পরিবেশ নিয়ে চিন্তিত আরিফ
টাইম সিলেট ডট কম
প্রকাশিত হয়েছে : ৪:৪২:২১,অপরাহ্ন ১৫ মে ২০২৩ | সংবাদটি ১৫৮ বার পঠিতইভিএমে ভোট। আওয়ামী লীগের প্রার্থীও নতুন; অচেনা। বিএনপিও নেই নির্বাচনে কেমন হতে পারে সিলেটের ভোট; প্রশাসনের নিরপেক্ষতা নিয়ে আছে প্রশ্ন। সর্বোপরি পরিবেশ নিয়ে শঙ্কা। এসব বিষয় এখনই ভাবিয়ে তুলেছে মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীকে। ডেডলাইন ২০শে মে। এদিনই তিনি জানিয়ে দেবেন চূড়ান্ত ফয়সালা। ভোটে আছেন কি নেই- সেই ফয়সালার দিকে তাকিয়ে সবাই। আওয়ামী লীগেও এ নিয়ে আগ্রহ কম নয়। আরিফ কী করবেন- এ প্রশ্নের উত্তর জানার পর সাজানো হবে সিলেট সিটির নির্বাচনী ছক।
এখনো ধোঁয়াশা। আরিফ নির্বাচনে এলে এক ছক, না এলে ভিন্ন ফর্মুলা। এমন ভাবনাও দলটির নীতিনির্ধারক মহলে। তবে আরিফ এখনো মুখ ফুটে কিছু বলছেন না।
সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। তিনি বিএনপি’র কেন্দ্রীয় নেতা। পরিচিত মুখ। সিলেটের শীর্ষ রাজনীতিকদের একজন। এখন সিলেটে বিএনপি’র নীতিনির্ধারণী মহলে তার অবস্থান। বিগত দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনে তিনি লড়াই করে হারিয়েছিলেন সিলেট আওয়ামী লীগের শক্তিশালী প্রার্থী ও সাবেক মেয়র বদরউদ্দিন আহমদ কামরানকে। দুই বারের মেয়র হওয়ার কারণে সিলেটে তার ভোটব্যাংকও বিশাল। একসময় কামরানের অধীনেই ছিল সেই ভোটব্যাংক। এখন এই ভোটব্যাংক আরিফের দখলে। এবারের নির্বাচনে মেয়র আরিফের সামনে দুই চ্যালেঞ্জ। একটি হচ্ছে; নিজের দল বিএনপি’র মতামত নেয়া। কিন্তু বিএনপি সিদ্বান্তে অনড়। এই সরকারের অধীনে দল নির্বাচনে যাবে না। বিএনপি’র সিদ্ধান্ত নিয়ে ভাবছেন আরিফ। এখনো হাতে সময় আছে এক সপ্তাহের বেশি।
অন্যটি হচ্ছে; জনগণের মতামত। সেটিও নিচ্ছেন তিনি। আড়ালে-আবডালে সবার সঙ্গেই আলোচনা হচ্ছে তার। তবে জনগণের মতামতে দ্বিধাদ্বন্দ্বে আরিফ। ঘনিষ্ঠজনেরা জানিয়েছেন, জনগণের কাছ থেকে ছাড় পাচ্ছেন না আরিফ। নির্বাচন করার চাপ আছে তার উপর। এমনকি সিলেট বিএনপি’র শীর্ষ কয়েকজন নেতা ছাড়া দলের অন্যরাও প্রার্থী চাচ্ছেন মেয়র আরিফকে। সিলেটের বিএনপি দলীয় কাউন্সিলররাও আরিফের পক্ষে। ইতিমধ্যে কাউন্সিলররা নিজেদের এবং মেয়র আরিফের প্রার্থিতা নিয়ে দফায় দফায় আলোচনা করেছেন। এ নিয়ে কথা বলেছেন তারা মেয়র আরিফের সঙ্গেও। কারণ আরিফ নির্বাচন না করলেও তারাও শেষ মুহূর্তে প্রার্থী থাকতে পারবেন না।
