অ্যাঞ্জেলোর সেঞ্চুরি, চাপে বাংলাদেশ

টাইম সিলেট ডট কম
প্রকাশিত হয়েছে : ২:৪২:০৯,অপরাহ্ন ১৬ মে ২০২২ | সংবাদটি ৩৪৬ বার পঠিত
ইশতিয়াক পারভেজ, চট্টগ্রাম থেকে,বাংলাদেশের সামনে টেস্টে ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াই। তাই টাইগাররা মরিয়া ছিলেন দারুণ কিছু উপহার দিয়ে নিজেদের আত্মবিশ্বাস ফেরাতে। কিন্তু বিধিবাম! শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টেস্টেই চাপে বাংলাদেশ। অন্যদিকে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে বিধ্বস্ত শ্রীলঙ্কার সামনেও ছিল অভিন্ন লক্ষ্য। এই চ্যালেঞ্জে চট্টগ্রাম টেস্টের প্রথম দিনটা সফরকারীরা দারুণভাবে কাজে লাগিয়েছে। টসে জিতে ব্যাট করতে নেমে ২৫৮ রান তুলেছে মাত্র ৪ উইকেট হারিয়ে। আর সাগরিকার মরা পিচে টাইগার বোলাররা নিজেদের সেরাটা দিতে ব্যর্থ। তবে লঙ্কানদের এমন দিন উপহার দিয়েছেন তাদের অভিজ্ঞ ব্যাটার অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস। টেস্ট ক্যারিয়ারে এর আগে ১১ সেঞ্চুরির মালিক ছিলেন তিনি। তবে বাংলাদেশের বিপক্ষে একটি সেঞ্চুরিও ছিল না
প্রাপ্তি বলতে ছিল মাত্র একটি ফিফটি। তবে গতকাল দারুণ এক লড়াকু ইনিংসে তুলে নিয়েছেন টাইগারদের বিপক্ষে প্রথম সেঞ্চুরি। প্রথম দিন শেষে অপরাজিত আছেন ২২৩ বল খেলে ১১৪ রানে। আজ দ্বিতীয় দিনটা তার ভরসাতেই ফের লড়াইয়ে নামবে লঙ্কানরা। এই অভিজ্ঞ ব্যাটার যে বাংলাদেশ অধিনায়ক মুমিনুল হক সৌরভকে ভোগাতে পারেন এমনটাই অনুমেয়। তবে টাইগারদের বোলিং কোচ শ্রীলঙ্কার এক সময়ের তারকা স্পিনার হেরাথ বলছেন প্রথম দিন শেষে দুই দলই সমানে সমান। তিনি বলেন, ‘এটা অনেকটা সমান পারফরম্যান্স। তারা ভালো ব্যাট করেছে, আমরাও ভালো বল করেছি। কিছুটা কৃতিত্ব ওদেরও প্রাপ্য, কারণ ওরা ভালো ব্যাট করেছে। বিশেষত অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস দুর্দান্ত একটা সেঞ্চুরি করেছে।’
টসে জিতে ব্যাট করতে নেমে যদিও শুরুটা ভালো হয়নি লঙ্কানদের। ৬৬ রানে হারায় ২ উইকেট। তবে ম্যাথিউসের সঙ্গে দারুণভাবে দলের হাল ধরেন কুশল মেন্ডিজ। তার আগে ৭৭ বলে দুই ছক্কায় দিনেশ চান্দিমাল ৩৪ রান করে হয়েছেন অফস্পিনার নাঈম হাসানের দ্বিতীয় শিকার। প্রায় এক বছর পর বাংলাদেশ দলে ফেরা নাঈম দলকে উপহার দেন প্রথম উইকেট। ৯ রান করা লঙ্কান অধিনায়ককে তিনি দেখান সাজঘরের পথ। তবে এমন পরিস্থিতিতে অধিনায়কের প্রত্যাশা পূরণে দলের হাল ধরেন ম্যাথিউস ও কুশল। দু’জন গড়ে তোলেন ২১০ বলে ৯২ রানের জুটি। তারা যখন টাইগারদের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলছিলেন