বড়লেখায় বড়ভাইয়ের জন্য ছোট ভাইয়ের কিডনি দান
ভ্রাতৃত্বের বন্ধনের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত
টাইম সিলেট ডট কম
প্রকাশিত হয়েছে : ৬:০৭:৪৫,অপরাহ্ন ০৮ জুলাই ২০২০ | সংবাদটি ৫৬০ বার পঠিতএম. এম আতিকুর রহমান :: বড় ভাইয়ের প্রতি অঘাধ ভালোবাসায় জীবনের মায়া তুচ্ছ করে নিজের একটি কিডনি দিয়ে দেওয়ার অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে চলেছেন মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার ছয়ফুল হোসেন (২৬) নামের এক যুবক।
জটিল কিডনীরোগে আক্রান্ত বড় ভাইকে বাঁচাতে নিজের একটি কিডনি দান করবেন তিনি। সব কিছু ঠিক থাকলে আগামী মাসের মধ্যে কিডনি প্রতিস্থাপন সম্পন্ন হবে বলে জানিয়েছেন ছয়ফুল হোসেনের বড় ভাই মিলাদ হোসেন।
জানা গেছে, মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার দক্ষিণভাগ উত্তর (কাঠালতলী) ইউনিয়নের বাসিন্দা বদরুল ইসলাম কয়েক বছর ধরে দুবাই প্রবাসী ছিলেন। প্রায় ৬ মাস আগে হঠাৎ শারীরিক অসুস্থতা নিয়ে সেখানকার চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন তিনি। পরীক্ষা নিরীক্ষার পর চিকিৎসকেরা জানান তাঁর দুটি কিডনিই অকেজো হয়ে গেছে। এই অবস্থায় বদরুল দেশে চলে আসলে ডায়ালাইসিস সহ অন্যান্য চিকিৎসা চলতে থাকে। একসময় চিকিৎসকরা জানান দ্রুত একটি কিডনি প্রতিস্থাপন করতে না পারলে তাকে বাঁচানো যাবে না। বদরুলের এমন দুসংবাদে দিশেহারা হয়ে পড়েন তার পরিবার। কে দিবে তাঁকে একটা কিডনি! কার দয়ায় বাঁচবে বদরুলের প্রাণ। এমন হতাশার মাঝেই বদরুলের আপন ছোট ভাই ছয়ফুল এগিয়ে আসেন। চিকিৎসকদের জানান, তিনি কিডনি দিতে ইচ্ছুক। চিকিৎসকেরা ‘ছয়ফুলের সব মেডিকেল পরীক্ষা করে তাকে কিডনি দানে সক্ষম জানান।
অপরদিকে কিডনী পাওয়া গেলেও দুশ্চিন্তার কালো মেঘ যেনো সরেনি। নতুন কিডনি প্রতিস্থাপনে ২০-২৫ লক্ষ টাকার প্রয়োজন। কিন্তু এত টাকা কোথায় পাবে বদরুলের পরিবার! ইতিমধ্যে বদরুলের চিকিৎসায় তার পরিবার নিজেদের সর্বোচ্চটা ঢেলে দিয়েছে। এখন তাদের পক্ষে এতো টাকা যোগাড় করা সম্ভব নয়।
নিজেদের সবটুকু বিলিয়ে দিয়ে যখন নিরুপায় বদরুলের পরিবার তখন সবার পরামর্শে বাধ্য হয়ে সমাজের বিত্তবানদের কাছে সহযোগীতা চান বদরুল ইসলামের বড় ভাই মিলাদ হোসেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইয়ের জন্য সাহায্য চেয়ে একটা ভিডিও বার্তা দিয়ে পোষ্ট করেন।এরপর দেশে বিদেশে অবস্থানরত অনেকেই ভিডিওটি শেয়ার করেন।ব্যাপক শেয়ারের ফলে ভাইরাল হয় মানবিক আবেদনের ভিডিওটি। দেশে বিদেশের অনেকেই সহযোগীতার হাত বাড়িয়ে দেন। শিক্ষা ও সেবা ফাউন্ডেশন কাঠালতলী’র উদ্যোগে বদরুলের চিকিৎসার অর্থ সংগ্রহে গঠন করা হয় তহবিল। এরপর মাত্র ২ সপ্তাহের ব্যবধানে বদরুলের জন্য গঠিত তহবিলে প্রায় ২৫ লক্ষ টাকা জমা পড়ে।
তহবিলে চিকিৎসার খরচ জমা পড়ার পর কিডনি প্রতিস্থাপনের জন্য ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে আইনি পক্রিয়া। সব প্রক্রিয়া সেরে আগামী মাসের ভিতরে ঢাকায় কিডনি প্রতিস্থাপন করা হবে বলে জানিয়েছেন ছয়ফুল হোসেন ও বদরুল ইসলামের বড় ভাই মিলাদ হোসেন।
আজ বিকেলে কিডনীরোগী বদরুলের বড় ভাই মিলাদ হোসেন জানান , আমার ভাইয়ের চিকিৎসার জন্য গঠিত তহবিলে ইতিমধ্যে ২৫ লক্ষ টাকা জমা পড়েছে।আমার পরিবারের পক্ষ থেকে যারা সাহায্য সহযোগীতা করেছেন তাদের কাছে চিরকৃতজ্ঞ। বর্তমানে কিডনি প্রতিস্থাপনের জন্য আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন হচ্ছে। ইনশাআল্লাহ এক মাসের মধ্যে আমার ভাইয়ের কিডনি প্রতিস্থাপন করা হবে। আমি আমার দুই ভাইয়ের জন্য সকলের কাছে দোয়া প্রার্থী।
কিডনি ডোনার ছয়ফুল হোসেন বলেন আমার বড় ভাই দীর্ঘদিন থেকে প্রবাসে কাজ করে আমাদের পরিবার চালাচ্ছেন। আমাদের চাওয়া পাওয়া পূরন করেছেন। এখন আমার সেই ভাই মৃত্যুশয্যায়। এই অবস্থায় আমার চোখের সামনে আমার ভাই চলে যাবেন তা আমি নিজ চোখে দেখতে চাই না। ভাইয়ের এমন করুণ অবস্থা দেখে আমি সিদ্ধান্ত নেই আমার একটি কিডনি দিয়ে ভাইকে বাঁচাবো। আমার একটা কিডনি দিলে যদি আমার ভাই বেঁচে যান তবে আমি কেনো একটা কিডনি দেবো না। আমার কিডনির মাধ্যমে একটা অবুঝ শিশু পিতা হারা হবেনা, একজন মহিলা বিধবা হবেন না। এর চেয়ে বড় পাওয়া আমার কাছে আর নেই। আমি সবার কাছে আমার ও ভাইয়ের জন্য দোয়া চাই। ভাতৃত্বের বন্ধন অটুট থেকে সাফল্যের দিকে এগিয়ে যেতে সহযোগী সকলের নিরন্তর প্রয়াস বাস্তবতায় রূপ পাক এই শুভকামনা মনেপ্রাণে।