দেশের অর্থনীতি এক মহাসংকটে নিমজ্জিত

টাইম সিলেট ডট কম
প্রকাশিত হয়েছে : ১২:১৭:৫১,অপরাহ্ন ০১ মার্চ ২০২৩ | সংবাদটি ৪১ বার পঠিতক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতি ও আর্থিক সংকটে ‘জনজীবন বিপর্যস্ত’ বলে মন্তব্য করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গতকাল দুপুরে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি তুলে ধরে বিএনপি মহাসচিব এই মন্তব্য করেন। মির্জা ফখরুল বলেন, বিদ্যুৎ-জ্বালানি-পরিবহন-খাদ্যসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় বাজারের ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতিতে জনগণের ত্রাহি অবস্থা, জনজীবন বিপর্যস্ত। সামষ্টিক অর্থনীতির প্রায় সবক’টি সূচকই আরও দুর্বল ও প্রকট হয়ে উঠেছে। বর্তমান বাংলাদেশে চারিদিকে শুধু হাহাকার, নাই আর নাই। নিত্যপণ্যের উচ্চমূল্যের যাঁতাকলে মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে। এ কথায় দেশের অর্থনীতি এক মহাসংকটে নিমজ্জিত। মির্জা ফখরুল বলেন, গত আগস্টে সরকারি হিসাবেই মূল্যস্ফীতি দেখানো হয় ৯ দশমিক ৫২ শতাংশ। বর্তমান মূল্যস্ফীতি কমছে দেখানো হলেও খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি এখনো প্রায় দুই অঙ্কের কাছাকাছি রয়েছে। জানুয়ারি মাসে এই হার ছিল ৯ দশমিক ৮ শতাংশ।
বাজারে জিনিসপত্রের দাম বেড়েই চলেছে। চাল-ডাল-ডিম এর আকাশছোঁয়া এমনকি ব্রয়লার মুরগির দাম দুইশ’ টাকার উপরে। অথচ সরকারের পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) সাধারণ মূল্যস্ফীতি দেখাচ্ছে ৮ দশমিক ৫৭ শতাংশ আর খাদ্য মূলস্ফীতি ৭ দশমিক ৭৬ শতাংশ যার সঠিকতা নিয়ে খোদ অর্থনীতিবিদরাই শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্য বার বার বৃদ্ধি, দেশের রিজার্ভ তলানিতে নেমে আসা, নজিরবিহীন ডলার সংকট, ডলারের বিনিময়ে টাকার অভূতপূর্ব অবমূল্যায়ন, ব্যাংকিং ও আর্থিক খাতে অব্যবস্থাপনা, অপরিণামদর্শী ভ্রান্তনীতি, লাগামহীন দুর্নীতি, বিদেশে অর্থ পাচার, ঋণখেলাপি বৃদ্ধি পাওয়া, ঋণ প্রাপ্তির অপর্যাপ্ততা, অর্থনৈতিক আয় বৈষম্য, সুশাসনের অভাব এবং গণতন্ত্র না থাকার কারণে দেশে ‘অর্থনৈতিক নৈরাজ্য সৃষ্টি’ হয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। বিএনপি মহাসচিব বলেন, সরকার তাদের চিরাচরিত ডেনিয়েল সিনড্রোম থেকে বেরিয়ে এসে আইএমএফের কাছে পাঠানো পত্রে বিরাজমান অর্থনৈতিক দুর্যোগের কথা স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে কঠিন শর্তে আইএমএফের কাছ থেকে ঋণ নিচ্ছে। বলতে গেলে তারা এখন ব্যাংক থেকে ধার করে এবং আইএমএফের ঋণের ওপর ভর করেই চলছে। দেশের অর্থনৈতিক সংকটের সরকার কেন স্বীকার করছে না জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল বলেন, এই সরকারের না দেখার প্রধান কারণ হচ্ছে তাদের কোনো জবাবদিহিতা নেই। তারা জনগণের দ্বারা নির্বাচিত নয়, তারা ভোট করে নির্বাচিত হয়ে আসেনি।
যদি নির্বাচিত হয়ে আসতো তাহলে তাকে পার্লামেন্টে জবাবদিহি করতে হতো। জনগণের সামনে জবাবদিহি করতে হতো। এখানে তারা (সরকার) সবসময় একটা মিথ্যা প্রচারণা করে, ভয়-ভীতি-ত্রাস সৃষ্টি করে, গণমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণ করে তারা সার্বক্ষণিকভাবে একটি মিথ্যা প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে গোয়েবলসের মতো। যারা ফ্যাসিস্ট হয়, যারা ডিক্টেটর হয় তাদের জন্য এই প্রচারণা জরুরি হয়- এটা মিথ্যা ধারণার মধ্যে জনগণকে রাখতে চায়। তিনি বলেন, বর্তমান গোটা ব্যবস্থায় লাভবান হচ্ছে মুষ্টিমেয় কিছু মানুষ যারা এই সরকারের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত তারা ব্যবসা-বাণিজ্যে বিভিন্ন জায়গায় লাভবান হচ্ছে এবং সো-কল্ড পলিটিশিয়ানস যারা এই সরকারের সঙ্গে জড়িত তারা লাভবান হচ্ছে। মির্জা ফখরুল বলেন, এই সরকারকে সরে যেতে হবে। এই সরকার সরে গেলেই দেশে যে ট্রাস্ট- এটা সৃষ্টি হবে। তখন এইগুলো সমস্যা সমাধানের জন্য যোগ্য যারা ব্যক্তি কাজ করতে পারেন তাদের নিয়ে এসে সমস্যা সমাধান অত্যন্ত দ্রুত করা সম্ভব হবে। সরকার সরে যাওয়া ছাড়া এটা সম্ভব হবে না। এই সরকারকে রেখে এটা করা যাবে না। কারণ এরা এত বেশি দুর্নীতিপরায়ণ হয়ে যাবে, এরা সেন্ট্রাল ব্যাংককে প্রশ্নবিদ্ধ করে ফেলেছে, এরা পুরো ইকোনমি সিস্টেম, মনিটরি সিস্টেম সবকিছু নষ্ট করে ফেলেছে। সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতার জন্য আর্থিক খাতে সংস্কার, সামষ্টিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার উন্নতি, সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালীকরণ, কর শুল্ক, আর্থিক খাত, ব্যাংকিং সেক্টর, বাজেট ব্যবস্থাপনা, বাণিজ্য নীতির সংস্কার করা আবশ্যক বলে মনে করেন বিএনপি মহাসচিব। তিনি বলেন, এখন প্রয়োজন দুর্নীতিমুক্ত আইনের শাসন এবং প্রকৃত অর্থেই জনগণের ভোটে নির্বাচিত একটি গণতান্ত্রিক সরকার। বিএনপি আশা করে বাংলাদেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠা ও আর্থিক খাতে কার্যকর সংস্কার সাধনে একটি প্রকৃত গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য আইএমএফ বিশেষ সহযোগিতার হাত বাড়াবে। সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য ইসমাইল জবিউল্লাহ ও ভারপ্রাপ্ত দপ্তর সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।