সিলেট বিএনপিতে আলোচনায় ৬ নেতা

টাইম সিলেট ডট কম
প্রকাশিত হয়েছে : ১২:১৯:৫৫,অপরাহ্ন ০৯ জানুয়ারি ২০২২ | সংবাদটি ৪৬২ বার পঠিতওয়েছ খছরু, সিলেট থেকে,সিলেটের রাজনৈতিক দলগুলোর কাউন্সিলের ‘ট্র্যাডিশন’ ভেঙেছিল বিএনপি। প্রায় ৬ বছর আগে সরাসরি ভোটের মাধ্যমে জেলা ও মহানগর বিএনপির কমিটি গঠন করা হয়েছিল। এবারো সেই ট্র্যাডিশনের দিকে হাঁটছেন সিলেট বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির নেতারা। চলছে তোড়জোড়। কাউন্সিলেই গঠন করতে চান সিলেট জেলা বিএনপির নতুন কমিটি। তৃণমূলের নেতারা যাকে চাইবেন তিনি আসবেন মূল নেতৃত্বে। তবে- প্রশ্ন রয়েছে সম্মেলন নিয়ে। বলা হচ্ছে- চলতি জানুয়ারি মাসেই হতে পারে সিলেট জেলা বিএনপির কাঙ্ক্ষিত কাউন্সিল।
কিন্তু গতকাল পর্যন্ত ১৮ ইউনিটের মধ্যে মাত্র ৪টি ইউনিটের সম্মেলন ও কাউন্সিল শেষ হয়েছে। আগামী ২১শে জানুয়ারির মধ্যে সিলেটের সব ইউনিটের কাউন্সিল শেষ করার নির্দেশনা রয়েছে। এ কারণে এখন পুরোদমে ইউনিটগুলোতে সম্মেলন ও কাউন্সিল করা হচ্ছে। একইসঙ্গে ইউনিয়ন পর্যায়েও কাউন্সিল করা হচ্ছে। সিলেট জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কামরুল হুদা জায়গীরদার গতকাল সন্ধ্যায় মানবজমিনকে জানিয়েছেন; ‘আমরা বসে নেই। এ মাসের ভেতরেই আমাদের সব শেষ করতে হবে। এজন্য প্রতিদিন ৩-৪টি করে ইউনিয়ন ও একটি বা দুটি করে ইউনিট পর্যায়ে সম্মেলন করা হচ্ছে। আহ্বায়ক কমিটির বেশিরভাগ নেতাই কাজ করছেন। আর প্রতিটি ইউনিটে কাউন্সিলরদের ভোটের মাধ্যমে কমিটি গঠন করা হচ্ছে বলে জানান তিনি। গতকাল সিলেটের কানাইঘাটের পৌর ও উপজেলা কাউন্সিল শেষ করা হয়েছে। সিলেট জেলা বিএনপির বর্তমান আহ্বায়ক কমিটির বয়স হচ্ছে ২ দুই বছর ৩ মাস। ২০১৬ সালের ৭ই ফেব্রুয়ারি কাউন্সিলের মাধ্যমে আবুল কাহের শামীমকে সভাপতি ও আলী আহমদকে সাধারণ সম্পাদক করে জেলা বিএনপির কমিটি গঠন করা হয়েছিলো। ২০১৯ সালের ৩রা অক্টোবর কেন্দ্রীয় কমিটি পুরাতন কমিটি ভেঙে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি গঠন করে দেন। এ কমিটির আহ্বায়ক করা হয় কামরুল হুদা জায়গীরদারকে। তার সঙ্গে যাদের কমিটির সদস্য করা হয় তাদের অনেকেরই নতুন মুখ। জেলা বা কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের বেশিরভাগ সাবেক নেতা আহ্বায়ক কমিটিতে স্থান পান।