তখন তৃতীয় সেশনের প্রথম বলেই মেন্ডিসকে আউট করে স্বস্তি ফেরায় স্পিনার তাইজুল ইসলাম। এরপর দলকে চতুর্থ উইকেট উপহার দেন করোনার ধাক্কা সামলে মাঠে ফেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। ৬ রান করা ধনায়ঞ্জয়া ডিসিলভাকে আউট করে দলকে দেখান আশার আলো। তবে দিনের বাকিটা সময় চান্ডিমালকে নিয়ে স্বাগতিকদের হতাশায় ডুবিয়ে দলকে এগিয়ে নিয়েছেন ম্যাথিউস। এই কন্ডিশনে কেমন ব্যাটিং প্রয়োজন তা দেখিয়েছেন তিনি। অভিজ্ঞ মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান বাজে বলে মেরেছেন, ভালো বল ঠেকিয়ে গেছেন। তবে সব সময়ই চেষ্টা করেছেন রানের চাকাটা সচল রাখতে। নেননি বড় কোনো ঝুঁকি। চান্ডিমাল দুই ছক্কায় চাপ সরিয়ে নেয়ার পর এগিয়ে যাচ্ছেন সাবলীলভাবে। এরই মধ্যে ম্যাথিউসের সঙ্গে ১৪৮ বলে গড়েছেন ৭৫ রানের জুটি। ১৬ ওভারে ৭১ রান দিয়ে ২ উইকেট নিয়েছেন অফ স্পিনার নাঈম হাসান। চমৎকার কিছু ডেলিভারির সঙ্গে বেশকিছু আলগা বোলিং করে ওভার প্রতি প্রায় সাড়ে চার করে রান দিয়েছেন তিনি। নিখুঁত লাইন-লেংথে বোলিং করে ১৯ ওভারে কেবল ২৭ রান দিয়ে একটি উইকেট নিয়েছেন সাকিব আল হাসান। আরেক বাঁহাতি স্পিনার তাইজুল ইসলাম ৩১ ওভারে ৭৩ রান দিয়ে নেন ১ উইকেট।
স্পিনারদের সাফল্যে টাইগারদের কোচ হেরাথ সন্তুষ্ট। বিশেষ করে সাকিব ও নাঈমকে নিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের খুব বেশি সামর্থ্যবান খেলোয়াড় নেই। আপনি যদি দেখেন, প্র্যাক্টিস ছাড়াই সে প্রথম বলেই নিজের ছাপ রেখেছে। যেটা খুব ভালো। এটা হয়েছে আত্মবিশ্বাসের কারণে। এটা দল ও প্লেয়ারদের আত্মবিশ্বাস দেয়। যখন সাকিব এখানে থাকে, আমাদের দল ভারসাম্যপূর্ণ থাকে। না হয় আমাদের বিশেষ একজনকে খুঁজে বের করতে হয়- যে বল ও ব্যাট করতে পারে। যদি সাকিব খেলে, ভারসাম্য থাকবে সব সময়। আমি যেটা বলেছি, সে খুব ভালো বল করেছে আজ, সবচেয়ে ইকোনমিক্যালও ছিল। আমি তার ব্যাপারে শতভাগ আত্মবিশ্বাসী। এমনকি প্র্যাক্টিস ছাড়াও সে কিছু করতে পারে। এছাড়াও আপনারা যেমন বলেছেন সে (নাঈম) গত ১৮ মাসে খুব বেশি ক্রিকেট খেলেনি। কিন্তু প্র্যাক্টিস করেছে। তার কিছুটা আত্মবিশ্বাস দরকার ছিল, সৌভাগ্যবশত সে প্রথম ওভারেই উইকেট পেয়ে গিয়েছিল। সেখান থেকেই ও আত্মবিশ্বাসটা পেয়েছে।’
স্পিনাররা ভালো করলেও দারুণ হতাশ করেছে পেস বিভাগ। ইবাদতকে বাদ দিয়ে একাদশে জায়গা করে নেয়া সৈয়দ খালিদ আহমেদ ১১ ওভার বল করে দিয়েছেন ৪৫ রান। ১৩ ওভারে শরিফুল ইসলাম অবশ্য রান খরচ করেছেন তুলনামূলক কম। তিনি দিয়েছেন ৩৮ রান। দু’জনেই উইকেট শূন্য আছেন।