সিলেটের পরকীয়া প্রেমিকদ্বয়ের কাণ্ড হাত-পা বেঁধে গলায় ওড়না প্যাঁচালো মনিরা
টাইম সিলেট ডট কম
প্রকাশিত হয়েছে : ২:০৯:০৪,অপরাহ্ন ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩ | সংবাদটি ২৪৭ বার পঠিত
ওয়েছ খছরু, সিলেট থেকে: ওমানে থাকেন স্বামী মিনহাজ উদ্দিন। এই সুযোগে এলাকার যুবক ফেরদৌস রহমান চৌধুরীর সঙ্গে পরকীয়ার সর্ম্পক গড়ে তুলেছিলেন মনিরা বেগম। রাত-বিরাতে প্রেমিক ফেরদৌসকে ডেকে নিয়ে আসতেন ঘরে। করতেন আমোদ-ফুর্তি। এমনকি পিতার বাড়ি হরিপুরের ৬নং কুপ এলাকায় গিয়ে প্রেমিকের সঙ্গে রাত কাটাতেন। এমন ঘটনা স্বামীর পরিবারের সদস্যরা ঠাহর করলেও প্রমাণ মিলছিলো না। গত বৃহস্পতিবার রাত ২টা। জৈন্তাপুর উপজেলার ঘাটেরছটি যাত্রাপুর গ্রাম। ওমান প্রবাসী স্বামী মিনহাজ উদ্দিন দেড় মাস আগে ছুটি কাটাতে দেশে আসেন। রাতে স্ত্রী মনিরা বেগমকে নিয়ে নিজের ঘরে ঘুমিয়ে ছিলেন মিনহাজ।
রাতে হঠাৎ করে মিনহাজের পিতা নুর মিয়া পাশের ঘর থেকে ধস্তাধস্তি ও গোঙানির শব্দ শুনতে পান।
নুর মিয়া জানান, গোঙানির শব্দ শুনে তিনি প্রথমে মনে করেছিলেন ডাকাত। ডেকে আনেন স্বজনদের। ছেলে মিনহাজের ঘরের দরোজা ভেতর থেকে বন্ধ করা ছিল। ছেলের বউকে ও মিনহাজকে ডাকেন তিনি। কিন্তু ভেতর থেকে সাড়াশব্দ মিলছিলো না। ডাকাডাকির শব্দ শুনে গ্রামের লোকজনও দৌড়ে আসেন। একপর্যায়ে ছেলের বউ মনিরা দরোজা খুলে দেন। ভেতরে প্রবেশ করে দেখেন খাটের পাশে কম্বলে ঢাকা অবস্থায় রয়েছেন মিনহাজ। কম্বল সরাতে দেখেন মিনহাজের হাত ও পা বাঁধা। মুখ দিয়ে রক্ত ঝরছিলো। অজ্ঞান হয়ে আছে। মনিরা নিশ্চুপ। কোনো কথা বলছে না। এ সময় গ্রামের লোকজন ঘর তল্লাশি করেন। একপর্যায়ে তারা দেখতে পান চুলার পাশে ছাদে ঝুলে রয়েছে এক যুবক। তাকে নামিয়ে আনেন গ্রামের মানুষ। পরিস্থিতি বুঝে সবাই ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। এ সময় গ্রামের মানুষ মনিরা ও ফেরদৌস নামের ওই যুবককে আটকে রাখেন। পরিবারের লোকজন রাতে গুরুতর অবস্থায় প্রবাসী মিনহাজ উদ্দিনকে নিয়ে যান ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে ভর্তি রয়েছেন মিনহাজ। তিনি এখনো শঙ্কামুক্ত নয়।
নুর মিয়া জানান, মিনহাজকে প্রথমে নেশা জাতীয় দ্রব্য খাইয়ে অজ্ঞান করা হয়। এরপর মনিরা ও ফেরদৌস মিলে তার হাত-পা বেঁধে ফেলে। মনিরা ওড়না দিয়ে গলায় ফাঁস লাগিয়ে হত্যার চেষ্টা করে। তিনি জানান, আমরা যখন ঘরে ঢুকি তখন দেখতে পাই মনিরার কাপড় একটি ব্যাগে ভরা। সবকিছু ঘুচিয়ে রাখা হয়েছে। মিনহাজকে হত্যার পর ফেরদৌস ও মনিরা পালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করছিল। কিন্তু তার আগে আমরা চলে আসায় কোনো অঘটন ঘটেনি। এদিকে আটক হওয়া ফেরদৌস রহমান চৌধুরীর বাড়ি