পুত্রের খুনিদের বিচার চাইতে বিভিন্ন দপ্তরে ঘুরছেন মা
ছাতকে মেহদী হাসান রাব্বী হত্যাকারীদের ১৯ দিনেও গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ
টাইম সিলেট
প্রকাশিত হয়েছে : ৪:২৮:৪০,অপরাহ্ন ১০ আগস্ট ২০১৯ | সংবাদটি ৩৮২ বার পঠিতছেলে মেহদী হাসান রাব্বী হত্যার বিচার চেয়ে দপ্তরে দপ্তরে ঘুরছেন এক হতভাগা মা ও মুক্তিযোদ্ধার কন্যা। তার কান্নায় আকাশ বাতাস ভারী হয়ে উঠছে। তবুও টনক নড়ছে না পুলিশ প্রশাসনের । হত্যাকান্ডের ১৯ দিন পেরিয়ে গেলেও একজন আসামীও গ্রেফতার হয়নি। উল্টো আপস মীমাংসার জন্য অব্যাহত চাপ দিয়ে যাচ্ছে প্রভাবশালী আসামী পক্ষ। মুক্তিযোদ্ধার কন্যা ও মুক্তিযোদ্ধার পুত্র বধূ রুপিয়া বেগমের দাবি টাকা পয়সা চান না তিনি। মৃত্যুর আগে একমাত্র পুত্র হত্যার বিচার দেখে যেতে চান। ছেলে হত্যার ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে এই প্রতিবেদকের সামনে ছেলে হারা রুপিয়া বেগমের দু’চোখ দিয়ে অঝোরে ঝরছিল অশ্রু।
তিনি বলেন আমার বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মালেক ও আমার শ্বশুড় বীর মুক্তিযোদ্ধা তোফায়েল হোসেন খান জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে মুক্তিযুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছিলেন। আমার স্বামী আলমগীর হোসেন খান একমাত্র পুত্র সন্তান মেহেদী হাসান রাব্বী (২২)কে রেখে মালয়েশিয়া যাবার পথে নিখোঁজ হন। আমি একমাত্র পুত্র সন্তান মেহেদী হাসান রাব্বী (২২)কে নিয়ে কোন মতে বেঁচে ছিলাম। কিন্তু সুনামগঞ্জের ছাতকের একটি প্রভাবশালী খুনী চক্র আমার সন্তানকে একটি মামলায় সাক্ষী দেয়ায় ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে।
তিনি এজন্য জাতির পিতা স্বাধীন বাংলার স্থপতি বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনার সহযোগিতা কামনা করে বলেন,প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়া আমার দুঃখ দেখার কেউ নেই। কারণ মুক্তিযোদ্ধা বাবা, মুক্তিযোদ্ধা শ্বশুড়, স্বামী ও একমাত্র সন্তান হারিয়ে আমি আজ নিঃস্ব। স্বজন হারানোর বেদনা একমাত্র শেখ হাসিনা ভাল বুঝেন। তিনি ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট মা,বাবাসহ সকল স্বজন হারিয়েছেন।
গত ২৩ জুলাই সন্ধ্যায় ছাতক উপজেলার সিমেন্ট ফ্যাক্টরি বাজার এলাকার সংঘবদ্ধ সন্ত্রাসীদের হাতে প্রকাশ্য দিবালোকে খুন হন মেহদী হাসান রাব্বী (২২)। তিনি ছাতক পৌর এলাকার পূর্ব নোয়ারাই আলমগীর হোসেনের পুত্র। সর্বদা শান্ত রাব্বী প্রভাশালী পৌর কাউন্সিলর লিয়াকত বাহিনীর বেআইনি কর্মকা-, চাঁদাবাজি ও ত্রাসের রাজত্ব কায়েমের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করায় খুন হন । এমনটাই দাবি মা রুপিয়া বেগমের। এই অসহায় বিধবা রুপিয়া বেগম গণমাধ্যমের মাধ্যমে তার পুত্র হত্যাকারীদের গ্রেফতারের আকুল আবেদন জানাতে দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। রুপিয়া বেগম বলেন, ‘আমি টাকা চাই না, আমি পুত্র হত্যাকারীদের গ্রেফতার চাই’।
অন্যদিকে, হত্যাকান্ডটি ২৩ জুলাই হলেও আসামীরা প্রভাবশালী হওয়ায় প্রথমে মামলা নিতে চায়নি ছাতক থানা পুলিশ। পরে নিহত রাব্বীর মা সিলেট রেঞ্জের ডিআইজির সাথে যোগাযোগ করে মামলা নেয়ার আবেদন জানালে পুলিশ মামলা গ্রহণ করে। ছাতক থানায় মামলা নং ২০ (২৬/০৭/১৯)। তবে মামলা নিলেও রহস্য জনক কারণে ১৯ দিনেও একজন আসামীকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। মামলায় আসামী করা হয়-স্থানীয় সন্ত্রাসী চক্রের সদস্য তারেক হোসেন, আতিকুর রহমান সোহাগ, মুক্তার আলী, রনি মিয়া, জাহাঙ্গীর হোসেন, হাসান, তাজিম হোসাইন, অপু মিয়া, লিয়াকত আলী, বাবু মিয়া, জামিল হোসেন, বাবু আহমেদ, আমির আলী, মামুন আহমদ, খুরশেদ আলম অর্নব, রাজু মিয়া ও সানি আহমদকে। রুপিয়া বেগমের দাবি আসামীরা এখনো সিমেন্ট ফ্যাক্টরি বাজারে ঘোরাফেরা করে। পুলিশ তাদের ধরছে না। দেখেও না দেখার ভান করে বলে অভিযোগ করেছেন বাদীনি। বরং বিভিন্ন ব্যক্তিদের থানায় নিয়ে পুলিশ বাদীনিকে জব্দ করার জন্য অপচেষ্টা চালাচ্ছে।
অভিযোগ রয়েছে, প্রভাবশালী আসামিদের স্বজনরা উল্টো টাকা-পয়সার বিনিময়ে মামলা আপস করার জন্য বাদিকে চাপ দিয়ে যাচ্ছেন। একমাত্র পুত্র সন্তানের খুনের ঘটনা কোন কিছুর বিনিময়ে আপস করতে নারাজ রাব্বীর মা । বিচার চেয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন পুলিশ প্রশাসন ও প্রভাবশালীদের দ্বারে দ্বারে।
রাব্বীর মা রুপিয়া বেগম ছাতক পৌরসভার নোয়ারাই গ্রামের প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মালিকের মেয়ে। তাঁর শ্বশুড় অর্থাৎ নিহত রাব্বীর দাদা তোফায়েল হোসেন খানও একজন মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। রুপিয়া বেগম জানান, সংসারের একমাত্র কর্মক্ষম ছেলে ছিলেন রাব্বী। তাকে হারিয়ে অর্থনৈতিকভাবেও বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন তারা । স্বামী বিদেশ যাওয়ার পর ১৭ বছর ধরে নিখোঁজ। ছেলে সংসারের হাল ধরার পরে সুখের দেখা পেলেও সেটা আর স্থায়ী হয়নি।
রাব্বী হত্যা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই সৈয়দ আব্দুল মান্নান বলেন, আসামীরা ঘন ঘন অবস্থান পরিবর্তন করছে। এক জায়গায় অবস্থান না করায় তাদের গ্রেফতার করা সম্ভব হচ্ছে না। আমরা তাদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রেখেছি।