সিলেটের শ্রমিক নেতার হুঁশিয়ারি ‘সতের পরগনার কাছে যাবো না’
টাইম সিলেট ডট কম
প্রকাশিত হয়েছে : ১২:০৩:০৩,অপরাহ্ন ১৬ জুলাই ২০২৩ | সংবাদটি ১৩৫ বার পঠিত‘বিষয়টি সমাধানের জন্য আমরা ১৭ পরগনার ডাকে সাড়া দিয়েছিলাম। কিন্তু ওরা আমাদের সম্মান দেয়নি। এ কারণে আমরা আর তাদের ডাকে সাড়া দেবো না।’- মানবজমিনের কাছে একথা জানিয়েছেন সিলেট জেলা পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি হাজী ময়নুল ইসলাম। তিনি বলেছেন, ‘আজ সকাল ১১টায় সিলেট বিভাগের মালিক শ্রমিকরা মিলে প্রতিবাদ সমাবেশ করবো। এই সমাবেশ থেকে আমরা নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করবো। ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী সিলেটে ফের পরিবহন শ্রমিকদের কর্মবিরতি কর্মসূচি আসতে পারে।’ সিলেটের জৈন্তাপুরের ১৭ পরগনার সালিশ ব্যক্তি ও পরিবহন শ্রমিকরা মুখোমুখি অবস্থায় রয়েছেন। গত ৭ই জুলাই রাতে জৈন্তাপুরের দরবস্তে সিলেট থেকে ছেড়ে যাওয়া যাত্রীবাহী বাস ও ইজিবাইকের (টমটম) মুখোমুখি সংঘর্ষে ৫ যাত্রী নিহত হন। ঘটনার পর ৯ই জুলাই তামাবিল সড়কে দুই ঘণ্টার জন্য বাস চলাচল বন্ধ রেখেছিলেন স্থানীয়রা।
এর প্রতিবাদে প্রথমে সিলেট-তামাবিল রুটে এবং পরে বুধবার থেকে গোটা জেলাজুড়ে ধর্মঘট আহ্বান করা হয়েছিল। মঙ্গলবার রাতে সিলেটের জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে সভায় পরিবহন শ্রমিকরা ধর্মঘট প্রত্যাহার করেন। তবে শ্রমিকদের ধর্মঘটের প্রতিবাদে জৈন্তাপুরের ১৭ পরগনার বাসিন্দারা যাত্রীবাহী বাস বর্জন কর্মসূচি ঘোষণা করেছিলেন।
ক্ষমা চাওয়াসহ ৩ দফা দাবিতে এখনো ওই রুটে বাস বর্জন কর্মসূচি চলছে। বাস চললেও সাড়া দিচ্ছেন না জৈন্তাপুরের মানুষ। তবে গতকাল বিকালে মানবজমিনের কাছে জেলা পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি জানিয়েছেন, ‘গত শুক্রবার বিকালে জৈন্তাপুরের বৈঠকে আমাদের একটি প্রতিনিধি দল গিয়েছিলেন। ১৭ পরগনার রেওয়াজ অনুযায়ী পান-বাঁটা দিয়ে বৈঠকে যোগ দেয়া হয়। এরপরও তারা ঘটনার নিস্পত্তি করেননি। আমরা সমাধানের পক্ষে ছিলাম। কিন্তু এখন তারা পুলিশের সামনেই বাস থেকে যাত্রী নামিয়ে দিচ্ছে।
আমাদের বাসে যাত্রী উঠছে না যে তা নয়, যাত্রী উঠছে। কিন্তু তারা জোরপূর্বক বাস থেকে যাত্রীদের নামিয়ে দিচ্ছে। এটা আমাদের জন্য মানহানিকর। এজন্য আমরা আর ১৭ পরগনার কাছে যাবো না।’ তিনি বলেন- ‘জৈন্তাপুরের সব পরগনার নয়, শুধু মাত্র দুই পরগনার মানুষ দরবস্তে ঝামেলা করছে। এর প্রতিবাদে আমরা আজ সকাল ১১টায় কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল এলাকায় প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করেছি। এতে বিভাগীয় নেতারা ছাড়াও কেন্দ্রীর নেতারা আসবেন। সমাবেশের পর বৈঠক করে আমরা পরবর্তী সিদ্বান্ত নেবো। জৈন্তাপুর সড়কে বাস থেকে জোরপূর্বক যাত্রী নামানো, মানহানির প্রতিবাদে আজকের এই প্রতিবাদ সমাবেশ।’ এদিকে- সিলেট জেলা পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জিয়াউল হক পলাশ মানবজমিনকে জানিয়েছেন, ‘সিলেট নগরের সুবহানীঘাট এলাকা থেকে জাফলংগামী বাস সব সিট ভর্তি যাত্রী নিয়ে সিলেট ছাড়ছে।
