১৮ বছরের পরিশ্রমে সফল –সাইম
বিশেষ প্রতিনিধি শাহেদ আহমদ
প্রকাশিত হয়েছে : ১০:০৬:৩০,অপরাহ্ন ০৭ আগস্ট ২০১৯ | সংবাদটি ৮৭৮ বার পঠিত
প্রতিদিনের মত আজকে সকালে বাসা থেকে হাটতে বেড় হয়েছিলাম। হঠাৎ আমার সামনে দিয়ে প্রতিদিনের মত একটি ছেলে তাঁর ঘাঁেড়র উপর বাঁশের রেক নিয়ে খাদিমপাড়া দাসপাড়া থেকে সিলেটের উদ্দ্যেশ্যে হেঁটে হেঁটে আম্বরখানা হয়ে মদিনা মার্কেট রওনা দিচ্ছে। তখন ছেলেটিকে দেখে আমার পুরানো একটি কথা মনে পড়ে গেলো। আমি যখন সিলেটে ফটো সাংবাদিকতায় কর্মরত ছিলাম তখন ২০০৯ সালে দৈনিক প্রভাত বেলা পত্রিকায় সদর উপজেলায় জাকারিয়া সিটির রাস্তার পাশেই যাওয়ার সময় এরকমই একটি ছেলের ছবি তুলে প্রভাত বেলার পত্রিকায় আমি একটি কেপশন দিয়ে প্রকাশিত হয়। প্রায় ১০ বছর আগের কথা, তখন ঐ ছেলেটিকে ডাক দিলে ছেলেটি একটু দাঁড়িয়ে বলে স্যার লাগবে, আমি বললাম না, একটু কথা বলব তোমার সময় হবে, ছেলেটি বলল, হ্যা স্যার, তোমার নাম কি? ছেলেটি বলল আমার নাম সাইম আহমদ। কোথায় থাক, চকগ্রাম দাসপাড়াতে থাকি স্যার। তোমার মত একটি ছেলে এরকম বাঁশের রেক বিক্রি করত তুমি কী থাকে চিনতে পারবে। স্যার এখানে তো আমি ছাড়া কেউ বিক্রি করে না তবে নাম বলুন আমি দেখি স্যার, চিনতে পারি কি না। আমি বললাম আমি তো জানি না তবে আমার মোবাইলে একটি ছবি আছে। তখন ২০০৯ সালে প্রভাত বেলার পত্রিকার ছাপানো কার্টিন ছবিটা তাকে দেখালাম তখন সে দেখে তার চোখ মুখে হাসি, কান্না আর কষ্টে ভেসে উঠল। বলল স্যার, এই ছবিটা আমার। আমি বললাম তুমি তো অনেক ছুটে ছিলে তখন তোমার বয়স ৪-৫ বছর হবে, তোমার তো ছোট একটি বোন ছিলো সে কোথায়।
তখন শুরু হলো তার ২০০১ সাল থেকে ২০১৯ সাল ১৮ বছরের সংগ্রামী এক সাইমের গল্প। পিতা মঈন উদ্দিন, গ্রামঃ চকগ্রাম দাসপাড়া, খাদিমনগর, শাহপরান সদর উপজেলা সিলেট। ৪ ভাই ৫ বোনের মধ্যে সাইম হলো পরিবারে সবচেয়ে বড় ছেলে। ২০০১ সালে যখন তার বাবা বাঁশের রেক তৈরি করে তখন তার বয়স ছিলো ৪ বছর। তাদের আয়ের কোন রাস্তা ছিলো না, এ রেক তৈরি করেই তাদের পরিবার চলতো। তার বাবা বাঁশের রেক তার ঘাড়ে দিয়ে বলল, এটা বিক্রি করার জন্য, যে তখন বাজারও চিনতো না তার বাবা বলল চল আমি তোমাকে চিনিয়ে নিয়ে আসি। তখন বাঁশের রেকগুলো বিক্রি হতে ৫০-৬০ টাকা করে। সাইম টাকাও চিনতো না। তার বাবা টাকাও চিনিয়ে দিলো। শুরু হলো সাইমের জীবনের পথ চলার সংগ্রাম। তখন প্রতিদিন তার বাবা, তার ঘাঁড়ে তিনটি ও তার ছোট বোনের ঘাঁড়ে একটি দিয়ে জাকারিয়া সিটি থেকে হেঁটে হেঁটে সিলেট আম্বরখানা ও মদিনা মার্কেটে ১২ কিঃমিঃ হেঁটে বিক্রি করে দুপুর বেলায় পরিবারের বাজার করে আবার হেঁটে হেঁটে নিয়ে আসতো। সাইমের ১৮ বছরের পথ চলায় অনেক কিছু পরিবর্তন হয়েছে। কিন্তু পরিবর্তন হয়নি সাইমের বাঁশের রেক বিক্রি করা। অনুষ্ঠান বা অসুস্থ ছাড়া একদিনও তার রেক বিক্রি করা বন্ধ হয়নি।
প্রতিদিনের মত আজকেও সে ৬-৭ টি বাঁশের রেক নিয়ে ঘাঁড়ের উপর বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে সিলেটে রওনা হচ্ছে। তবে এ রেকগুলো এখন আর আগের মত বিক্রি হয় না। এখন বিক্রি হয় ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা করে। প্রত্যেক দিন তার আয় হয় ৮শ থেকে ১ হাজার টাকা। বিগত ১৮ বছরে তার পরিবারের অনেক পরিবর্তন হয়েছে। ২০০১ সালে তখন তাদের কোন বসত ঘর ছিলো না। ১৮ বছরে বাবা ও ছেলের পরিশ্রমে পার্শ্ববর্তী গ্রামে চকগ্রাম দাসপাড়া ৪ শতকের একটি বসত ভিটা ক্রয় করে ধীরে ধীরে ছনের তৈরি ঘর পরে টিন শেডের ঘর এবং বর্তমানে ঐ বসত ঘর তৈরি হচ্ছে ১তলা পাকা ঘর তৈরি করছে সাইম। তার ছোট ছোট ভাই-বোনদের লেখা-পড়া খরচও সে চালিয়ে যাচ্ছে এবং তার শেষে ইচ্ছা ভাই বোনদের সুশিক্ষায় শিক্ষিত করে মানুষের মত মানুষ করাটাই তার লক্ষ্য ও জীবনের শেষ আশা।