সিলেট জেলা বিএনপির নেতারা জানিয়েছেন, এবারের সিলেট জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটিতে অনেক নতুন মুখ রয়েছে। তারা বর্তমানে দলের জন্য নিরলসভাবে পরিশ্রম করছেন। ছাত্রদলের রাজনীতি করার কারণে তারা সাংগঠনিকভাবে বেশ দক্ষ। বিশেষ করে দলের সিলেটের নেতারা তাদের কর্মকাণ্ডে সন্তুষ্ট। এ কারণে এবারের কমিটিতে সাধারণ সম্পাদক পদে অনেক নতুন মুখই প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামছেন। ইউনিট সম্মেলন ও কাউন্সিলকে কেন্দ্র করে তারা সরব থাকায় ভোটের হিসাবও কষছেন তারা। আর সভাপতি পদেও একাধিক নতুন মুখ রয়েছে। তারা সিলেটে বিএনপিকে নেতৃত্ব দিতে চান। এজন্য তারা বর্তমানে সক্রিয় ভূমিকা রাখছেন। করোনাকালেও তারা দলীয় কর্মীদের পাশাপাশি থেকে কাজ করেছেন বলেও জানান নেতারা। জেলা বিএনপির সভাপতি হতে এরইমধ্যে আটঘাট বেঁধে নেমেছেন ৩ নেতা।
তারা কাউন্সিলরদের মন জয় করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। করছেন যোগাযোগও। এরমধ্যে রয়েছেন- জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও কেন্দ্রীয় সদস্য আবুল কাহের শামীম, কেন্দ্রীয় সহ-ক্ষুদ্রঋণ বিষয়ক সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক ও যুবদলের সাবেক কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি আব্দুল কাইয়ূম চৌধুরী। সভাপতি পদে আলোচনায় থাকা তিন নেতাই যোগ্য। তবে- মাঠ পর্যায়ে বেশি সক্রিয় রয়েছেন সাবেক সভাপতি আবুল কাহের শামীম। তিনি ইউনিয়ন, পৌর ও উপজেলা কাউন্সিলে যোগদান করে ভূমিকা রাখছেন। এছাড়া, সিনিয়র নেতা হওয়ার কারণে দলের ভেতরে রয়েছে তার আলাদা গ্রহণযোগ্যতা। শামীমের পক্ষে সাবেক কমিটির অনেক নেতাই মাঠে কাজ করছেন। এবারের কাউন্সিলে তারা শামীমকেই চাচ্ছেন সভাপতি। কেন্দ্রীয় সহ-ক্ষুদ্রঋণ বিষয়ক সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক দলের একজন ত্যাগী নেতা। দুর্দিনেও তিনি সক্রিয় ভূমিকা রাখেন।
দলের সিনিয়র নেতা হওয়ার কারণে অনেক জায়গায় তিনি দৌড়ঝাঁপ করতে না পারলেও দলের ভেতরে তার আলাদা গ্রহণযোগ্যতা। সুবক্তা হিসেবে পরিচিত আব্দুর রাজ্জাককে এবার সভাপতি হিসেবে চাইছেন দলের অনেক সিনিয়র নেতা। তাদের মতে- আজীবন বিএনপির নিবেদিতপ্রাণ এ নেতার শেষ মুল্যায়ন চান তারা। এ কারণে তার পক্ষে দলের সিনিয়র অনেক নেতা সক্রিয় ভূমিকা রাখছেন। সভাপতি পদে এবার সিলেট বিএনপিতে নতুন মুখ আব্দুল কাইয়ূম চৌধুরী। যুবদলের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা ও প্রয়াত অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমানের ঘনিষ্ঠজন হওয়ার কারণে সিলেট বিএনপিতে আলাদা স্থান রয়েছে কাইয়ূম চৌধুরীর। তিনি দুই বছর আগে আহ্বায়ক কমিটি আহ্বায়ক হওয়ার জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ছিলেন। বর্তমানে নিজ এলাকা ও আশপাশের কয়েকটি থানায় সক্রিয় ভূমিকা পালন করছেন। নতুন প্রজন্মের নেতা হওয়ার কারণে বর্তমান সময়ের অনেক রাজনীতিবিদই রয়েছেন কাইয়ূম