সকাল বেলার সুখ জাগানিয়া স্মৃতি!
টাইম সিলেট ডট কম
প্রকাশিত হয়েছে : ১০:৪০:৪২,অপরাহ্ন ১০ জানুয়ারি ২০২০ | সংবাদটি ৫৯৬ বার পঠিত
সালমান ফরিদঃ সাংবাদিক আমি তখন ছোট্টবেলা পার করছি। (১৯৮২-৮৩ সালের পরের কথা) এই ছোট্টবেলা মানে তখনও স্কুলের খাতায় সম্ভবত নাম উঠেছে বা উঠেনি; ঠিক সময়টা তখনকার। ছবিতে আমার পাশে যে পিচ্ছিগুলান দাঁড়ানো, তাদের সময়!
শীতের সকাল।
প্রতিদিন ভোরে ঘুম থেকে মকতবে যেতে হত। মকতব মানে মসজিদে। তখন ঘরে না ছিল বিদ্যুৎ, না ছিল বাথরুম, না ছিল ভেসিন!
তাই মকতবে যাবার আগে যখন পুকুরঘাটে হাতমুখ ধুতে যেতাম প্রায়দিন ঘরের উঠোনে ফিরে এসে দেখতাম, একজন লোক (চচিন্ড দাস কাকা, আমার প্রাইমারি স্কুলের সহপাঠীর বাবা) টিনের বাক্স থেকে বের করে নাড়ু দিচ্ছেন। ছোটছোট, লালছে, গরম গরম! দাদি সেটি একটা ঝুড়িতে নিচ্ছেন। এগুলো তখন নতুন গোলায় ওঠা ধানের বিনিময়ে বিক্রি হত। দেয়া শেষে কোনকোন দিন কাকা বলতেন, ধান লাগত নায়। চাচায় দিবা!
এই চাচা মানে আমার দাদির বাবা। মানে দাদার শ্বশুর! আমরা তাকে ‘বড় আব্বা’ বলে ডাকতাম। একগ্রাম পরেই তাদের গ্রাম! তারা বৃটিশ আমলে জমিদারও ছিলেন। চচিন্ড কাকা আমাদের গ্রামের হলেও নাড়ু বিক্রি করতেন বড় আব্বাদের গ্রাম মিরেরচরে। বড় গ্রাম, পাশেই হাওর। ধানের অভাব নেই। মূল্যের চেয়ে বেশি দান পাওয়া যেত! সে জন্য সেই গ্রামের প্রতি ছিল বিশেষ আগ্রহ!
সেখানে গেলে তার সাথে দেখা হলেই বড় আব্বা আগেরদিন মূল্য (ধান) পরিশোধ করে বলে দিতেন, কাইল আওয়ার সময় আমার ফুড়ির বাড়িত একসের ধানোর লাড়ু (নাড়ু) দিয়া আইও!
সপ্তাহে প্রায় ৪ দিনই এরকম হতো। মাঝে মাঝে কাকা আসতেন না। কিন্তু ছোটবেলা হাতে বানানো নাড়ুর সে কি টেস্ট! কোনকোন দিন নদীর পারে গিয়ে তার অপেক্ষা করতাম। পেলে বাড়ি নিয়ে এসে দাদিকে বলে নাড়ু নিতাম!
আজও সেই স্মৃতি তাড়িয়ে বেড়ায়। আজ খানিক আগে সকালে যখন আমার ছোটবেলার বয়সী ভাগ্না, মি. বাংলাদেশ সাইফ এবং সাইম আর আরিয়ানকে নিয়ে এই শীতের সকালে নদীর পাড়ে দাঁড়ালাম, তখন মনে পড়লো সেই সময়ের কথা। নাড়ুর কথা। বড় আব্বা, দাদির কথা। চচিন্ড কাকার কথা! পথের পানে খোঁজলাম চচিন্ড চাচাকে! হয়তো দেখবো নাড়ুর টিন কাঁধে করে আড়াল থেকে ভেসে আসছেন তিনি!
নাহ! কাউকেই খুঁজে পেলাম না! বড় আব্বা নেই। দাদা-দাদি গত হয়েছেন সেই কবে! চচিন্ড কাকার চিতা হয়েছিল কোথায় সেটি মনে আছে আবছা আবছা! আগের মত গোলা ভরা ধানও দেখি না! এমনকি নাড়ু সংস্কৃতিও এখন আর অবশিষ্ট নেই! শুধু কালের স্রোতে ভেসে আছি আমি এই নালায়েক!
পথের পানে খুঁজে পেলাম আমাকে। আমিই একা অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছি। বুকটা চ্যাত করে উঠলো। নাড়ুর জন্য। বড় আব্বা, দাদি-দাদা, চচিন্ড কাকার জন্য! এবং…