সিলেটে কেন্দ্রে ভোটার আসা নিয়ে যে শঙ্কা
টাইম সিলেট ডট কম
প্রকাশিত হয়েছে : ২:৪২:৪৩,অপরাহ্ন ২০ জুন ২০২৩ | সংবাদটি ২১১ বার পঠিত
ওয়েছ খছরু, সিলেট থেকে ::একে তো বিএনপি নির্বাচনে নেই। বর্তমান মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীও প্রার্থী হননি। তার উপর নির্বাচনে শেষ সময়ে সিলেটের ট্র্যাডিশনাল বৃষ্টি। অনেক ভোটকেন্দ্রে পানি ওঠার উপক্রম। ফলে আগামীকালের সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রে ভোটার আসা নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। গতকাল থেকে সেই ভাবনায় প্রার্থীরাও চিন্তিত হয়ে পড়েছেন। এরই মধ্যে শেষ হয়েছে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা। এই প্রচারণায় ছিল খামতি। শেষ দিনে বিকাল পর্যন্ত প্রার্থীরা ঘর থেকে বের হতে পারেননি।
কাউন্সিলর প্রার্থীদের শোডাউনের প্রস্তুতি থাকলেও তারা করতে পারেননি। আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে- সিলেটে বৃষ্টি থাকবে আরও দু’দিন।
বিজ্ঞাপন
ভোটের দিন ২১শে জুন সিলেটে বৃষ্টি হবে বলে পূর্ভাবাস জানান দিয়েছে। এবার সিলেট সিটিতে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনের আশা করেছিলেন সবাই। সিলেট সিটিতে বিএনপি’র বর্তমান মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী ছিলেন বর্তমান মেয়র।
সহজেই বিএনপি কিংবা আরিফ সেই অবস্থান ছেড়ে দেবেন সেটি অনেকেই ভাবনায় নেননি। তবে- ২০শে মে মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচন বয়কটের ঘোষণা দিয়ে সরে যান। এরপর থেকে নিষ্প্রাণই ছিল নির্বাচন। মধ্যখানে এসে নির্বাচনে কিছুটা আমেজ সৃষ্টি করেছিলেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী মাওলানা মাহমুদুল হাসান ও জাতীয় পার্টির প্রার্থী শিল্পপতি নজরুল ইসলাম বাবুল।
নির্বাচনে ৮ জন মেয়র প্রার্থী থাকলে আওয়ামী লীগ প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী ছাড়া জাতীয় পার্টি ও ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী ছিলেন আলোচনায়। ১২ই জুন বরিশাল সিটি নির্বাচনে হাতপাখার প্রার্থী আক্রান্ত এবং পরবর্তীতে সিইসির মন্তব্যের প্রেক্ষিতে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন হাতপাখার প্রার্থী মাওলানা মাহমুদুল হাসান। তিনি সরে যাওয়ার পর সিলেট সিটি নির্বাচন আরও প্রাণহীন হয়ে পড়ে।
এখনো প্রার্থী হিসেবে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর সঙ্গে লড়াইয়ে মাঠে আছেন জাতীয় পার্টির প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাবুল। তিনি মাঠে থাকলেও প্রচারণায় তেমন জৌলুস দেখাতে পারেননি। সংকোচিত অবস্থায়ই তিনি প্রচারণা চালিয়েছেন। নির্বাচনে প্রতিশ্রুতির চেয়ে পরিবেশ নিয়ে বেশি কথা বলেছেন। এরপরও তার তরফ থেকে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার আবহ তৈরি করতে পারেননি। তবে জাতীয় পার্টির আশা বিরোধী বলয়ের ভোট নিয়ে।
