আড়াইহাজার ও বন্দরে জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে অভিযান, বোমা তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধার
টাইম সিলেট ডট কম
প্রকাশিত হয়েছে : ২:৪৪:৫৪,অপরাহ্ন ১২ জুলাই ২০২১ | সংবাদটি ৩৩৯ বার পঠিতনারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার ও বন্দরের দুটি বাড়িতে জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে অভিযান চালিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি)। রোববার রাতে প্রথমে আড়াইহাজারের নোয়াগাঁও মিয়াবাড়ি জামে মসজিদের মুয়াজ্জিনের কক্ষে অভিযান চালায় তারা। এসময় ওই কক্ষ থেকে তিনটি ইম্প্রোভাইজ এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস ও আরও বেশ কিছু বোমা তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধার করে সিটিটিসি।
এরপর বন্দর ধামঘর কাজী পাড়া এলাকার একটি বাড়িতে অভিযান চালায় তারা। এসময় ওই বাড়ি থেকে আরও কিছু বোমা তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়। রোববার রাতে প্রায় আট ঘণ্টার অভিযান শেষে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট এসব সরঞ্জাম উদ্ধার করেন। রাত সাড়ে তিনটায় এক সংবাদ সম্মেলনে সিটিটিসি প্রধান আসাদুজ্জামান এসব তথ্য জানান।
আড়াইহাজার (নারায়ণগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, আড়াইহাজারের সাতগ্রাম ইউনিয়নের নোয়াগাও এলাকায় এক নব্য জেএমজি আস্তানার সন্ধান পায় কাউন্টার টেররিজমের সদস্যরা।
রাত ৮টার দিকে কাউন্টার টেররিজমের সোয়াত টিমের সদস্যরা ঘটনাস্থলের আশপাশ এলাকা ঘিরে ফেলেন। রাত ১২টার পর্যন্ত চলে শ্বাসরুদ্ধকর অভিযান। এসময় একটি মসজিদের পাশেই একটি দোচালা টেনসেট ঘরের ভেতরে থাকা তিনটি শক্তিশালী বোমা দাপে দাপে নিস্ক্রিয় করা হয়। এসময় একটি মোটরসাইকেল ও বোমা তৈরির বেশ কিছু সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়।
পরে ঘটনাটি সম্পর্কে সাংবাদিকে ব্রিফ করেন কাউন্টার টেররিজমের প্রধান আসাদুজ্জামান। তিনি দাবি করেন, এটি নব্য জেএমবির আস্তানা ছিল। এখানে তারা শক্তিশালী বোমা তৈরি করছিল বলে তাদের কাছে তথ্য ছিল। এর আগে আবদুল্লাহ আল-মামুন নামে জেএমবির একনব্য সদস্যকে আটকেরও দাবি করা হয়। তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী অভিযানটি চালানো হয়। তার বাবার হান্নান মিয়া। তিনি লালমনিরহাট এলাকার বাসিন্দা বলে জানা গেছে।
এসময় উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার জায়েদুল আলম (পিপিএম), আড়াইহাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকা ওসি তদন্ত আনিচুর রহমান মোল্লাসহ জেলা পুলিশের কর্মকর্তারা।
কাউন্টার টেররিজম (সিটিটিসি)-এর প্রধান আসাদুজ্জামান জানান, চলতি বছরের ১৭ই মে নারায়ণঞ্জের সাইডবোর্ড এলাকায় পুলিশ বক্সের কাছে একটি (আইডি) বিস্ফোরণ ঘটানোর চেষ্টা করা হয়েছিল। তারা সেটি সেখানে বিস্ফোরণ ঘটাতে ব্যর্থ হন। পরে কাউন্টার টেররিজম (সিটিটিসি) টিম সেটি নিস্ক্রিয় করেন। এটি ছিল খুবই শক্তিলাশী বোমা। পরে নিয়ে তদন্ত চলে। পরবর্তীতে আবদুল্যাহ আল-মামুন ওরফে ডেভিট কিলার নামে এক যুবককে আটক করা হয়।
তিনি আরও বলেন, জেএমবির সদস্য আবদুল্যাহ আল-মামুনকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সে জানায়, আড়াইহাজার উপজেলার সাতগ্রাম ইউনিয়নের নোয়াগাঁও এলাকায় একটি মসজিদে সে মোয়াজ্জেমের দায়িত্ব পালন করছেন। মসজিদের পাশে তার বসবাসের কক্ষে আরও কয়েকটি বোমা রয়েছে। তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী কাউন্টার টেররিজমের সদস্য ও সোয়াত টিম অভিযান চালায়। তিনটি বোমা উদ্ধার করে তা নিষ্ক্রিয় করা হয়। এর মধ্যে দুইটি বোমার শব্দে এলাকা কম্পিত হয়েছে। এসময় সাইনবোর্ডে বোমা বহনের কাজে ব্যবহৃত মোটরসাইকেলটিসহ বোমা তৈরির বেশ কিছু সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়।
তিনি আরও জানান, অভিযান চলাকালীন সময়ে তারা একটি হুমকি পেয়েছেন। হুমকিটি তারা ফেসবুকে পোস্ট করেছে। তারা দ্বিতীয়বার ফের হামলারও পরিকল্পনা করছে বলে দাবি করেছেন।
৪ ঘণ্টার শ্বাসরুদ্ধকর অভিযান: সন্ধ্যা সাতটার দিকে কাউন্টার টেররিজমের বেশ কিছু সদস্য ঘটনারস্থলে চারপাশ ঘিরে ফেলেন। সোয়াতের সদস্যরা রাত ১০টার দিকে অভিযান শুরু করেন। টানা রাত ১২টার পর্যন্ত অভিযান চলে। স্থানীয় সাতগ্রাম ইউনিয়নের নোয়াগাঁও এলাকায় অবস্থিত মিয়াসাহেব নামে বাড়ির পাশে নোয়াগাও কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ রয়েছে। এর একটু দূরেই রয়েছে নোয়াগাঁও হাফেজিয়া মাদ্রাসা ও এতিমখানা। এটি ১৯৮২ সালে স্থাপিত হয়েছে। এর পাশেই আবদুল্যাহ আল-মামুনের থাকার দোচালা টিনশেট ঘর। পাশাপাশি তিনি মসজিদে মুয়াজ্জিনের দায়িত্বও পালন করছিলেন। তার থাকার ঘরটিতে রাত ১০টার দিকে অভিযানটি শুরু করে ১২টার দিকে শেষ করেন। এরই মধ্যে ধাপে ধাপে তিনটি শক্তিশালী বোমার নিষ্ক্রিয় করা হয়। একই সময় বোমা তৈরির বেশ সরঞ্জামসহ একটি মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়। উদ্ধার হওয়া বোমার মধ্যে দুইটি বোমার শব্দে এলাকা কম্পিত হয়ে পড়ে। ঘটনাস্থলটি ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের কিছু দূরে অবস্থিত। তবে এ ব্যাপারে স্থানীয় কারোর বক্তব্য পাওয়া যায়নি।