চৌধুরীর পক্ষে। কাউন্সিলের মাধ্যমে তারা কাইয়ূম চৌধুরীকে সভাপতি দেখতে কাজ করছেন। আর সভাপতি হলে দলের জন্য উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারবেন বলে জানিয়েছেন সিলেটের নেতারা। এবারের সিলেট জেলা বিএনপির সম্মেলন ও কাউন্সিলে সাধারণ সম্পাদক পদে দুইজন নতুন মুখ রয়েছে। ছাত্রদলের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা ওই দুইজন। তবে- দলের সিনিয়র নেতারা সাধারণ সম্পাদক পদে সাবেক সাধারণ সম্পাদক আলী আহমদের বিকল্প কাউকে চিন্তা করতে পারছেন না। গেল কমিটিতে সাধারণ সম্পাদক দায়িত্ব পালনকালে দলকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে চমক দেখিয়েছিলেন আলী আহমদ। বর্তমানে পারিবারিক কাজে লন্ডনে রয়েছেন তিনি।
গ্রহণযোগ্য নেতা হওয়ার কারণে কাউন্সিলে শক্তিশালী ভোটব্যাংক রয়েছে আলী আহমদের। ফলে এবারো সাধারণ সম্পাদক পদে তিনি শক্তিশালী প্রার্থী- এমনটি মানছেন সবাই। কারণ- বিরোধী রাজনীতিতে আলী আহমদ মামলা, কারাগারে দিনযাপন করেছেন। সম্মেলন ও কাউন্সিলের আগেই আলী আহমদ দেশে ফিরবেন বলে জানিয়েছেন সিলেটের নেতারা। আলী আহমদের সঙ্গে সাধারণ সম্পাদক পদে লড়াইয়ে নামছেন সাবেক কমিটির দুই সাংগঠনিক সম্পাদক। এর মধ্যে একজন হচ্ছে এডভোকেট এমরান আহমদ ও অপর জন হচ্ছেন আব্দুল আহাদ খান জামাল। দু’জনই ছিলেন ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নেতা। জেলা ছাত্রদলের সভাপতির দায়িত্বও পালন করেছেন। সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে তাদের নিয়ে কোনো বিতর্ক নেই। রাজনীতিতেও তারা পরিচ্ছন্ন। দলের জন্য ত্যাগও স্বীকার করেছেন। এডভোকেট এমরান আহমদ সিলেটে দলের কর্মকাণ্ডে সক্রিয় ভূমিকা রাখছেন। পাশাপাশি চলতি ইউনিয়ন ও ইউনিট সম্মেলনে তিনি কাজ করছেন। ফলে বর্তমান প্রজন্মের নেতাদের কাছে তিনি পরিচিত।
স্বচ্ছ রাজনীতিবিদ হিসেবে নিজেকে ইতিমধ্যে প্রমাণ করেছেন। এ কারণে নতুন প্রজন্মের নেতারা তার পক্ষে সক্রিয় রয়েছেন। আর আব্দুল আহাদ খান জামাল হচ্ছেন সেই ছাত্রদল থেকে একজন পরিশ্রমী নেতা। হামলায়ও গুরুতর আহত হয়েছিলেন। মামলা ও কারাগারের গ্লানি টেনেছেন। আহ্বায়ক কমিটির সদস্য হওয়ার পর সক্রিয় ভূমিকা রেখে চলেছেন। সিনিয়র ও জুনিয়র নেতাদের প্রিয়জন হয়ে ওঠা জামালকে নিয়ে স্বপ্ন দেখছেন অনেকেই। তিনি এবার জেলার সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী হচ্ছেন। এছাড়া- চলতি ইউনিয়ন ও ইউনিট সম্মেলনকে কেন্দ্র করে সবচেয়ে বেশি পরিশ্রম করছেন তিনি। স্বেচ্ছাসেবক দলের জেলার রাজনীতিতেও সফল ভূমিকা রাখছেন। এ কারণে জামালের পক্ষে দলের বর্তমান প্রজন্মের রাজনীতিবিদরাও সক্রিয় হয়েছেন।কপি