হযরত মাওলানা তাফাজ্জুল হক মুহাদ্দিসে হবিগঞ্জী (রা:)
টাইম সিলেট ডট কম
প্রকাশিত হয়েছে : ৪:৪৯:২৭,অপরাহ্ন ০৬ জানুয়ারি ২০২০ | সংবাদটি ৪১৮ বার পঠিত
দেশের অন্যতম শ্রেস্ট আলিমে দ্বীনের স্মরণে অধমের কিছু কথা-
তাঁর সম্পর্কে আগে থেকেই জানতাম । সম্ভবত: ১৯৮৮ সালেই তাহার প্রথম লন্ডন সফর। ইস্ট লন্ডন মসজিদে জোহরের নামাজ শেষে তাহার সাথে হটাত দেখা । সালামের পর কবে এসেছেন জিজ্ঞাসা করতেই বিনয়ী হাসি দিয়ে শায়খে কাতিয়া মাওলানা আমিনউদ্দিনের দিকে ইশারা করে বললেন ‘সাবে লইয়া আইছইন’ । শায়খে কাতিয়া (রা:) দ্বীনের কাজে অন্যদের এগিয়ে যেতে সর্বদা আন্তরিক সহযোগিতা করতেন । দুতিন দিন পর বাবর ট্র্যাভেলসের সত্বাধিকারী গহরপুরের সিদ্দিক আলী সাহেবের বাসায় মাওলানা শামসুল হক ও আমি তাহার সাথে রাতের খাবারে যোগ দেই । পরে তিনি ফোর্ড স্কোয়ার মসজিদে তশরীফ আনেন ও বয়ান রাখেন । পরের বছর থেকে চার পাঁচ বছর পর্যন্ত ফোর্ড স্কোয়ার মসজিদ থেকে তাঁকে স্পন্সর করা হয় এবং লন্ডনে অবস্থানকালীন মসজিদের মেহমান কামরায় থাকতেন । হযরতের আল্লাহ প্রদত্ত মিস্ট আওয়াজে রস মিশ্রিত গভীর জ্ঞানগর্ভ বয়ান যে কাউকেই আকৃস্ট ও মোহাবিস্ট করত । তারপর তিনি প্রতি বছরই ইংল্যান্ড সফর করেছেন, কখনও বা দুবার ।ঐ সময় তিনি অধিকাংশ সময় মোক্তারপুর, ওসমানীনগরের আব্দুল কাদির (সুরত আলীর) বাসায় অবস্থান করতেন । হযরতকে বিভিন্ন জায়গায় তিনি নিজ গাড়ীতে নিয়ে যেতেন ।
১৯৯৯ সালে ফোর্ডস্কোয়ারে ‘লন্ডন ইসলামিক স্কুল’ নামে মাধ্যমিক স্কুল ও মাদ্রাসা প্রতিস্টিত হওয়ার পর এর প্রতিটি বাৎসরিক সভা এবং ২০০৬ থেকে প্রায় প্রতিটি খতমে বোখারীতে তশরীফ এনেছেন এবং সর্বশেষ গত বছর তাতে সবক ও দোয়া দিয়েছেন । অবশ্য প্রথম খতমে বোখারির সবক ও দোয়া পরিচালনা করেছিলেন হাটহাজারীর মাওলানা আহমদ শফী হাফিজাহুল্লা ।
হযরত ইংল্যান্ডের প্রায় প্রতিটি শহরেই ওয়াজ করেছেন । বেশ কয় বছর যাবত তিনি লন্ডনে দিরাইর মাওলানা শোয়ব আহমদের মারকাজুল উলুম ও তাহার বাসায় মেহমান হতেন । গত বছর লন্ডনে অনুস্ঠিত জমিয়তে ওলামার শতবার্ষিকীতে যোগদান ও মাওলানা শোয়েবের দলের সাথে তুরস্ক সফর করেন । আমেরিকা ও ক্যানাডায় তিনি বহুবার দ্বীনি সফর করেছেন ।
হযরত বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী ছিলেন । নিজ উমেদ নগর মাদ্রাসা ও রেঙ্গা মাদ্রাসার শায়খুল হাদীসের দায়িত্ব পালন করেন । তিনি জমিয়তে ওলামা এবং হেফাজতে ইসলামের সহ সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন । তাহার নিরহংকার ও বিনয়ী স্বভাব দ্বারা সব স্তরের মানুষের সাথে সহজেই মেলামেশা করতেন । অসংখ্যবার বিদেশ সফর করলেও বিদেশের প্রতি কোন মোহ তাহার ছিল না । তাহার সন্তানরা সবাই দেশে থাকেন ।
আমার সাথে ভাগ্যক্রমে তাহার শেষ সাক্ষাত হয় গত বছর ১৯ ফেব্রুয়ারি গলমুকাপন দারুস্সুন্নাহ মাদ্রাসার বার্ষিক জলসায় । একান্তে প্রায় চল্লিশ মিনিট আলাপের ফয়েজ লাভ করি ।
আজ সোমবার, ৬ই জানুয়ারী ২০২০ তারিখে সকাল ১০টায় এই মহান মনিষিকে তাহার সন্তান মাওলানা মাসরুরুল হকের ইমামতিতে জানাজার পর মাদ্রাসার মসজিদের পাশে দাফন করা হয় । তাহার তিরোধানে দেশবাসী শোকাহত এবং জ্ঞানের ময়দানে বিরাট শূন্যতা সৃস্টি হয়েছে । আল্লাহ তাহার এই বান্দাকে মাগফিরাত করে রহমতের চাদরে ঢেকে দিন এবং জান্নাতুল ফিরদাউসে স্থান দিন । আল্লাহ আমাদের সকল আক্বাবিরীনদের কবরকে জান্নাতের বাগান বানিয়ে দিন ।
আব্দুল জলিল
সেক্রেটারি ,জামিয়া দারুসসুন্নাহ ডেভেলপমেন্ট ট্রাস্ট এসোসিয়েশন ইউকে