সরকারের কাছে মির্জা ফখরুলের প্রশ্ন
খালেদা জিয়াকে নিয়ে এত দরদ উথলে উঠলো কেন
টাইম সিলেট ডট কম
প্রকাশিত হয়েছে : ১২:৩৮:৩৮,অপরাহ্ন ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ | সংবাদটি ১৪৫ বার পঠিতবিএনপি’র চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে নিয়ে সম্প্রতি পাল্টাপাল্টি বক্তব্য দিয়েছেন সরকারের মন্ত্রী ও ক্ষমতাসীন দলের নেতারা। কেউ বলেছেন খালেদা জিয়া রাজনীতি করতে পারবে। আবার কেউ কেউ বলেছেন পারবেন না। হঠাৎ খালেদা জিয়ার রাজনীতি নিয়ে সরকারের (ক্ষমতাসীন) দরদ উথলে পড়ার কারণ জানতে চেয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, তাদের (সরকারের) মন্ত্রীরা একবার বলে যে, খালেদা জিয়া রাজনীতি করতে পারবেন না। আরেকজন বলে যে, তার রাজনীতি করতে বাধা নেই। এর মাজেজা কী? হঠাৎ করে আপনাদের এত দরদ উথলে উঠলো কেন যে, খালেদা জিয়ার রাজনীতি করার ব্যাপারে একেবারে পাগল হয়ে গেলেন? গতকাল দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। জাতীয়তাবাদী তাঁতী দলের ৪৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ওই আলোচনা সভা করা হয়। বিএনপি মহাসচিব বলেন, সরকারের উদ্দেশ্য খারাপ। তারা দেশের মানুষকে বিভ্রান্ত করতে চায়।
দেশের মানুষের দৃষ্টি ভিন্ন দিকে নিয়ে যেতে চায়। আমাদের দৃষ্টি একদিকেই, আমাদের অধিকার ফেরত চাই, আমাদের ভোটের অধিকার ফেরত চাই, এই সরকারকে আমরা আর দেখতে চাই না। এই সরকারকে এই মুহূর্তে পদত্যাগ করতে হবে এবং পদত্যাগ করে সংসদ বিলুপ্ত করতে হবে। ওই সমস্ত কথা বলে জনগণকে ভিন্ন পথে মন ভোলানো যাবে না। তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার যখন রাজনীতি করার সময় আসবে, উনি রাজনীতি করবেন। কারাগারেই থাকুক, জেলে থাকুক আর যেখানেই থাকুক, তিনি অবশ্যই রাজনীতি করবেন। কারণ তিনি এদেশের জনগণের সবচাইতে জনপ্রিয় নেত্রী এবং গণতন্ত্রের সবচেয়ে বড় মাতা। সুতরাং আপনাদের (সরকার) এ নিয়ে কথা বলার প্রয়োজন নেই। তার সিদ্ধান্ত তিনি নেবেন, দল নেবে। আপনারা আগ বাড়িয়ে এত যদি চান, তাহলে খালেদা জিয়াকে নিঃশর্ত মুক্তি দিন।
তাকে দিয়েছেন ছয় মাসের সাজা স্থগিত। আর বলছেন যে, তিনি সব কিছু করতে পারবেন। এই সমস্ত কথা বলে মানুষকে বোকা বানিয়ে কোনো লাভ হবে না। সরকারের উদ্দেশ্যে ফখরুল বলেন, আপনারা আসল জায়গায় আসুন। জনগণের যে অসুখ, সেটার দিকে তাকান। জনগণের অসুখ একটাই যে, তারা ভোট দিয়ে তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করতে পারে না। জনগণের পার্লামেন্ট নাই। তারা কথা বলতে পারে না। সেজন্য আমাদের সবচেয়ে বড় যে দাবি এই সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে। সংসদ ভেঙে দিতে হবে এবং নতুন তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করতে হবে। যার মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন গঠন হবে এবং সকলের অংশগ্রহণে নতুন নির্বাচন হবে, নতুন সরকার গঠন হবে। ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার বিলুপ্তি ঘটানো হয়েছে এবং ওই ব্যবস্থা ফেরানোর কোনো সুযোগ নেই’ আওয়ামী লীগ নেতাদের এমন বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় বিএনপি মহাসচিব বলেন, আপনারা যখন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি তুলে ১৭৩ দিন হরতাল করেছিলেন, তখন সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছিল না।