ওই ভোট তার বাক্সে পড়লে জয়ের সম্ভাবনা দেখছেন তিনি। নির্বাচনের দিন দুটি বিষয় নিয়ে চিন্তিত বাবুল। যদিও তিনি বলেছেন আগামীকালের ভোটে কেন্দ্রে আসবে ভোটার। কিন্তু শেষ মুহূর্তে তিনিও ভোটার উপস্থিতি নিয়ে শঙ্কায় পড়েছেন। মানবজমিনকে জানিয়েছেন- বৃষ্টি এবং ভোটকেন্দ্রের পরিবেশ দুটো নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে রয়েছেন ভোটাররা। ভোটের পরিবেশ শান্তিপূর্ণ হলে হয়তো বৃষ্টি উপেক্ষা করে কেন্দ্রে ভোটাররা আসতে পারেন। সেটি নির্ভর করছে প্রশাসনের নিরপেক্ষতার উপর।
তিনি জানান- যদি পরিবেশ স্বাভাবিক ও শান্তিপূর্ণ না হয় তাহলে ভোটাররা কেন্দ্রে না-ও আসতে পারেন। সবকিছু নির্ভর করছে নির্বাচন কমিশনের উপর। তবে- এখন পর্যন্ত ভোটের পরিবেশ তার পক্ষে নেই বলে জানান। ভোটের মাঠে নানাভাবে চোখ রাঙানি আছে। আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী এবার সিলেটে প্রচারণায় গতি দেখিয়েছেন।
আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীর চেয়েও তিনি ছিলেন প্রচারণায় এগিয়ে। এমনকি বৃষ্টি হলেও তিনি মাঠে সরব থেকেছেন। ভোটার কেন্দ্রে আসবে বলে আশাবাদী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। তিনি জানিয়েছেন, কেন্দ্রে ভোটার আসবে। নৌকার পক্ষে জনসমর্থন জানাতে বৃষ্টি হলেও দলমত নির্বিশেষে সব মানুষ কেন্দ্রে আসবেন। এবং আগামীকাল উৎসবমুখর পরিবেশে এসে ভোটাররা ভোট দিয়ে যাবেন।
সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ৪২টি ওয়ার্ডে এবার কাউন্সিলর প্রার্থী হয়েছেন ৩৬০ জন। এর মধ্যে নতুন ১৫টি ওয়ার্ডে এবার ভোটের উৎসব বেশি। তবে- নির্বাচনে বৃষ্টি ও পরিবেশ দুটো নিয়েই শঙ্কায় কাউন্সিলর প্রার্থীরা। ২০নং ওয়ার্ডের ৪ বারের কাউন্সিলর ও এবারের প্রার্থী আজাদুর রহমান আজাদ গতকাল বিকালে মানবজমিনকে জানিয়েছেন, ‘বৃষ্টি একটা ফ্যাক্টর। আমরা রিকশার ব্যবস্থা করছি। যদি ভারী বর্ষণ হয় তাহলে হয়তো ভোটারদের কেন্দ্রে আনা কষ্টকর হতে পারে। আমরা চেষ্টায় আছি। তবে- নির্বাচনের পরিবেশ ভালো রয়েছে বলে জানান তিনি।’
শুধু বৃষ্টি নয় সিলেটের ভোটের পরিবেশ নিয়ে শঙ্কায় আছেন সাবেক বিএনপি নেতা ও ৪ বারের কাউন্সিলর ফরহাদ চৌধুরী শামীমও। ৬নং ওয়ার্ডের ওই প্রার্থী জানিয়েছেন, আমার ভোটাররাও যদি নির্বিঘ্নে নিরাপদে কেন্দ্রে আসতে পারে এবং ভোট দিয়ে নিরাপদে বাড়ি ফিরে যাওয়ার নিশ্চয়তা পায় তাহলে তারা কেন্দ্রে আসবে।
প্রশাসন ও সরকারি দল থেকে নিরাপত্তার নিশ্চয়তা থাকলে ভোটাররা কেন্দ্রে আসবে বলে জানান তিনি। নতুন অর্ন্তভুক্ত হওয়া ৩৪নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী ও জাতীয়া পার্টি নেতা সেলিম আহমদ জানিয়েছেন, তার ওয়ার্ডে এবার প্রথমবারের সিটি নির্বাচনে ভোট দেবেন ভোটাররা। যদি বৃষ্টি হয় তাহলে ভোটার উপস্থিতি কম হতে পারে। তবে- তাদের পক্ষ থেকে ভোটার কেন্দ্রে আনতে সব ধরনের উদ্যোগ থাকবে।
সিলেটে ভোটের পরিবেশ নিয়ে শঙ্কামুক্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটার্নিং অফিসার ফয়সল কাদের। তিনি গতকাল ভোটারদের কেন্দ্রে আসার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, ভোটের পরিবেশ স্বাভাবিক থাকবে। ১৯২টি ভোটকেন্দ্রেই সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হচ্ছে। সুতরাং ভোটাররা যাতে নিরাপদে কেন্দ্রে এসে ভোট দিতে পারেন সেই ব্যবস্থাই করা হচ্ছে।