রায়হান হত্যার ঘটনায় আদালতে তিন পুলিশের ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি
টাইম সিলেট
প্রকাশিত হয়েছে : ১১:৫৮:২৩,অপরাহ্ন ১৯ অক্টোবর ২০২০ | সংবাদটি ৩২৪ বার পঠিতসিলেটের কতোয়ালী থানাধীন বন্দরবাজার ফাঁড়িতে পুলিশের নির্যাতনের ফলে রায়হান আহমদ নিহতের ঘটনায় আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন ৩ পুলিশ সদস্য। এই তিন কনস্টেবল ১০ অক্টোবর রাতে বন্দরবাজার ফাঁড়ির নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন।
সোমবার (১৯ অক্টোবর) বিকালে সিলেটের অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর আদালতের বিচারক মো. জিহাদুর রহমানের খাস কামরায় পুলিশ কনস্টেবল দেলোয়ার, সাইদুর ও শামীম ১৬৪ ধারায় এ সাক্ষ্য প্রদান করেন।
রায়হানকে নির্যাতনের ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে এ তিন কনস্টেবল আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। তারা বন্দরবাজার ফাঁড়িতে কর্মরত রয়েছেন।
পিবিআই সিলেটের পুলিশ সুপার খালেদুজ্জামান সংবাদমাধ্যমকে জানান, ঘটনার দিন এই তিনজন বন্দরবাজার ফাঁড়িতে রাতে নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন। তাই তদন্তের স্বার্থে তাদের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে। তবে তারা কী বলেছে সে বিষয়ে তিনি কিছু বলতে চাননি।
এ মামলায় আসামি হিসেবে এসএমপি পুলিশের বিভাগীয় তদন্তে যাদের দায়ী করা হয়েছে তাদের গ্রেফতার করা হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রক্রিয়া চলছে।
এ ঘটনা তদন্তে গত ১১ অক্টোবর এসএমপির উপ-কমিশনার (ডিসি-উত্তর) আজবাহার আলী শেখের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করা হয়। বন্দরবাজার ফাঁড়িতেই পুলিশের নির্যাতনে রায়হানের মৃত্যুর বিষয়ে প্রাথমিক তদন্তে প্রমাণ পায় কমিটি।
তদন্ত কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী বন্দর ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই আকবর হোসেন কনস্টেবল তৌহিদ মিয়া, টিটু চন্দ্র দাশ ও হারুনুর রশীদকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। আর বন্দরবাজার ফাঁড়ি থেকে প্রত্যাহার করা হয় এএসআই আশেক এলাহী, কুতুব আলী, কনস্টেবল সজীব হোসেনকে।
এর মধ্যে এসআই আকবর হোসেন পালিয়ে গেলেও বাকি ছয়জন পুলিশ লাইনে কড়া নিরাপত্তা হেফাজতে রয়েছেন।
উল্লেখ্য, ১১ অক্টোবর ভোরে পুলিশ ফাঁড়িতে নির্যাতন করে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় রায়হানের মৃত্যু হয়। রায়হান সিলেট নগরীর আখালিয়ার নেহারিপাড়ার মৃত রফিকুল ইসলামের ছেলে। তিনি নগরীর রিকাবিবাজার স্টেডিয়াম মার্কেটে এক চিকিৎসকের চেম্বারে কাজ করতেন।
এ ঘটনায় ১২ অক্টোবর রাতে অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে পুলিশি হেফাজতে মৃত্যু আইনে এসএমপির কোতোয়ালি থানায় মামলা করেন রায়হানের স্ত্রী।
মামলাটি পুলিশ সদর দফতরের নির্দেশ পিবিআইতে স্থানান্তর হয়। তদন্তভার পাওয়ার পর পিবিআইর টিম ঘটনাস্থল বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ি, নগরীর কাস্টঘর, নিহতের বাড়ি পরিদর্শন করে। সর্বোপরি লাশ কবর থেকে তোলার পর পুনরায় ময়নাতদন্ত করা হয়।
নিহত রায়হানের মরদেহে ১১১ আঘাতের চিহ্ন উঠে এসেছে ফরেনসিক রিপোর্টে। এসব আঘাতের ৯৭টি ফোলা আঘাত ও ১৪টি ছিল গুরুতর জখমের চিহ্ন। এসব আঘাতগুলো লাঠি দ্বারাই করা হয়েছে। অসংখ্য আঘাতের কারণে হাইপোভলিউমিক শক ও নিউরোজেনিক শকে মস্তিষ্ক, হৃৎপিণ্ড, ফুসফুস, কিডনিসহ গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলো কর্মক্ষমতা হারানোর কারণে রায়হানের মৃত্যু হয়েছে।