বেগম খালেদা জিয়া যখন দেখেছেন যে, জনগণ এটা চায়, যখন দেখেছেন এটা করলে রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান হবে, তখন তিনি পার্লামেন্টের বিশেষ অধিবেশন বসিয়ে নতুন সংসদে এই তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিল পাস করে সংবিধান সংযোগ করেছিলেন। তারপরে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হয়েছিল, বিএনপি সেদিন বিরোধী দলে গিয়েছিল ১১৬টা আসন নিয়ে। কোথায় সেদিন বিএনপি তো এই তত্ত্বাবধায়ক সরকার না মেনে অন্য কোনো কাজ করে নাই, নির্বাচন তো তার মতো করতে চায় নাই। আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ভোট চুরির অভিযোগ এনে মির্জা ফখরুল বলেন, কথায় কথায় আওয়ামী লীগ বলে বিএনপি নাকি ভোট চুরি করেছে। আমি দৃঢ়তার সঙ্গে বলতে চাই, বিএনপি কোনোদিন ভোট চুরি করে নাই। ভোট চুরি করেছে আওয়ামী লীগ। আজকে শুধু নয়, ১৯৭৩ সালে ভোট চুরি করেছেন। পরেও ভোট চুরি করেছেন। গত দুইটা সংসদ নির্বাচনেও ভোট চুরি করে, কারচুপি করে, ভয় দেখিয়ে, মিথ্যা মামলা দিয়ে নির্বাচন করেছেন। আপনাদের লজ্জা হওয়া উচিত একটা দেশের রাজনৈতিক দলের ৪০ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেন। ‘বিএনপি অসুস্থ হয়ে অচিরেই হাসপাতালে যাবে। নির্বাচনে না গেলে আইসিইউতে যাবে। মির্জা ফখরুল আবার লাফাতে শুরু করেছে। জনগণ নাই, ঢাল তলোয়ার নেই, নিধিরাম সর্দার’ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের এমন মন্তব্যের জবাবে বিএনপি মহাসচিব বলেন, বিএনপি আইসিইউতে যাবে না। আপনারা ইতিমধ্যে আইসিইউতে চলে গেছেন। দেউলিয়া হয়ে গেছেন রাজনৈতিকভাবে।
তা না হলে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে এত ভয় কেন? ভয় একটাই যে, আপনারা জানেন যে, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে আপনাদের জামানত থাকবে না, ২০ আসনও পাবেন না। আলোচনা সভায় মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সংসদে বিরোধী দলে থাকা জাতীয় পার্টি এবং সরকারের সঙ্গে থাকা বাম দলগুলোরও সমালোচনা করেন। ২০১৪ সালে বিএনপি ও সমমনাদের ভোট বর্জনের কথা মনে করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, তখন বিনাভোটে ১৫৪ জনকে নির্বাচিত করা হয়েছিল, যারা সংসদের মেম্বার হয়ে গেলেন। আর আমাদের বেশকিছু লোকজন, বিশেষ করে জাতীয় পার্টি ডুগডুগি বাজিয়ে ওদের সঙ্গে যোগ দিলো। আরও আছে। শুধু জাতীয় পার্টি না। আমাদের অনেক বাম নেতা, একসময়ে প্রখ্যাত নেতা, যারা এখনো অনেক বড় বড় কথা বলেন, তারা সেদিন নৌকার সঙ্গে মহাজোট করে তারা সেই নির্বাচনে গিয়েছিলেন। ভাগ নিয়েছেন। এখন আবার একটু অসুবিধা হচ্ছে। মন্ত্রিত্ব দেয় নাই যে কারণে ভাগ-বাটোয়ারা ঠিক মতো হচ্ছে না। এখন বলে ১৪ দল আর কাজ করে না। এরা আওয়ামী লীগের চেয়ে খারাপ। আজকে এদেশে কিছু সংখ্যক লোক তৈরি হয়েছে, তাদের কাজ হচ্ছে তাঁবেদারি করা, তোষামোদি করা এবং জনগণের স্বার্থের বিরুদ্ধে কাজ করা। মির্জা ফখরুল আওয়ামী লীগের শরিক বাম নেতাদের উদ্দেশ্য করে বলেন, আমি খুব স্পষ্টভাবে জানতে চাই যে, আজকে গণতন্ত্র আছে কিনা- এই কথা বলেন না কেন? আজকে জনগণ কেন ভোট দিতে পারে না।
কেন বলেন না যে আজকে এই সরকার দুর্নীতিগ্রস্ত সরকার, তারা দুর্নীতি করে মানুষের সমস্ত অধিকারগুলো কেড়ে নিচ্ছে- এ কথাগুলো তারা মুখ দিয়ে কেন বলেন না। এক সময় তারা বড় বড় বিপ্লবী কথা বলতেন। এখনো সুযোগ পেলেই আমাদেরকে তারা বিভিন্নভাবে দোষারোপ করতে থাকেন। কিন্তু তারা তাদের যে দায়িত্ব, সেই দায়িত্ব পালন করেন না। আলোচনা সভায় তাঁতী দলের আহ্বায়ক আবুল কালাম আজাদের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব হাজী মজিবুর রহমানের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বিএনপি’র সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ, প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক এবিএম মোশাররফ হোসেন, সাবেক সংসদ সদস্য জিএম সিরাজ, উলামা দলের আহ্বায়ক শাহ নেছারুল হক, নজরুল ইসলাম তালুকদার মৎস্যজীবী দলের আবদুর রহিম, ডেমোক্রেটিক লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইফুদ্দিন মনিসহ তাঁতী দলের নেতারা বক্তব্য রাখেন। manobjomin copy