অন্ধ কুরানের পাখির (সিরাজুল ইসলাম রঘুপুরী) জীবন প্রদীপ নিভে যাচ্ছে!
টাইম সিলেট ডট কম
প্রকাশিত হয়েছে : ২:২৪:২০,অপরাহ্ন ২০ আগস্ট ২০১৯ | সংবাদটি ৫৮৫ বার পঠিতআসন্ন শীতের মৌসুমে বৃহত্তর সিলেটের বিভিন্ন ইসলামী সম্মেলনে আর হয়তোবা দেখা ও শুনা যাবেনা অন্ধ কোরানে হাফিজ এর মধুর কণ্ঠে পবিত্র কোরানের তেলাওয়াত
হামদ, নাত এবং বিভিন্ন গজল পরিবেশনা! বলছিলাম সিরাজুল ইসলাম রঘুপুরীর কথা। বৃহত্তর সিলেটের এমন কোন মাফফিল নেই যে মাহফিলে অন্ধ হাফিজের কোরানের তেলাওয়াত ও হামদ, নাত এবং বিভিন্ন গজল পরিবেশনা করেননি।
কিডনী সহ নানান জটিলতায় শয্যাশায়ী
অনাহারে, অর্ধাহারে, রোগে-শোকে শয্যাশায়ী হয়ে পড়েছেন অন্ধ হাফিজ সিরাজুল ইসলাম। তাঁর দু’টি কিডনী প্রায় বিকল হয়ে পড়ছে। তিনি আগের মতো আর উঠে দাঁড়াতে পারেন না। ক্লান্ত, দেহমন নিয়ে শুয়ে, বসে সময় কাটছে তাঁর। নামাজ পড়েন বসে বসে। তবে, এখনও দরাজ কণ্ঠে পবিত্র কোরআন শরীফ তেলাওয়াত, হামদ, নাত আর গজল পরিবেশনায় আত্মতৃপ্ত হাফিজ সিরাজুল ইসলাম।
হাফিজ সিরাজুল ইসলাম ওসমানীনগর উপজেলার উছমানপুর ইউনিয়নের রঘুপুর গ্রামের বাসিন্দা। একমাত্র মা আর স্ত্রী নিয়ে তাঁর সংসার। নিঃসন্তান হাফিজ সিরাজুল ইসলাম সংসারের ভরণপোষণ আর নিজের চিকিৎসার ব্যাপারে কোন অবলম্বন খুঁজে পাচ্ছেন না। গত কয়েকমাস যাবত তিনি নানা অসুস্থতায় ঘরে পড়ে রয়েছেন। গত শুকনো মৌসুমেও গহরপুর মাদরাসাসহ বিভিন্ন মসজিদ, মাদরাসার ওয়াজ মাহফিলে গ্রাম-গ্রামান্তরে ছুটে গেছেন। দেড় মাস আগে তাঁর কিডনীর জটিলতা ধরা পড়েছে। ডাক্তাররা জানিয়েছেন, অনেক টাকার প্রয়োজন। পাড়া-প্রতিবেশীরা সাধ্যানুযায়ী সহযোগিতা করছেন। কিন্তু সংসারের ভরণপোষণ এবং চিকিৎসা কোনটাই ঠিকমত চালিয়ে নিতে পারছেন না অন্ধ হাফিজ সিরাজুল ইসলাম।
গত কিছুদিন আগে (০৪ আগস্ট) সন্ধ্যায় রঘুপুর গ্রামবাসী কয়েকজনের সঙ্গে হাফিজ সিরাজুল ইসলামকে দেখতে গিয়েছিলেন বালাগঞ্জ উপজেলা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক জিল্লুর রহমান জিলু। তাঁকে এশার নামাজরত পাওয়া যায়। নামাজ শেষে কুশল বিনিময়কালে তিনি অনেক খুশি হন, তাঁকে দেখতে যাবার জন্য। কিন্তু দারিদ্রতা, অসুস্থতা এত কিছুতেও ভাবলেশহীন হাফিজ সিরাজুল ইসলাম। তাঁর অভিব্যক্তি যেন এমনই, ‘আমার কোন চাওয়া পাওয়া নেই। মহান আল্লাহপাক যা ভাগ্যে রেখেছেন তাই হবে’।
তবে, পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত, হামদ, নাত এবং গজল পরিবেশনায় তাঁর বিশেষ আগ্রহ আগের মতোই রয়েছে। উপস্থিত সকলকে এসব পরিবেশনার মাধ্যমে অনেক মুগ্ধ করলেন তিনি।
এ প্রসঙ্গে কথা হয় তাঁর মা হাওয়ারুন নেছার সাথে কথা হয়। তিনি জানান, তাঁর ছেলে একজন প্রতিবন্ধী (অন্ধ)। আল্লামা নূরউদ্দিন গহরপুরী (রহ.) জীবিত থাকাকালে হাফিজ সিরাজুল ইসলাম গহরপুর মাদরাসায় হিফজ বিভাগে পড়েছেন। হাফিজ সিরাজুল ইসলাম তাঁর প্রতিবন্ধীতা থাকা সত্ত্বেও দূর-দূরান্তে বিভিন্ন ধর্মীয় মাহফিলে নিয়মিত যাতায়াত করতেন। গত দেড় মাস যাবত তিনি প্রায় শয্যাশায়ী। সংসারের ভরণ-পোষণ আর ছেলের চিকিৎসার ব্যাপারে তিনি বিত্তবান সকলের কাছে সহযোগিতা কামনা করেছেন।
রঘুপুর গ্রামের সমাজকর্মী মো. কামরুল ইসলাম চৌধুরী, আখতার আহমদ, সামুছুল ইসলাম, মো. সিতু মিয়া প্রমুখ জানান, এলাকায় একজন মুসল্লি হিসেবে হাফিজ সিরাজুল ইসলামের ব্যাপক পরিচিতি রয়েছে। তবে, তিনি একজন অতি দরিদ্র মানুষ। তাঁর নিজের বসতঘরটুকুও নেই। বর্তমানে তিনি স্ত্রীকে নিয়ে মায়ের সাথে ভাইয়ের ঘরে বসবাস করছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এত দারিদ্রতা, অসুস্থতার পরও, হাফিজ সিরাজুল ইসলাম নিয়মিত নামাজ এবং পবিত্র কোরআন তেলাওয়াতে মশগুল আছেন। তাঁর কণ্ঠে পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত শুনতে অনেক মধুর লাগে। হামদ, নাত এবং বিভিন্ন গজল পরিবেশনায় তাঁর ব্যাপক আগ্রহ রয়েছে। বালাগঞ্জ উপজেলা সহ বিভিন্ন এলাকায় ওয়াজ মাহফিলের সংবাদ পেলেই তিনি ছুটে যেতেন। বালাগঞ্জ, ওসমানীনগরের অনেক দূর-দূরান্তের এলাকাবাসী ও প্রবাসীদের মধ্যে তাঁর ‘বহুপরিচিতি’ রয়েছে। ‘রঘুপুরের অন্ধ হাফিজসাব হিসেবে সবাই তাঁকে চেনেন’।
(হাফিজ সিরাজুল ইসলাম’র মোবাইল নম্বর (বিকাশ) ০১৭৪২৪৯৩১২০। এই নম্বরে যে কেউ প্রয়োজনে তাঁর সাথে যোগাযোগ করতে পারবেন।