সিলেট-৩ আসনের উপ-নির্বাচন নিয়ে প্রার্থীদের তোড়জোড় শুরু

টাইম সিলেট ডট কম
প্রকাশিত হয়েছে : ৯:০৫:০১,অপরাহ্ন ২০ মার্চ ২০২১ | সংবাদটি ১২১৫ বার পঠিত
মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরীর মৃ’ত্যুতে শূন্য হওয়া সিলেট-৩ আসনের উপনির্বাচন নিয়ে প্রার্থীদের তৎপরতা শুরু হয়েছে। যদিও এ নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেবে কিনা- সেটি এখনো নিশ্চিত নয়। তারপরও এ আসনকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে উঠেছেন বিএনপির সাবেক এমপি শফি চৌধুরী, কেন্দ্রীয় বিএনপি নেতা ব্যারিস্টার আব্দুস সালাম। তবে এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগে প্রার্থী তালিকাক্রমে দীর্ঘ হচ্ছে। উপ-নির্বাচন হওয়ায় সবাই চাচ্ছেন আওয়ামীলীগের দলীয় মনোনয়ন। ইতিমধ্যে নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী হতে লন্ডন থেকেও চলে আসছেন প্রার্থীরা। মহাজোটের শরিক দল জাতীয় পার্টির প্রার্থীরাও বসে নেই। ইতিমধ্যে মহাজোটের প্রার্থীরাও সরব রয়েছেন। এ কারণে আসন্ন সিলেট-৩ আসনের উপনির্বাচন নিয়ে প্রার্থীদের তৎপরতা বৃদ্ধির পাশাপাশি স্থানীয় ভাবেও চলছেও চুলচেরা বিশ্লেষণ।
করোনা ভাইরাসে আ’ক্রান্ত হয়ে গত ১১ই মা’র্চ মা’রা যান সিলেট-৩ আসনের পরপর তিন তিনবারের আওয়ামী লীগের দলীয় এমপি মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী। তার মৃ’ত্যুর পর গত বৃহস্পতিবার সংসদ সচিবালয়ের পক্ষ থেকে এ আসনটি শূন্য ঘোষণা করা হয়।
দক্ষিণ সুরমা, ফেঞ্চুগঞ্জ ও বালাগঞ্জ উপজে’লা নিয়ে গঠিত সিলেট-৩ আসন। এ আসনটি সিলেট নগরের কাছাকাছি এলাকায় গুরুত্ব অনেক বেশি। এ ছাড়া শিল্পনগরী ফেঞ্চুগঞ্জও রয়েছে এ আসনে। ফলে গুরুত্বপূর্ণ এ আসনে দক্ষতার সঙ্গে নিজের দায়িত্ব পালন করেছেন প্রয়াত এমপি মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী।
করো’নাকালে মানবসেবার কারণে তিনি বিশেষ করে সাধারণ মানুষের মন জয় করেছিলেন। এ কারণে তার মৃ’ত্যুতে অ’পার শূন্যতা নেমে এসেছে এই আসনে। তার মৃ’ত্যুর পর এখন এ আসনটিতে মহাজোটের শরিক দল জাতীয় পার্টি এ আসনে প্রার্থী চাইছে। কারণ- সিলেটের ছয়টি নির্বাচনী আসনের মধ্যে সিলেট-৩ আসনটিকে জাতীয় পার্টি তাদের দুর্গ হিসেবে বিবেচনা করে। এ কারণে জাতীয় পার্টির সাবেক এমপি ছিলেন আব্দুল মুকিত খান। এ কারণে ইতিমধ্যে মহাজোটের প্রার্থী হতে চাইছেন দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য আলহাজ আতিকুর রহমান আতিক ও সিলেট-২ আসনের সাবেক এমপি ইয়াহইয়া চৌধুরী এহিয়া। জাতীয় পার্টির নেতাদের মুখে এখন পর্যন্ত এই দুই প্রার্থীর নাম শোনা যাচ্ছে। এ আসনে এক সময় জাতীয় পার্টির হয়ে ভোটের রাজনীতিতে সরব ছিলেন আতিকুর রহমান আতিক। এখন আবার তিনি নিজ এলাকামুখী হয়ে বিভিন্ন সামাজিক ও দলীয় কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ করছেন।
তবে- সিলেট-৩ আসনের আওয়ামী লীগের একাংশ চাইছেন প্রয়াত এমপি মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরীর পরিবার থেকে কাউকে প্রার্থী করতে। কারণ- পরিবারের কেউ প্রার্থী হলে মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী কয়েসের রেখে যাওয়া অসম্পূর্ণ কাজ সম্পূর্ণ করা সম্ভব হবে। এজন্য প্রথমেই তাদের পছন্দের তালিকায় রয়েছেন প্রয়াত এমপি’র স্ত্রী’ ফারজানা সামাদ চৌধুরী। তাকে প্রার্থী করলে আওয়ামী লীগের অনেকেই তাকে এ আসন ছাড় দিতেও প্রস্তুত বলে নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন। এ আসনে পরিবার থেকে প্রার্থী হতে চাইছেন যু’ক্তরাজ্যের চ্যানেল এস’র চেয়ারম্যান ও প্রয়াত এমপি’র ছোটো ভাই আহম’দ উস সামাদ চৌধুরী। ভাইয়ের মৃ’ত্যুর পর তিনি ২/১ দিনের মধ্যে সিলেটে আসছেন বলে পারিবারিক সূত্র জানিয়েছে।
