নাম জানা না জানা প্রাণসংহারি প্রাণীর উপস্থিতি সেখানে একদিন দু’দিন নয়। দক্ষতা আর বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে নিজের কচি ৩টি ভাইবোনকে রক্ষা করেছে মাত্র ১৩ বছর বয়সী মেয়ে লেসলি। তাদের খাবারের ব্যবস্থা করেছে। সময় দিয়েছে। খেলাধুলা করে সময় পার করেছে। অবশ্য এসব কৌশল সে তার অভিভাবকদের কাছ থেকে পেয়েছিল। তাই নিজের মাথার ফিতা দিয়ে মাথার ওপর কোনোমতে একটি তাঁবুর মতো টানিয়েছিল। তার নিচে ছোট্ট ভাইবোনকে পরম আদরে রেখেছে।
এখন সে ও তার ভাইবোনরা শুধু কলম্বিয়ায় আলোচিত এমন না। সারাবিশ্বের সংবাদ মাধ্যমে শিরোনাম হয়েছে। ১লা মে লেসলি (১৩) ও তার ভাইবোন সোলেইনি (৯), তিয়েন বোরিয়েল (৪) এবং ক্রিস্টিন (১) মা ম্যাগডালেনা মুকুটুই ভ্যালেন্সিয়ার সঙ্গে ভ্রমণ করছিল। কিন্তু অ্যামাজনের উপরে তাদেরকে বহনকারী ছোট বিমানটি বিধ্বস্ত হয়। এতে মারা যান লেসলির মা।
ঘটনার পর পর লেসলি তার জীবিত ৩ ভাইবোনকে নিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ের দিকে ছোটে। ঘন জঙ্গলে এক স্থান থেকে আরেক স্থানে ছুটতে থাকে তারা। ওদিকে সরকারি পর্যায়ে এবং স্থানীয় উপজাতিরা জোর উদ্ধার অভিযান চালাতে থাকেন। এভাবে কেটে যায় প্রায় ৪০ দিন। লেসলি নিজে একটি শিশু। কিন্তু বুদ্ধি খাটিয়ে সে তার ৩ ভাইবোনকে রক্ষা করেছে। তাদেরকে খুঁজে পাওয়ার পর সেনাবাহিনীর রেডিও থেকে বলা হয়- ‘মিরাকল, মিরাকল, মিরাকল, মিরাকল।’ উদ্ধার করা হয় তাদেরকে। আকাশপথে উদ্ধার করে নিয়ে ভর্তি করা হয় রাজধানী বোগোটার হাসপাতালে।
তাদের এক আন্টি দামারিস মুকুটুই বলেছেন, জঙ্গলে বা জঙ্গলের কাছাকাছি বসবাসকারী শিশুদের গেম খেলার ছলে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। ১৩ এবং ৯ বছর বয়সী দুই শিশু ঘন ঘন এমন গেম খেলতো। যখন আমরা তাদের সঙ্গে খেলতাম, তখন ছোট্ট ছোট্ট ক্যাম্প স্থাপন করতাম। সবার বড় লেসলি। সে জানে কোন কোন ফল আমরা খেতে পারি। কোনটা খেতে পারি না। কারণ, বনের ভিতর অনেক বিষাক্ত ফল আছে। তাছাড়া সে শিশুদের যত্ন নেয়া সম্পর্কে ওয়াকিবহাল ছিল। শিশুগুলোর গ্রান্ডফাদার ফিডেনসিও ভ্যালেন্সিয়া বলেছেন, উদ্ধার করার পর বাচ্চাগুলো খুব দুর্বল ছিল। তবে তারা তাদের পরিবারকে দেখতে পেয়ে খুব খুশি।
ওদিকে সেনাবাহিনী যে ছবি প্রকাশ করেছে তাতে দেখা যায় জঙ্গলে গাছের শাখার সঙ্গে ঝুলছে চুল বাঁধার ফিতা। এর অর্থ হলো ওই ফিতা দিয়ে তারা মাথার ওপর একটুখানি তাঁবুর মতো ব্যবস্থা করেছিল। বাচ্চাদের গ্রান্ডমাদার ফাতিমা ভ্যালেন্সিয়া বলেছেন, ওরা বেঁচে আছে। এতে আমি মহাখুশি। তিনি জানিয়েছেন, ৪টি শিশুর মধ্যে সবচেয়ে বড়টি অর্থাৎ লেসলি অন্যদের যত্ন নিতো। তার মা যখন কাজে যেতেন, তখন ছোট ভাইবোনকে দেখার দায়িত্ব পালন করতো লেসলি। তার এই অভিজ্ঞতা তাদেরকে জঙ্গলে বেঁচে থাকতে সহায়তা করেছে। সে-ই তাদের জন্য বনের ভিতর খাবারের ব্যবস্থা করেছে।
কলম্বিয়ার দক্ষিণে ভাউপেস এলাকায় গুয়ানানো গ্রুপের বসবাস। এর নেতা জন মোরেনো বলেন, এই বাচ্চাদের বড় করেছেন তাদের গ্রান্ডমাদার। সম্প্রদায়ের মধ্যে যে চর্চা করতে দেখেছে, তা থেকে তারা শিক্ষা নিয়েছে। জীবন বাঁচাতে পূর্বসূরিদের দেখানো জ্ঞান কাজে লাগিয়েছে তারা। copy