সিলেটে বিএনপি’র অবস্থান আগের তুলনায় অনেক শক্তিশালী। নেতাকর্মীদের মতে, দলের এই শক্তিশালী অবস্থার পেছনে ক্রীড়নক হিসেবে কাজ করেছেন বিএনপি দলীয় নির্বাচিত জনপ্রতিধিরা। সাংগঠনিক অবস্থার পাশাপাশি এসব জনপ্রতিনিধিরা জনগণ সম্পৃক্ত থাকায় দলের কর্মী-সমর্থকরা তাদের পাশে পাচ্ছেন। বিএনপি দলীয় কয়েকজন কাউন্সিলর মানবজমিনকে জানিয়েছেন- ‘তারা মাঠ ছাড়ছেন না। ভোটে সক্রিয় রয়েছেন। শেষ পর্যন্ত অপেক্ষায় থাকবেন। সিলেটের প্রেক্ষাপট বুঝাতে কেন্দ্রেও দুতিয়ালি করছেন সিলেটের অনেক নেতা। দলের পাশাপাশি বিএনপি দলীয় জনপ্রতিনিধিরা জনগণের কাছেও দায়বদ্ধ। এ কারণে মেয়র আরিফের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর তাদের প্রার্থিতাও।
মেয়র আরিফ নির্বাচনে না থাকলে বিএনপি’র অনেক জনপ্রিয় কাউন্সিলররা ভোটের মাঠ থেকে সরে যেতে পারেন। এতসব হিসাবনিকাশের মধ্যে মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী প্রশাসনকে নিয়ে চিন্তিত। গত শনিবার রাতে তার বাসভবনের কার্যালয়ে বসে কথা হয় মানবজমিনের সঙ্গে। জানালেন- ‘দলীয় সিদ্ধান্ত বিবেচনায় রাখছি। পাশাপাশি সিলেটের জনগণের সঙ্গে কথা বলছি। তাদের মতামতও নিচ্ছি। সবার মতামতের ভিত্তিতেই সিদ্ধান্ত নেবো।’ মেয়র আরিফ জানান- ‘শুরু থেকে যে আশঙ্কা করেছিলাম সেটিই ঘটতে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে অতি উৎসাহী পুলিশ কর্মকর্তারা নির্বাচনকে সামনে রেখে সিলেটে ব্যাপক ধরপাকড় চালিয়েছেন। বিএনপি’র নেতাকর্মীর বাড়ি বাড়ি গিয়ে তল্লাশি, গ্রেপ্তার চালিয়েছেন।
এতে করে সিলেটে ভোটের মাঠে আতঙ্ক বিরাজ করছে।’ তিনি বলেন- নির্বাচনে এমন পরিবেশ যে হবে না, এর গ্যারান্টি কী। কে দেবে সুষ্ঠু নির্বাচনের নিশ্চয়তা। পরিস্থিতি এমন যে, জোরপূর্বক একজন প্রার্থীকে জয়লাভ করাতে আগে থেকেই সবকিছু প্রস্তুতি নিয়ে রাখা হয়েছে।’ তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন- ‘তাহলে তো আর ভোটের প্রয়োজন নেই। টেন্ডারের মাধ্যমেই প্রার্থী বাছাই করে নিলে ভালো হতো। এসব ঘটনা সিলেটের সম্প্রীতিতে স্পষ্টত আঘাতই বলে মনে করেন আরিফ। এজন্য নির্বাচনকালীন পরিবেশ নিয়ে তার সংশয় কাটছে না।’ আরিফ জানান, ‘ইভিএম ভালো মেকানিজম বুঝেন এমন দু’জন কর্মকর্তাকে ঢাকা থেকে সিলেটে আনা হয়েছে। সবকিছু আগে থেকেই সাজিয়ে রাখা হচ্ছে। এর আগে সিলেটের পুলিশ কমিশনারসহ ৬ থানার ওসিকে রদবদল করা হয়েছে বলে জানান আরিফ।’