পাশের গ্রাম পশ্চিম ঠাকুরের মাটি। আটকের পর ঘটনা জানতে স্থানীয়রা তাকে একটি গাছে সঙ্গে বেঁধে ফেলে। এরপর তাকে মারধর করে পুলিশে সোপর্দ করা হয়। আটকের পর ফেরদৌস স্থানীয়দের জানায়, মনিরা বেগমের সঙ্গে চলার পথে এক বছর আগে তাদের সর্ম্পক গড়ে ওঠে। প্রথমে তারা মোবাইলে কথা বলতো। হোয়াটসঅ্যাপ, মেসেঞ্জারে যোগাযোগ করতো। এরপর মনিরার ডাকে সাড়া দিয়ে সে বাড়ি আসতো। প্রায় রাতেই সে মনিরার সঙ্গে তার ঘরে থাকতো। কেউ বিষয়টি টের পায়নি। এমনকি মনিরা তার পিতার বাড়ি গেলে সেখানেও তারা একসঙ্গে রাত কাটাতো। মনিরা পরিবারের সদস্যদের কেউ কেউ বিষয়টি জানতো।
ফেরদৌস জানায়, মনিরার সঙ্গে কথা বলে মধ্যরাতে সে মিনহাজের ঘরে আসে। এরপর তারা দু’জন মিলে মিনহাজের হাত-পা বেঁধে ফেলে। ওড়না দিয়ে শ্বাসরোধ করার সময় মিনহাজ গোঙানি করলে লোকজন চলে আসে। তারা ঘরেই আটকা পড়ে। স্থানীয় চিকনাগুল ইউনিয়ন পরিষদের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার শরিফুল ইসলাম মানবজমিনকে জানান, বিষয়টি মর্মান্তিক। আর একটু হলে হয়তো মিনহাজকে জীবিত পাওয়া সম্ভব হতো না। এমন ঘটনায় এলাকার মানুষ হতবাক। রাতে খবর পেয়ে তিনি ছুটে আসেন। এরপর পুলিশকে খবর দেন। এদিকে জৈন্তাপুর থানা পুলিশ এসে রাতেই মনিরা ও ফেরদৌসকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। গতকাল দুপুরে প্রবাসী মিনহাজের পিতা নুর মিয়া বাদী হয়ে জৈন্তাপুর থানায় মনিরা ও ফেরদৌসকে আসামি করে মামলা করেন। জৈন্তাপুর থানার ওসি তাজুল ইসলাম জানান, রাতে ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে মনিরা ও ফেরদৌসকে আটক করে নিয়ে আসে। এ সময় আহত অবস্থায় প্রবাসী মিনহাজ উদ্দিনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া ২ আসামিকে আদালতে পাঠানো হয়েছে। ঘটনার তদন্ত করে ন্যায় বিচারের স্বার্থে দ্রুততম সময়ের মধ্যে আদালতে চার্জশিট প্রেরণ করা হবে বলে জানান তিনি।
মিনহাজের পরিবারের সদস্যরা জানায়, বিয়ের পর মিনহাজ যখন মনিরাকে তাদের বাড়িতে রেখে যায় এরপর থেকেই মনিরার জীবন-যাপনে উচ্ছৃঙ্খলতা দেখা দেয়। সে মাসের অর্ধেক সময় পিতার বাড়িতে থাকতো। তার দাবি মতো আলাদা ঘর তৈরি করে দেয়া হয়েছে। মিনহাজ ছুটি কাটাতে দেশে এসেছে। কিছু দিন পর সে আবার ওমান যাওয়ার কথা রয়েছে। কিন্তু তার আগেই প্রেমিককে নিয়ে মনিরা এ ঘটনা ঘটিয়েছে। সে শ্বশুর, শাশুড়ি ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সব সময় খারাপ আচরণ করতো। এলাকার যুবকরা জানায়, প্রায় সময় বোরকা পরে ফেরদৌসের সঙ্গে মনিরা জাফলং ও সিলেটে বেড়াতে যেতো। পিতার বাড়িতে নাইওর থাকা অবস্থায় সে ফেরদৌসকে নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে যেতো।