কিন্তু দরবস্তে যাওয়ার পর বাস থামিয়ে জোরপূর্বক যাত্রী নামিয়ে দেয়া হচ্ছে। আবার জাফলং থেকেও যাত্রী নিয়ে বাস সিলেটে আসার পথে ৪ নম্বর এলাকায় যাত্রীদের নামিয়ে দেয়া হচ্ছে। এটা অন্যায়। প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। এজন্য আমরা আজ প্রতিবাদ সমাবেশ ও পরে বৈঠকের আয়োজন করেছি। ওখান থেকে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’ তিনি বলেন, ‘সিদ্ধান্ত তো ফের শ্রমিকদের কর্ম বিরতি আসবে। সেটি এবার সিলেট বিভাগজুড়ে হতে পারে। আমরা বসে সিদ্ধান্ত নিয়ে পরবর্তীতে জানানো।’ তিনি জৈন্তাপুরের এ ঘটনার জন্য তিন ব্যক্তিকেই দায়ী করেন। এরা হচ্ছে- জৈন্তাপুরের বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কামাল আহমদ, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও জামায়াত নেতা জয়নাল আবেদীন ও দরবস্ত ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও যুবদল নেতা বাহারুল ইসলাম বাহারকে। জানান, ‘ওই তিন ব্যক্তি ১৭ পরগনার নামে বিষয়টির সমাধান করতে দিচ্ছে না। তারা ১৭ পরগনাকে আন্দোলনমুখী করে তুলেছেন।’
এদিকে বাস বর্জন কর্মসূচি ঘোষণার পাশাপাশি আজ রোববার বিকালে ফের জৈন্তাপুরের ১৭ পরগনার বৈঠক আহ্বান করা হয়েছে। জৈন্তাপুরের উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে বলে নেতারা জানিয়েছেন। ১৭ পরগনার নেতারা জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবারের বৈঠকে ঘটনাটির নিস্পত্তি হওয়ার পথে ছিল। কিন্তু ওই দিনই শ্রমিক ইউনিয়ন সভাপতি ময়নুল ও মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক পলাশ জেলা প্রশাসকসহ ১৫টি দপ্তরে বিচার চেয়ে আবেদন দেন।
এখন ওই স্মারকলিপি প্রত্যাহার করে, ঘোষিত ৩ দফা দাবি মেনে নিয়ে ১৭ পরগনার বৈঠকে এলে বিষয়টির মীমাংসা হবে। নতুবা বাস বর্জন কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন নেতারা। ১৭ পরগনার ঘোষিত ৩ দফার মধ্যে রয়েছে- পরগনার কাছে ময়নুল ও মালিক সমিতি প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে। ক্ষমা চাওয়ার আগ পর্যন্ত সিলেট টু তামাবিল, সিলেট টু কানাইঘাট এবং সিলেট টু গোয়াইনঘাট সড়কে শুধুমাত্র বাস চলাচল বন্ধ থাকবে। মালিক সমিতি নিজেই গাড়ি বন্ধ করেছে তাই ক্ষমা চাওয়ার পর পুনরায় বাস চালাতে চাইলে ১৭ পরগনার অনুমতি নিয়েই চালাতে হবে। বাস ব্যতীত সকল গাড়ি চলাচল করবে। যদি চলাচলে কেউ বাধা প্রদান করে তাহলে ১৭ পরগনার আপামর জনতা প্রতিহত করবে।