আওয়ামী লীগের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, দলীয় সিদ্ধান্তে যে কাউকে প্রার্থী ঘোষণা করা হলে তারা ওই প্রার্থীর পক্ষে কাজ করবেন। তবে প্রয়াত মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরীর অনুসারিরা মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরীর অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করার জন্য যোগ্য প্রার্থী হিসেবে তার ছোট ভাই বিলেত প্রবাসী আহমেদ উস সামাদকে উপযুক্ত বলে মনে করছেন। ফেঞ্চুগঞ্জ-বালাগঞ্জ ও দক্ষিন সুরমার দলীয় নেতাকর্মীরা তাঁর পরিবারের সাথে ইতোমধ্যে যোগাযোগ শুরু করেছেন।
আওয়ামীলীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের তালিকায় রয়েছেন- যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের ত্রান ও সমাজসেবা বিষয়ক সম্পাদক হাবিবুর রহমান হাবিব, বিএমএ’র কেন্দ্রীয় মহাসচিব ও সিলেটের পরিচিত মুখ ডা. এহতেশামুল হক চৌধুরী দুলাল, আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ, দক্ষিণ সুরমা উপজেলার চেয়ারম্যান আবু জাহিদ, সিলেট জেলা বারের পিপি এডভোকেট নিজাম উদ্দিন, সাবেক সহকারী এর্টনী জেনারেল, বাংলাদেশ এ্যাথলেটিক্স ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ও বাংলাদেশ আওয়ামী’যুবলীগের কার্যনির্বাহী সদস্য এডভোকেট আব্দুর রকিব মন্টু, সিলেট চেম্বার অব কমার্সের সিনিয়র সহ- সভাপতি ও বিশিষ্ট ব্যবসায়ী তাহমিন আহমদ। এ ছাড়া- প্রার্থী হতে যুক্তরাজ্য থেকে দেশে এসেছেন ফেঞ্চুগঞ্জের আরেক ধনকুবের স্যার এনামুল ইসলাম ও দেশে আসার কথা রয়েছে যু’ক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতা দেওয়ান গৌছ সুলতান। সিলেট-২ আসনের সাবেক এমপি ও জে’লা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ- সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরীর নামও শোনা যাচ্ছে দলীয় নেতাদের মুখে মুখে। আওয়ামীলীগ বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীদের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামী ও খেলাফত মজলিসের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা নির্বাচনী এলাকায় কাজ করছেন। দক্ষিণ সুরমা উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মাওলানা লোকমান আহমদ।
খেলাফত মজলিস সিলেট জেলার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাওলানা দিলওয়ার হোসাইনও নির্বাচনী এলাকা চষে বেড়াচ্ছেন।তিনি গত নির্বাচনে প্রাথী হয়েছেন এবার দল থেকে বললে তিনি নির্বাচন করবেন, তিনি দক্ষিণ সুরমা উন্নয়নে সব সময় থাকবেন।
প্রয়াত এমপি মাহমুদ-উস-সামাদ চৌধুরী ভাই চ্যানেল এস এর চেয়াম্যান আহমেদ উস সামাদ চৌধুরী জানান, ”এলাকার জনসাধারণ আমাকে ফোন করে আমার ভাইয়ের অসমাপ্ত কাজকে সমাপ্ত করতে উপ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার জন্য অনুরোধ করছেন। প্রতিদিন তৃণমূল থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের শীর্ষ নেতৃবৃন্দও একই অনুরোধ করছেন।”
বিএনপির সাবেক সাংসদ আলহাজ্ব শফি আহমদ চৌধুরী আলাপকালে জানান, দলীয় সিদ্ধান্ত মোতাবেক নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হবে। তবে, সিলেট-৩ আসনের জনগণের জন্য সব সময় ছিলাম, আছি এবং থাকবো। নির্বাচনী এলাকার জনগণের ভালবাসাই আমার মুলসম্পদ।
জাতীয় পার্টির মনোনয়ন প্রত্যাশী আলহাজ্ব আতিকুর রহমান আতিক বলেন, নির্বাচনী এলাকার জনগনের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। জাতীয় পার্টির দূর্গ এ আসন পূণরুদ্ধারে জনগণের প্রত্যাশা পূরণের লক্ষ্যে আসন্ন নির্বাচনে প্রার্থী হতে চাই।