সিলেটে এত সাজে এই ভোট
টাইম সিলেট ডট কম
প্রকাশিত হয়েছে : ৬:১২:৩৬,অপরাহ্ন ২৩ জুন ২০২৩ | সংবাদটি ১৩৯ বার পঠিত
ওয়েছ খছরু, সিলেট থেকে::সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে পূর্ণশক্তি নিয়োগ করেছিল আওয়ামী লীগ। স্থানীয় নেতারা তো ছিলেনই, সঙ্গে কেন্দ্রীয় নেতারা সার্বক্ষণিক সিলেটে অবস্থান করেন। যুক্তরাজ্য থেকে উড়ে এসেছেন আরও হাজার খানেক নেতা। প্রতিপক্ষ দুর্বল হলেও সিলেটের ভোটের সাজে কোনো কমতি ছিল না। বরং রাজপথের শোডাউন জানান দিচ্ছিল ভিন্ন ভোট। কিন্তু নির্বাচন শেষে ভোটের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে অনেকেই বিস্মিত। সিলেট সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী অর্থাৎ বিজয়ী মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী পেয়েছেন ১ লাখ ১৯ হাজারের একটু বেশি ভোট। অন্যদিকে- প্রচারণা ঢিমেতালে করেও অন্য প্রার্থীরা অবিশ্বাস্য ভোট পেয়েছেন। বিএনপির কোনো প্রার্থী যেহেতু নির্বাচনে নেই, এ কারণে বিশাল ভোটের ব্যবধানের আশা ছিল সবার। শেষ পর্যন্ত ব্যবধান ছিল প্রায় ৬৮ হাজারের।
তবে- সব প্রার্থীর ভোট মিলিয়ে ব্যবধান ১৫ হাজার ভোট। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরাও কম ভোট পাননি। সব মিলিয়ে ১ লাখ ১৫ হাজার ভোট পেয়েছেন প্রতিদ্বন্দ্বীরা। এই ভোটগুলোকে আওয়ামী লীগের বিরোধী।
ভোটের দিন আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা জানিয়েছিলেন, জাতীয় পার্টির প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাবুল অনেকটা একাই নির্বাচন করছেন। এ কারণে তিনি ৩০ হাজারের মতো ভোট পেতে পারেন। আর ওই ভোটগুলো হবে বিরোধী ভোট। কিন্তু নজরুল ইসলাম বাবুল ভোট পেয়েছেন ৫০ হাজারের উপরে। জাতীয় পার্টি বিগত ৪ টার্ম সিটি নির্বাচনে অংশ নেয়নি। এ কারণে এই ভোটগুলোর মধ্যে দুই তৃতীয়াংশই বিরোধী ভোট হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। এ ছাড়া- শাহজাহান মাস্টার অপরিচিত এক প্রার্থী। তিনি পেয়েছেন ৩০ হাজার ভোট। যেটি সিলেটবাসীকে আরও অবাক করেছে। এই ভোটগুলোকে ক্ষোভের ভোট হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে। ১২ই জুন সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচন বয়কট করে সরে যান ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী মাওলানা মাহমুদুল হাসান। ভোটে না থেকেও তিনি পেয়েছেন ১২ হাজারের বেশি ভোট। বিশ্লেষকদের ধারণা- অতিমাত্রায় দুর্বল প্রার্থীদের মঙ্গে লড়াই করে আওয়ামী লীগ প্রার্থী সিলেটে জয়ী হয়েছেন। সেটি কেবল প্রার্থীর দুর্বার গতির প্রচারণার কারণে।
ভোটে আগে অবশ্য আওয়ামী লীগের প্রচারণার চেয়ে বেশি নজর কেড়েছিলেন প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী নিজেই। ফলে সিলেটের একাংশের ভোটারের কাছে তিনি জনপ্রিয়ও হয়েছিলেন। কারণ- আনোয়ার ২২শে জানুয়ারি যখন সিটি নির্বাচনে অংশ নেয়ার জন্য মাঠে নেমেছিলেন। এরপর একদিনের জন্য তিনি মাঠ ছাড়েননি। বরং তার প্রচারণার গতির কাছে সবাই অসহায় হয়ে পড়েছিলেন। এ ছাড়া দৃশ্যত আওয়ামী লীগের মধ্যে কিছুটা ঐক্যবদ্ধভাব পরিলক্ষিত হয়েছে। সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও নির্বাচনের সমন্বয়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদ মানবজমিনকে জানিয়েছেন, ভোট কিছুটা কম পড়েছে। অনেক ভোটার কেন্দ্রে আসেননি। তবে সিলেটে এই জয়টি আওয়ামী লীগের প্রয়োজন ছিল।
নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে উঠেছেন। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সিলেট আওয়ামী লীগের ভেতরে মনোমানিল্য দূর হয়েছে। এককাতারে এসে যুক্ত হয়েছেন নেতারা। সেটি জাতীয় নির্বাচন পর্যন্ত ধরে রাখতে হবে বলে জানান তিনি। আরেক সমন্বয়ক ও সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরী জানান, ‘আওয়ামী লীগ যে ভোট পেয়েছে এর ধারে কাছেও কেউ যেতে পারেননি। ভোট কম পড়েছে সেটি ঠিক নয়। বরং আওয়ামী লীগ এবার তার দলীয় ভোটে জয়লাভ করেছে। বিরোধী ভোট নৌকার বাক্সে কম এসেছে।’ তিনি জানান, ‘সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচন স্বচ্ছ হওয়ার কারণে এই ফলাফল। এখানে কাউন্সিলর প্রার্থীরাও যোগ্যতার ভিত্তিতে জয়লাভ করেছেন। মানুষ স্বতর্স্ফূত হয়ে ভোটকেন্দ্রে এসে নির্বিঘ্নে ভোট দেয়াকে সফলতা মনে করেন তিনি। এবং কোথায় কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি বলে দাবি তার। এদিকে সুশাসনের জন্য নাগরিক সুজনের সিলেট সভাপতি ফারুক আহমদ চৌধুরী জানিয়েছেন, সিলেট সিটিতে আওয়ামী লীগ প্রার্থী যে ভোট পেয়েছেন সেটি প্রত্যাশিত ছিল না। শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় আরও বেশি ভোট পাওয়া উচিত ছিল। মেয়র পদে বিরোধী ভোট তেমন পায়নি আওয়ামী লীগ।