সারাদেশে বন্যায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১১৪
টাইম ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ১০:৩১:৩২,অপরাহ্ন ২৬ জুলাই ২০১৯ | সংবাদটি ৪৮০ বার পঠিত
সারাদেশে গত কয়েক সপ্তাহের বন্যায় এখন পর্যন্ত বিভিন্ন জেলায় ১১৪ জন মারা গেছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কন্ট্রোল রুম।
গত ২৩শে জুলাই স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, বন্যার কারণে ১২ দিনে বিভিন্ন জেলায় অন্তত ৮৭ জন মারা গেছে। এরপর গত তিনদিনে আরো ২৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। খবর বিবিসির
বন্যার পূর্বাভাস এবং সতর্কীকরণ কেন্দ্র থেকে আগামী ২৪ ঘন্টার বন্যার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, উত্তরাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হবে এবং মধ্যাঞ্চলের অবস্থা অপরিবর্তিত থাকবে।
জুলাইয়ের প্রথম দিকে শুরু হওয়া বন্যার ব্যাপকতা আপাতত কিছুটা কমলেও এখনও অন্তত ৭৪টি উপজেলায় মানুষ পানিবন্দী রয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে গত ২৪ ঘন্টায় টাঙ্গাইল, জামালপুর, গাইবান্ধা, নেত্রকোনা ও বগুড়ায় ৯ জন পানিতে ডুবে মারা গেছেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে জামালপুর, নেত্রকোনা, গাইবান্ধা ও টাঙ্গাইল জেলায়। এছাড়া বগুড়া, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, শেরপুর, ব্রাহ্মনবাড়িয়া, সুনামগঞ্জ, চট্টগ্রাম এবং কক্সবাজার জেলায় মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে।
পূর্বাভাস কেন্দ্রের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, যমুনা নদী ছাড়া দেশের অন্য সব প্রধান নদীর পানির হার হ্রাস পাচ্ছে এবং ভারতের আসাম ও মেঘালয়ে ভারী বৃষ্টিপাত না হলে আগামী ২৪ ঘন্টার মধ্যে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ার সম্ভাবনা নেই।
বাংলাদেশে যেসব এলাকায় জুলাই মাসের মাঝামাঝি থেকে বন্যার পানি উঠেছিল, সেখানকার অনেক জায়গায় পানি ধীরে-ধীরে নামা শুরু করেছে।
এ সময় সাধারণত পানিবাহিত রোগ ছড়িয়ে পড়তে দেখা যায়।
দেশের উত্তরাঞ্চল এবং উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের কয়েকটি জেলায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সেসব এলাকাতেও পানিবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব শুরু হয়েছে। তবে তা এখনও নিয়ন্ত্রণের বাইরে যায়নি বা মহামারী আকার ধারণ করেনি।
গাইবান্ধা জেলার পাবলিক হেল্থ নার্স নাজমা আক্তার বলেন, সেখানে কিছু পানিবাহিত রোগ দেখা গেলেও তা নিয়ন্ত্রণের বাইরে যায়নি।
“পানিতে থাকতে-থাকতে অনেকেরই চর্মরোগ দেখা যাচ্ছে, পায়ে ঘা এর মত হচ্ছে। এছাড়া ডায়রিয়াটা ছড়িয়ে পড়লেও তা খুব একটা আশঙ্কাজনক নয়।”
এছাড়া সাপের ছোবল বা দুর্ঘটনাবশত পানিতে পড়ে মৃত্যুর ঘটনাও খুব বেশি ঘটেনি বলে জানান মিজ. আক্তার।
বন্যাদুর্গত প্রতিটি জেলার স্বাস্থ্য পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ ও দুর্যোগপূর্ণ এলাকায় গিয়ে সেবা প্রদান করার জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে ছোট ছোট অনেকগুলো স্বাস্থ্য সেবা দল গঠন করা হয়েছে বলে জানা যায়।
তবে দুর্গত অনেক এলাকার মানুষই প্রয়োজনীয় জরুরি স্বাস্থ্যসেবা পাচ্ছেন না বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
জামালপুরের বন্যাদুর্গত একটি উপজেলার কয়েকজন বাসিন্দা জানান, প্রায় দু’সপ্তাহ ধরে পানিবন্দী থাকায় তাদের পরিবারের শিশুদের মধ্যে পানিবাহিত রোগ ছড়িয়ে পড়লেও জরুরি স্বাস্থ্যসেবা পাননি তারা।
একই রকম অভিযোগ পাওয়া যায় আরো বেশ কয়েকটি বন্যাদুর্গত অঞ্চলের মানুষের কাছ থেকে।
বন্যায় রাস্তাঘাটের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হওয়ায় অনেক প্রত্যন্ত অঞ্চলে স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেয়া সম্ভব হচ্ছে না বলে গাইবান্ধার স্বাস্থ্য কর্মকর্তা নাজমা আক্তার।
“কয়েকটি এনজিওর সহায়তায় নৌকা নিয়ে দুর্গত এলাকায় স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে আসে টিমগুলো। কাজেই অনেক জায়গাতেই যাওয়া সম্ভবপর হয়ে ওঠে না।”
মিজ. আক্তার বলেন, যারা আশ্রয়শিবিরে না থেকে বাড়িতে অবস্থান করছেন, তাদের কাছে সেবা পৌঁছে দেয়া কষ্টসাধ্য হচ্ছে।
বন্যায় পানিবাহিত রোগের স্বাস্থ্যঝুঁকির পাশাপাশি বিপুল পরিমাণে ফসল নষ্ট হবে বলেও ধারণা করা হচ্ছে।